Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্ল্যাকবক্স কী? কীভাবে এটি বিমান দুর্ঘটনার রহস্যভেদ করে?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

১৭ মার্চের দুপুর। ২৯,১০০ ফুট উপর থেকে একেবারে আড়াআড়ি ভাবে একটি বিমান দক্ষিণ চীনের পার্বত্য অঞ্চলের গভীরে পড়ল। প্লেনে যাত্রী সংখ্যা ১৩২ জন। পার্বত্যভূমির উচ্চতা মোটামুটি ৭,৮৫০ ফুট। জানা গিয়েছে, মাত্র এক মিনিটের অল্প বেশি সময়ে এই ভয়ঙ্কর পতন, যাকে ইংরেজিতে বলে নোজডাইভ। এবং কোনও যাত্রীই বাঁচেননি এতে। যা সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার উদাহরণ নিশ্চয়। এই বিমানটি ছিল চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের। বোইং ৭৩৭-৮০০। বোইংয়ের আরও কিছু বিমান রয়েছে এই এয়ারলাইন্সটির।

দুর্ঘটনার পর বোইংয়ের বিমান কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনই চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স ঘোরতর প্রশ্নের মুখে, কাঠগড়ায় জেরবার। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, এমন একটি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, যাতে এই দু’পক্ষের কেউই দায়ী নয়, মানে, রয়েছে তৃতীয় কোনও হাত, যা এখনও অদৃশ্য। ফলে এই দুর্ঘটনা-রহস্যের থেকে পর্দা ওঠাটা জরুরি। কিন্তু কে করবে এই কাজের কাজটি। খানিকটা করতে পারে– ব্ল্যাকবক্স। চীনের বিমান মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, বিমানটির মহামূল্যবান ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জানেন কি ব্ল্যাকবক্স কী, তার কাজটাই বা কী?

ধাতব দুটি বিরাট বাক্স, যার মধ্যে থাকে রেকর্ডার। প্রায় সব বিমানেই থাকে। একটি থাকে সামনের দিকে, আর একটি থাকে পিছনে। রেকর্ডারের কাজটা হল ফ্লাইটের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে যাওয়া। যদি কোনও বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে, ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করে, ভিতরের রেকর্ড চালিয়ে শেষ সময়ের কথাবার্তা শুনে দুর্ঘটনার কারণ বোঝা যায়। তাই ব্ল্যাকবক্সকে আসলে বলে ফ্লাইট রেকর্ডার। যেটি ককপিটে থাকে, সেইটি হল– ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, যা কিনা রেডিও বার্তা এবং ককপিটের অন্যান্য শব্দ, যেমন পাইলটদের কথাবার্তা, ইঞ্জিনের আওয়াজ ইত্যাদি রেকর্ড করে। আর পিছনে যে থাকে, তাকে বলে– ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। এটি আশিরও বেশি ধরনের তথ্য রেকর্ড করে রাখতে পারে। যেমন কত উচ্চতায় রয়েছে বিমান, কী তার গতিবেগ, কোন দিকে যাচ্ছে ইত্যাদি। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ব্ল্যাকবক্স থাকা বাধ্যতামূলক। যাতে কোনও দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও সমস্যা হলে তা গোচরে আসে, এতে করে পরবর্তীতে তেমন কিছু এড়ানোর শিক্ষা পাওয়া যায়।

কমলা, কালো নয়: ব্ল্যাক বক্সের রং কিন্তু কালো নয়। উজ্জ্বল কমলা রং এর। যাতে সহজেই খুঁজে বার করা যায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে। এই ব্যাপারটা কিন্তু স্পষ্ট নয়, কী ভাবে এর নাম ব্ল্যাকবক্স হল। কিন্তু এই রেকর্ডার যেন হারানিধি। এর মাধ্যমেই বহু বিমান দুর্ঘটনার জট খুলেছে। আর নানা রোমহর্ষক কাহিনি এসেছে আলোয়। ব্ল্যাকবক্স ১৯৫০ সালের শুরু থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়। এবং তদন্তকারীদের উড়ান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের ব্যর্থতাই এই ব্ল্যাকবক্সের জন্ম দিয়েছে। এক অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী, নাম ডেভিড ওয়ারেন, ব্ল্যাকবক্সের আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়।

দুর্ঘটনা ও ব্ল্যাকবক্স: প্রথম দিকে দুর্ঘটনায় পড়া বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে মিলত অল্প কিছু তথ্য। কারণ, তখন রেকর্ডারের ক্ষমতা ছিল সীমায়িত। ক্রমে ম্যাগনেটিক টেপ ব্যবহার করা হতে লাগল এতে। যা অনেক তথ্য বন্দি করে রাখতে পারে। এখন তো ব্যাপারটা জলবৎ তরলং, কারণ এখন এসে গিয়েছে মহামান্য মেমোরি চিপ। সীমার মাঝে যেন অসীমতার আহ্বান চিপে।

রেকর্ডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত এই বস্তু দুটির এক একটির ওজন ৪.৫ কিলোগ্রাম করে। কারণ, স্টিল বা টাইটেনিয়ামে তৈরি শক্তসমর্থ খোলসের মধ্যে রাখা হয় রেকর্ডার। যার প্রবল গরম, চরম ঠান্ডা ইত্যাদি সহ্য করতে পারে, অজর অমর অক্ষয় টাইপের ব্যাপার আরকি! ব্ল্যাকবক্স অতল পানি থেকেও উদ্ধার করা যায়, কারণ তা তিরিশ দিন পর্যন্ত আল্ট্রা সাউন্ড সিগনাল দিতে পারে। আর মোটামুটি ১০-১৫ দিন সময় লাগে এ থেকে পাওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করতে। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডাটিকে বিমানের লেজের দিকে রাখা হয় কেন, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে রাখার কারণ হল, এই লেজাঞ্চলেই বিমান দুর্ঘটনার প্রভাব নাকি সবচেয়ে কম পড়ে। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ