Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রুশ যুদ্ধবন্দীদেরকে ইউক্রেনের সেনাদের ভয়াবহ নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৪ পিএম

ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ একটি ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করছে যেখানে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ান যুদ্ধবন্দীদের খুব কাছ থেকে গুলি করছে বলে দাবি করা হয়েছে। রোববার ভোর থেকেই ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াতে থাকে যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অবশ্য বলেছেন রাশিয়া 'সাজানো একটি ভিডিও' বানিয়েছে যুদ্ধবন্দীদের সাথে খারাপ আচরণ করার ঘটনা প্রচার করে ইউক্রেনকে হেয় করার জন্য। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা বলেছেন তারা দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করবেন। তিনি বলেন, "আমি সামরিক বেসামরিক নাগরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, যুদ্ধবন্দীদের অত্যাচার নির্যাতন একটি যুদ্ধাপরাধ"।

ফুটেজটিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন বন্দী সৈন্য মাটিতে পড়ে আছে। কয়েকজনের মাথায় ব্যাগ এবং অনেকের পায়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তবে এটি ঠিক পরিষ্কার নয় যে কীভাবে ও কখন তারা আহত হয়েছেন। বন্দীদের সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিলো যে তারা কোন ইউনিটের ও ওই এলাকায় কী ধরণের কাজ করছে। এক পর্যায়ে তিনজন ব্যক্তিকে একটি গাড়ীর বাইরে আনা হয় এবং একজন সৈন্য অস্ত্র বের করে তাদের পায়ে গুলি করেন। পরে আবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকে বলছিলেন যে, ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে খারকিভের দক্ষিণ পূবের মালায়া রোহান এলাকার একটি খামারে। বিবিসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে জায়গাটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। ওই এলাকাটি সম্প্রতি রাশিয়ানদের কাছ থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা পুনর্দখল করেছে। উপগ্রহ থেকে পাওয়া ইমেজ এবং খামারের ছবি বিশ্লেষণ করে ভিডিওর জায়গাটি চিহ্নিত করা যায়। ওই তিন সৈন্যকে গুলি করার আগে তাদের একজনের পেছনে থাকা একটি ঘর দেখা যায়।

সেখানে একটি গাছ, চিমনি ও একটি জানালার উপরের অংশের সাথে ২০১৭ সালের এটি ছবির সাথে মিলে যায় যা ওই খামারটির ওয়েব পেজেও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে ঘরটির একাংশ একটি সাদা রংয়ের কাঠামোতে ঢাকা পড়ে আছে। ভিডিওর আরেকটি অংশে যেখানে সৈন্যরা মাটিতে পড়ে আছে সেখানেও কিছু সূত্র আছে। একটি সাদা অবকাঠামো, চিমনি, গাছ ও কালো একটি দেয়াল - যা খামারটির উন্মুক্ত অংশে দৃশ্যমান। বিবিসি ওই খামারটির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে।

ভিডিওতে কোন তারিখ ও সময় দেয়া নেই। এছাড়া আর কোন তথ্যও নেই যার ওপর ভিত্তি করে ভিডিও ধারণের সময় বলা সম্ভব। কিন্তু ভিডিওতে আকাশ ছিলো পরিষ্কার ও মাটি ছিলো শুষ্ক। খারকিভের আবহাওয়া রিপোর্ট বলছে ভিডিওটি ২৬ মার্চ ধারণ করার সম্ভাবনা আছে। শুক্র ও শনিবার আবহাওয়া ছিলো শুষ্ক। রৌদ্রজ্জ্বল কিন্তু ঠাণ্ডা। তবে শনি ও রবিবারের মধ্যবর্তী রাতে ওই এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে সূর্যের যে অবস্থান দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ভিডিওটি দিনের প্রথমভাগে ধারণ করা।

বন্দীদের রুশ ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিবিসি মনিটরিংয়ের ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চারণ শুনে মনে হচ্ছে তারা রুশভাষী ইউক্রেনীয়ান। আরেকজন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে তাদের উচ্চারণের ধরণ অনেক পূর্ব ইউক্রেনের অধিবাসীদের মতো। ভিডিওর এক পর্যায়ে একজন আটক সৈন্যকে খারকিভে গোলাবর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আরেকজনকে তার জাতীয়তা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন তিনি আজেরি (তবে রাশিয়ার নৃ গোষ্ঠী নয়)।

আরেকজন বলছিলেন তিনি বিস্কভিতনেতে কাজ করছিলেন। এলাকাটি মালায়া রোহানের কাছের একটি গ্রাম। জিম্মিকারী সৈন্যদের কথা বলার ধরণ ছিলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের মতো। তারা ব্লু আর্মব্যান্ড সম্বলিত ইউনিফর্ম পড়েছিলেন যা ইউক্রেনের সেনারা পরিধান করে। ছাব্বিশ ও সাতাশে মার্চ ডানপন্থী একটি গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত ক্রাকেন ইউনিটের তৎপরতা নিয়েও কিছু ছবি অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছিলো।

বিবিসি ওই ফুটেজের ভিডিও পরীক্ষা করে দেখেছে গ্রামটির নাম ভিলখিবকা যা মালয় রোহান থেকে সাড়ে তিন মাইল দুরে। সেদিন সেখানে শুষ্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া ছিলো। ডানপন্থী ওই গোষ্ঠী জানিয়েছে ত্রিশজন রাশিয়ানকে যুদ্ধবন্দী করা হয়েছে ২৫ মার্চ এবং ক্রাকেন ভিডিওতে তাদের চোখ বাঁধা ছিলো। তাদের একটি ভ্যানে তোলা হয় এবং ইউক্রেনের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করা হয়। তবে তাদেরে কেন্দ্র করে কোন গুলি বা সহিংসতা হয়নি।

খামারে গুলির ঘটনায় একজন সৈন্য ছদ্মবেশী অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করছিলেন। সামরিক বিশ্লেষক নিক রেনল্ডস ফুটেজটি পরীক্ষা করেছেন। তার মতে ইউক্রেনের সৈন্যরা যেভাবে তাদের অ্যাসল্ট রাইফেল ছদ্মবেশের আড়ালে রাখেন এটা তার মতোই। তিনি অবশ্য বলেছেন দুপক্ষই যুদ্ধ ক্ষেত্রে একে অন্যের অস্ত্র দখল বলে ব্যবহার করছে। সেজন্য অস্ত্র দেখে কিছু বলা সহজ নয়।

ভিডিওর সবচেয়ে অস্বস্তিকর অংশ হলো তিনজন ব্যক্তির পায়ে একেবারে কাছে থেকে গুলি করার দৃশ্য। তবে ফুটেজটি সত্যি নাকি বানানো তা নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকে বলছেন এখন যথেষ্ট রক্ত নেই বা আহতদের সেরকম চিৎকার নেই যা দেখে সত্যি মনে করা যায়। কয়েকজন ট্রমা সার্জন ও সাবেক সামরিক চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। একজন বলেছেন তিনি গুলিবিদ্ধ এমন আহতদের চিকিৎসা করেছেন যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেননি। এবং রক্ত না দেখার কারণও থাকতে পারে যা ভিডিওতেও বিদ্যমান আছে।

তিনি বলেন, "আমার মত হলো ফুটেজটিকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করা যাবে না। এটি যুদ্ধাপরাধের তদন্তের দাবী রাখে"। আরেকজন চিকিৎসক বলেন, "এটিকে আসল মনে হচ্ছে"। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলছেন একেবারে কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। রেনল্ডস বলছেন যে একে-৪৭ এর গুলি খুব ছোট তবে মনে রাখতে হবে যে ভিডিও কোয়ালিটি খুব একটা ভালো নয়। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ