Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অটিজম শিশুর মায়েদের জন্য কম খরচে স্কুল-ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থসেবা: আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:১২ পিএম

স্বল্প খরচে স্কুল-ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মায়েদের বিষন্নতার অবস্থা পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এই গবেষণাটি গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা ও সেবা দানে বৈষম্য রয়েছে। বাংলাদেশে যে শিশুদের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) রয়েছে সেইসব মায়েদের প্রতি দুই জনের মধ্যে একজন বিষণ্ণতায় ভোগেন। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা মাথায় রেখে ২০১৭ সালে একটি গবেষণার অংশ হিসাবে ঢাকা শহরের অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (AWF) এবং সোসাইটি ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অফ অটিস্টিক চিলড্রেন (SWAC) বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং সার্ভিস (পিসিএস) নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছিল। ফিজিবিলিটি অফ ইমপ্লেমেন্টিং এ মেন্টাল হেল্থ কেয়ার প্রোগ্রাম অ্যান্ড হোম-বেসড ট্রেইনিং ফর মাদারস অফ চিলড্রেন উইথ অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ইন এন আরবান পপুলেশন ইন বাংলাদেশ (মেনথল) শিরোনামের এই গবেষণায় ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০১৮-র ডিসেম্বর পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবার একটি পদ্ধতি পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, নিউরোডেভেলপমেন্টাল বিশেষজ্ঞ, এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিটি প্রণয়নে সহায়তা করেছেন।

বিশেষভাবে ডিজাইন করা এই সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং সার্ভিস বিদ্যালয়দুটিতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ছয় মাসের জন্য চালু করা হয়েছিল। যা সেই সময়ে ঐ বিদ্যালয়দুটিতে অধ্যায়নরত সব শিশুর মায়েদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার পর বেশীর ভাগ মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। বিষন্নতা পরিমাপের স্কেল অনুযায়ী যেসব মায়েদের পূর্বে বিষণ্ণতা ছিল তাদের ৪০ শতাংশ, এবং যেসব মায়েদের বিষণ্ণতা ছিল না তাদের ২৩ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এই সেবাটি নিতে একজন মাকে মাত্র ৮০ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। আনুমানিক চারটি সেশন নেওয়ার পরে প্রায় অর্ধেক মায়েদের মানসিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মানে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।

সুচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্যানেলের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং এই গবেষণাপত্রের একজন লেখক সায়মা ওয়াজেদ বলেন “অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মা শুধুমাত্র শিশুকে লালন-পালনের চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করে না বরং প্রতিনিয়ত সামাজিক বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অন্যান্য প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা এখনো একটি অবহেলিত বিষয়। মেনথল গবেষণাটি আমাদেরকে গুরুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে যার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে প্রদান করা যেতে পারে, এবং কিভাবে একটি বিশেষায়িত সেবায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে সেবাটিকে কার্যকর করা যায়।"

প্রফেসর কেরিম এম মুনির, বোস্টন চিলড্রেনস হসপিটাল, হার্ভাড মেডিকেল স্কুল এবং মেনথল গবেষনার জ্যেষ্ঠ গবেষক বলেন, "বিশ্বব্যাপী অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মায়েদের বিষণ্ণতার হার বেশি এবং এই বিষণ্ণতা জীবন যাপনের মান অনেকাংশে কমিয়ে দেয় যা শিশুর যত্ন নেয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মেনথল সার্ভিস মডেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এটি অটিজম এবং মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মতো দু'টি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়কে একই সাথে সেবা দিতে পারছে। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি খুব অল্প খরচে এবং খুব অল্প সময়ের ভেতরে এই পদ্ধতি সুফল দিয়েছে, যা সত্যিই অসাধারণ।"

হার্ভাড মেডিকেল স্কুল গ্লোবাল হেলথ ডেলিভারি-দুবাই এর ডিরেক্টর প্রফেসর সালমান এ কেশাভজি বলেছেন, “অটিজমের শিশুদের মায়েদের বিষণ্ণতাকে প্রশমন করা বিশ্বজুড়েই একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। এই গবেষণাটি দেখিয়েছে যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠিকেও কিভাবে উচ্চ মানের সেবা প্রদান করা যায় যেটা তাদের ভীষন প্রয়োজন। এই সফল ইন্টারভেনশনটি কমিউনিটি ভিত্তিক সেবার মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ব্যাপক মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার একটি রোডম্যাপ।"

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন “আমি আনন্দিত যে আমরা একটি সাশ্রয়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মডেল খুঁজে পেয়েছি, যা বাংলাদেশ এবং অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে বড় পরিসরে সহজে প্রয়োগ করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে৷ বাংলাদেশের যেখানেই অটিজম সেবার সুযোগ রয়েছে সেখানেই দ্রুততম সময়ে মেনথল সার্ভিস মডেলটি যুক্ত করার জন্য আমি সুপারিশ করতে চাই। অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে তাদের অটিজম সেবার সাথে মেনথল সার্ভিস মডেলকে যুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করার কাজটি এখনই শুরু করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমি তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করবো স্বাস্থ্য গবেষণায় আরও বরাদ্দ রাখার জন্য যেন আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় মেনথল সার্ভিস মডেলটি যুক্ত করে নিতে পারি এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগনের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহজে পৌছে দিতে পারি।

আইসিডিডিআর,বি-র সায়েন্টিস্ট ও ইনিশিয়েটিভ ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস-এর হেড ড. আলিয়া নাহিদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন চিলড্রেন্স অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল (এইচএমএস), ইউএসএ, সুচনা ফাউন্ডেশন, ইন্সটিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসরডার এন্ড অটিজম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল এর সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ