বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এক আদর্শ মুসলিমের সদাচার শুধু তার মা-বাবা ও স্ত্রী-পুত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং নিকট ও দূর সকল আত্মীয় পর্যন্ত তার সদাচার পৌঁছে যায়। মা-বাবার পরই সে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করে। আত্মীয়দের বিষয়ে সে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে। যদি আত্মীয়দের কেউ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তারপরও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। কেবল তাদের সদাচার পাওয়ার আশায় তাদের সাথে সদাচার করে না। সে জানে, আত্মীয়দের সাথে খারাপ আচরণের ফলাফল দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়, আখেরাতে তো ভোগান্তি আছেই। আত্মীয়-স্বজন যদি অমুসলিমও হয় তারপরও তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।
আত্মীয়দের সাথে সদাচারের অর্থ শুধু এই নয় যে, তাদের বিপদে তাদের জন্যে খরচ করলাম। বরং আত্মীয় হিসাবে সদাচার বিভিন্ন রকম হবে। কারো বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া হবে তার সাথে সদাচার। কারো জন্যে সদাচার হবে একটু ভালো কথা বলা, কারো জন্যে সদাচার হবে ইনসাফ করা, কারো জন্যে সদাচার হবে তাদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানো। মোদ্দাকথা, সময় ও পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ে সে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।
একজন আদর্শ মুসলিম তার পাড়া-প্রতিবেশীর হক সম্পর্কেও সচেতন থাকে। তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে। তাদের কাছ থেকে কষ্ট পেলে সবর করে। তাদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্যে তাদের থেকে ভালো আচরণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। ভালো আচরণের জন্যে তাদের থেকে কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাও প্রত্যাশা করে না। প্রতিবেশী মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম, সবার সাথে সে সুন্দর আচরণ করে। হাদিয়া আদান-প্রদান করে। কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যায়। কেউ ইন্তিকাল করলে তার জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হয়। তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত¦না দেয়। তাদের সুখে সুখী হয়, তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়।
ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো ‘না’ করে না। প্রতিবেশীর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। ঘরে উঁচু আওয়াজ করে না; পাছে প্রতিবেশীর কষ্ট হয়। যখন ভালো খাবার রান্না করে, তখন প্রতিবেশীকেও শরীক করে।
তার রান্নাঘরের ধোঁয়া, তার বাড়ির ময়লার ভাগাড় প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয় না। মাঝেমধ্যে সে প্রতিবেশীর জন্য উপঢৌকন পাঠায়। উপহার ছোট কি বড় তাতে সে ভ্রুক্ষেপ করে না। যে প্রতিবেশীর ঘর সবচেয়ে নিকটে প্রথমে তাকে প্রাধান্য দেয়। এভাবে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। মোটকথা, একজন আদর্শ মুসলিম হয় তার প্রতিবেশীর জন্য সর্বোত্তম প্রতিবেশী।
ভাই ও বন্ধুদের সাথে একজন আদর্শ মুসলিমের সম্পর্ক থাকে স্বচ্ছ। তাদের ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব হয় শুধু আল্লাহর জন্য। বন্ধুর সাথে সে কখনো রূঢ় আচরণ করে না। তাদের সাথে কথা কাটাকাটি করে না। বন্ধুর সাথে এমন কোনো কৌতুক করে না, যা কষ্টদায়ক।
তার কথা ও কাজ হয় এক। সে কখনো দ্বিমুখী আচরণ করে না। কারো গীবত করে না। কারো সাথে ওয়াদাখেলাফি করে না। আমানতের খেয়ানত করে না। কারো অকল্যাণ কামনা করে না। বন্ধুকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়। তার জন্য দুআ করে। তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে। মনের ভেতর কিছু পুষে রাখে না। কখনো রাগারাগি হলে কথা বন্ধ করে না। সে-ই আগে বেড়ে বন্ধুর সাথে আপোষ করে নেয়। বন্ধুর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।
বন্ধু যদি কারো উপর যুলুম করে তাহলে তাকে যুলুম থেকে নিবৃত্ত করে। যদি বন্ধু কারো দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তার পাশে দাঁড়ায়। সৎকাজে তাকে সহযোগিতা করে। সম্ভব না হলে মুখে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিয়ে শরীক থাকার চেষ্টা করে। বন্ধুকে কোনো কর্তব্য কাজে অবহেলা করতে দেখলে সুন্দর ভাষায় তাকে সতর্ক করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।