Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণে আমরা শাণিত হই’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৩৭ পিএম

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নির্বিচারে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর বিশে^র ইতিহাসে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড আর ঘটেনি। তাই এটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জোর দাবি জানান দেশের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, এই দিনে গণহত্যার শিকার বীর শহীদদের স্মরণ করে আমরা আমাদের চেতনাকে শাণিত করতে পারি। শুক্রবার (২৫মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস-২০২২’ পালন অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। ২৫ মার্চ কালরাতে শহীদ স্মরণে বিকাল থেকেই ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আল্পনা আঁকা হয়। রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত ব্লাক আউট কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় ৫১টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের চেতনাকে শাণিত করতে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে শহীদদের স্মরণ করছি, শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকেও দেশ সৃষ্টির ইতিহাস জানতে হবে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধুর লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতীক্ষার ইতিহাসটিও নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন তারা এগিয়ে যায়।’ শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা এই দেশটিকে গত ৫০ বছরে একরকমভাবে পাইনি। ৭৫’ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে এই দেশ থেকে স্বাধীনতার চেতনাকে একেবারে বিদায় করার অপচেষ্টা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৭ই মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা বহুকাল উদ্ভট উটের পেছনে চলেছি। এই দেশটাকে আবার পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মানুষ আত্মত্যাগ, সংগ্রাম, জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হয়েছে। আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি চাইছি। বাংলাদেশে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তা যেন পৃথিবী স্বীকার করে। এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে পৃথিবীব্যাপী যেন এই চেতনা শাণিত হয়- পৃথিবীতে আর কখনো যেন এই রকমের জঘন্য গণহত্যা না হয়।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘শোষণে শুষ্ক এই পূর্ব বাংলায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারালেন। ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হলো। এরপরও তাদের তৃষ্ণা মেটেনি। তারা জাতির পিতাকে হত্যা করলো। রক্তাক্ত করলো বাংলাকে। অপরাধ ছিল- বঙ্গবন্ধু নজরুলকে ধারণ করেছিলেন। নজরুল বলেছিলেন- বাংলা বাঙালির হউক। অপরাধ ছিল রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত- তাদের ধারণ করেই তো বাংলা প্রতিষ্ঠা করলেন। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শোষণে শুষ্ক পূর্ব বাংলা মুক্তির মহানায়কের রক্তে রঞ্জিত হলো। আমরা রক্তঋণে আবারো আবদ্ধ হলাম। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের আগামী প্রজন্মকে নির্মাণ করতে হবে। তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর চিন্তার চেতনায়, সংবিধানের ৪ মূলনীতির চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলে। সেটির জন্যই জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের এই সব আয়োজন। এই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে আমাদের আগামীর সন্তানরা মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে শিখবে, ধারণ করবে মুক্তিযোদ্ধাদের।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তার নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমান্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অপারেশন সার্চ লাইটের নামে এক নির্মম গণহত্যায় ঝাপিয়ে পড়ে। এক রাতেই ঢাকা শহরে কয়েকহাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। তাদের এই জেনোসাইড স্বাধীনতার ৯ মাস ধরে চলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এ কারণে ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস লড়াই-সংগ্রাম শেষে স্বাধীনতা অর্জিত হলো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জানতো না যে, ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করা যায় না।’

শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরমা দত্ত, রুবিনা মিরা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ