Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেজে উঠবে বিউগলের করুণ সুর

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে আজ

প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
আজ নভেম্বরের দ্বিতীয় শুক্রবার। কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের কাছে একটি স্মরণীয় দিন। আজকের এ দিনটির সোনালী সকালে ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে প্রার্থনা, ফুলেল শ্রদ্ধা আর বিউগলের করুণ সুর উঠবে। দিনটি পালনের লক্ষ্যে ওয়্যারসিমেট্রি এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কুমিল্লা-সিলেট সড়কের কুমিল্লার ময়নামতি এলাকায় সুনসান নিরবতা ঘিরে মনোরম পরিবেশে সাড়ে চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি বা রণসমাধিক্ষেত্র। বিশ্বব্যাপি যুদ্ধের সময় এই রণাঙ্গনে জীবন উৎসর্গকৃত ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিকের মধ্যে যাদের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তাদেরই স্মৃতি সংরক্ষিত হয়েছে বাংলাদেশ, বার্মা ও আসামের নয়টি ওয়ারসিমেট্রিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বার্মা প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত সৈনিকদের মধ্যে যুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জনকে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়। ১৯৬২ সালে একজনের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি ওই নিহত সৈনিকের স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেলে এখানে সমাধির সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩৭টিতে। কুমিল্লার ময়নামতি ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে আরেকটি ওয়ারসিমেট্রি রয়েছে। বাংলাদেশের এ দুইটি ওয়ারসিমেট্রি তদারকি করেন কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন নামে একটি সংস্থা। যার প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। কুমিল্লা ময়নামতির ওয়ারসিমেট্রিতে ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ব্রিটেনের ৩৫০ জন, কানাডার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, ভারতের ১৭২ জন, বার্মার ১ জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, পোল্যান্ডের ১ জন, জাপানের ২৪ জন এবং বেসামরিক ১ জনকে সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত সৈনিকদের মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪ জন, হিন্দু ধর্মের ২ জন এবং বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রির প্রথম ধাপে ইউরোপিয়ানদের এবং উপরের দ্বিতীয় ধাপে এশিয়া উপমহাদেশের যোদ্ধাদের সমাধি রয়েছে। সমাধিগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো। প্রতিটি সমাধির গায়ে নিহত যোদ্ধার নাম, বয়স, পদবী এবং যুদ্ধে শহীদ হওয়ার তারিখ এবং ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। নানা প্রকারের ফুল গাছ বিভিন্ন প্রজাতের গাছ সুবিন্যস্তভাবে সাজানো রয়েছে পুরো সমাধিক্ষেত্র জুড়ে। সমাধিক্ষেত্রের পশ্চিমে রয়েছে শ্বেতপাথরের হলিক্রস। প্রতি বছর নভেম্বরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় শুক্রবারে ওয়্যারসিমেট্রির হলিক্রসের পাদদেশে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনার, প্রতিনিধিরা নিহত সৈনিকদের আত্মার প্রার্থনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে সমবেত হয়ে থাকেন। ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রির শ্রদ্ধাঞ্জলির অনুষ্ঠানটিতে হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত থাকেন। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রিতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হবে দিনটি। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নিহত সৈনিকদের স্মরনে বিউগলের করুণ সুরে নিবর নিস্তব্দ হয়ে উঠবে ময়নামতি ওয়ারসিমেট্রি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেজে উঠবে বিউগলের করুণ সুর
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ