Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দাবানলের গ্রাসে চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্র!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২২, ৫:৩৯ পিএম

পরমাণু কেন্দ্রের বাইরে বিশাল এক্সক্লুসন জোনের লাগোয়া এলাকায় দাউদাউ করে জ্বলছে গাছপালা, বনবাদাড়। দাবানলের শিখা আকাশে এত উঁচুতে উঠেছে যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছে। যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র উপগ্রহের চোখে ধরা পড়েছে। চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাগোয়া এলাকায় এমন ভয়াবহ সাতটি দাবানলের ছবি তুলে পাঠিয়েছে ইউরোপীয় উপগ্রহ।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের এক বিবৃতিতে এই খবর দেওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতিতে এও দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকার পুরোপুরি দখল নেওয়ায় দাবানল রোধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির বিপদ উত্তরোত্তর বাড়ছে।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই দাবানগুলির সূত্রপাত হয়েছে সম্ভবত রুশ সেনাদের জন্যই। তবে রুশ সেনাদের ছোড়া গুলিগোলা, মর্টার, ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা আছড়ে পড়ার জন্যই ওই সব দাবানল নাকি অন্য কোনও কারণে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পরমাণু কেন্দ্রের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ভয়াবহ একের পর এক দাবানল খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে গোটা এলাকার পক্ষে।’’ দাবি করা হয়েছে, পরমাণু কেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকা পুরোপুরি রুশ সেনাদের দখলে চলে যাওয়ায় সেই দাবানলগুলি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা ইউক্রেন সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করে ফেলে রুশ সেনারা। লাগোয়া প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকারও দখল রুশ সেনারা নিয়ে নেয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।

১৯৮৬ সালে এক বিধ্বংসী বিস্ফোরণ হয় চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রে। তাতে কেন্দ্রের দুটি পরমাণু চুল্লি উড়ে গিয়ে অত্যন্ত ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে প্রায় গোটা ইউরোপেই। তার পরেই পরমাণু কেন্দ্রে যাবতীয় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কিন্তু সেই এলাকায় তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য এখনও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যার জন্য কেন্দ্র লাগোয়া ১০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা থেকে পরে সব বসতি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা আরও ২৬ হাজার বছর থাকতে পারে বলে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরমাণু চুল্লিগুলির নীচে এখনও প্রায় ২০০ টন পরমাণু জ্বালানি রয়েছে। যা কোনও প্রকোষ্ঠের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা নেই। তা ছাড়া রয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও। রুশ গুলিগোলা বা দাবানলে সে সব থেকে ফের ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে। আরও দূরে ছড়িয়ে পড়তে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু শক্তি সংস্থা ‘এনার্গোঅ্যাটম’-এর তরফে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘পরমাণু কেন্দ্র ও তার লাগোয়া এলাকায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা এখন কতটা রুশ আগ্রাসনের পর সেটা মাপাও সম্ভব হয়নি। সেই মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে গেলে তা ইউক্রেন তো বটেই, ইউরোপের কয়েকটি দেশের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’’

’৮৬ সালের বিস্ফোরণেই চেরনোবিলের আশপাশের বনগুলিতে ভয়াবহ দাবানল হয়েছিল। তাতে বহু গাছ পুড়ে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে শুকনো কাঠ জমা করেছে চেরনোবিলের লাগোয়া এলাকায়। ২০২০ সালে তারই সুবাদে দাবানল হয়েছিল চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্র লাগোয়া এলাকায়। তাতে লাগোয়া এলাকায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা ঘটেছিল উষ্ণায়নের জন্য।

২০১৫ সালে একটি আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষণার হুঁশিয়ারি ছিল, উষ্ণায়নের জন্য চেরনোবিলের লাগোয়া এলাকায় দাবানলের সংখ্যা ও তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। তার থেকে ফের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ইউক্রেন-সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: নিউজউইক।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ