পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বিতীয় সংলাপে মতামত নেয়ার জন্য সুশীল সমাজের ৪০ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। কিন্তু উপস্থিত হয়েছিলেন ১৯ জন। ২১ জন ইসির সংঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখাননি। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেন নির্বাচন কমিশন। সংলাপে মতামত দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত অতিথিরা বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ইসির পদত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। আর ইভিএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি থাকলে নির্বাচনে ইভিএম বাদ দিয়ে সাধারণ ভাবে ভোট গ্রহণ করতে হবে। ইসির যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, গত ১৫ মার্চ আমন্ত্রণ জানিয়ে সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে আস্থা ফেরাতে ও মানুষকে নির্বাচনমুখি করতে বিশিষ্টজনদের ভূমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্র সুসংহত করতে সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য।
সংলাপে অংশ নিয়ে অতিথিদের কেউ কেউ বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সংলাপে বিশিষ্টজনেরা জাতীয় নির্বাচনে সবার ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, ভোটারদের বাধাহীনভাবে ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করা, ভোটের আগে-পরে ভোটারদের বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবিধান ও আইনে ইসিকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা তারা কতখানি প্রয়োগ করতে পারবে, সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপর। নির্বাচনকালীন সরকার এমন হতে হবে, যাদের ভোটের ফলাফল নিয়ে কোনো আগ্রহ থাকবে না। কেউ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কমিশন যদি মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আইন ও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন, তাহলে তারা সরকারকে প্রস্তাব দেবে। আর যদি মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের মানসিকতা রাখতে হবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম না চাইলে সেটা বাদ দেয়াই উচিত। আর ইসির যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তাহলে তাদের পদত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, জামায়াতের বিষয়টা ফেলে রাখা ঠিক হবে না। দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পথে কোন বাধা থাকা উচিৎ নয়। উনি নির্বাচন করতে পারবেন। কেননা উনার মামলার ফয়সালা এখনো হয়নি। আমিও ইভিএম বুঝি না। বিনা টেন্ডারে এত ইভিএম কেনা হয়েছিল, একটা সামরিক বাহিনীর সামরিক সচিবের অতি উৎসাহের কারণটা কী? এ সম্পর্কে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করা প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৩ মার্চ ৩০ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিল ইসি। যদিও ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ওইদিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৩ জন। আমন্ত্রিত দুই তৃতীয়াংশ অতিথি আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।
এদিকে আগামী ৩০ মার্চ গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। এরপর নারী নেত্রী ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার অংশ হিসেবে এসব বৈঠকের আয়োজন করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম সংলাপে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পেয়েছে ইসি। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ভোটার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ইভিএম ব্যবহার, দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনের সময় আইনশৃংখলা বাহিনীগুলোকে ইসির অধীন রাখা ইত্যাদি।
সংলাপে যারা উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান (সিইউএস) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, নিজেরা করি’র কো-অর্ডিনেটর খুশি কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বেগম শাহীন আনাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ড. জহুরুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
এছাড়া বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর, ইসি সচিসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘শতভাগ সফলতা কখনও সম্ভব না’ জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের আলাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কেউ বলেছেন এটা যদি ৫০ শতাংশ বা ৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এটাও একটা বড় সফলতা। সত্য কথা আমাদের সাহস থাকতে হবে। সাহসের পেছনে থাকতে হবে সততা। আমাদের হারানোর কিছু নেই। পাওয়ার কিছুও নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে আমরা ইতিবাচক যদি কিছু করতে পারি, আপনাদের সাজেশনের আলোকে নির্বাচনটা যদি অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সবার অংশগ্রহণে, সেটা একটা সফলতা হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বিগত নির্বাচনে বেশ কিছু কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, কেউ বলছেন ভোট দিচ্ছেন না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর বিপক্ষে অনেকেই বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটার মধ্যে কোনও অসুবিধা আছে কিনা, এটা ব্যবহারে অনেকেই অভ্যস্ত নয়। মেশিনের মাধ্যমে কোনও ডিজিটাল কারচুপি হয় কিনা, পৃথিবীর অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করে দিয়েছে, কেন করলো সেটা গবেষণা করা উচিত। যদি কোনও কারচুপি হয়ে থাকে, তাহলে রিকাউন্টিং করা যাবে কিনা, এটার কোনও ব্যবস্থা আছে কিনা, এটা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটির মিটিং করে একটা ধারণা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধানের অভাব নেই। কিন্তু এনফোর্সমেন্টের ঘাটতি আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, এটা একটা কষ্টসাধ্য কাজ। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা চেষ্টা করবো। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।