রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মো. আমিনুল হক, মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে নার্সারি করে ওমর শরীফ ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। পেয়েছেন সুখের ঠিকানা। গড়ে তোলেছেন ৩২ বিঘা জমির ওপর বিশাল নার্সারি। প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন সংগ্রহ করে ৩’শ প্রজাতিসমৃদ্ধ বিশাল ভা-ার গড়ে তুলেছেন। থেমে নেই জাত সংগ্রহ। বেড়ে চলেছে প্রজাতি। যে গাছ বা প্রজাতির নাম শুনেন সে দিকেই ছুটেন তিনি। সংগ্রহ করে আনেন প্রজাতি। এভাবে ওমর শরীফের সামনের দিকে এগিয়ে চলা। মধুপুর শহর থেকে ৫ কি.মি. দূরে অরণখোলা ইউনিয়নের কাকরাইদ গ্রামে গিয়ে কথা হয় নার্সারির মালিক ওমর শরীফের সাথে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, নার্সারির সাফল্যের কাহিনী। তিনি জানান, এক সময় ওমর শরীফ হতদরিদ্র ছিল। পুঁজি ছিল না। ছিল না অর্থবিত্ত। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। সংসার ছিল অভাব-অনটনে জর্জরিত। ছিল না কোনো কর্মসংস্থান। ছিল শুধু মেধা আর বুদ্ধি। মাথা খাটিয়েও অভাবের সংসারে কোনো লাভ হয় না। সংসার চালানো নিয়ে পড়ে যান বেড়াজালে। অভাব আর অভাব। অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। কী করবেন? ভাবতে ভাবতে দিন কাটে। ১৯৮৮ সালের কথা। এমন সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা স্থানীয় জলছত্র, কাকরাইদসহ বিভিন্ন এলাকার ৪৬ জনকে নার্সারির ওপর প্রশিক্ষণ দিবে শুনে সে এগিয়ে যায়। বনায়ন বা নার্সারির ওপর প্রশিক্ষণ করেন। শিখেন কীভাবে নার্সারি করে চারা উৎপাদন করা যায়। ৩ দিন প্রশিক্ষণ করে ১৭০ টাকা ভাতা পান। ১৭০ টাকা দিয়ে শুরু করেন নার্সারি। দ্বিতীয়ত, প্রশিকা থেকে তাকে ৫০ হাজার লোন দেন। বাড়ির চারপাশে করেন নার্সারি। সে বছর রাস্তার দু’পাশে প্রশিকা গাছ লাগানোর জন্য শরীফের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার চারা ক্রয় করে। অবশিষ্ট চারা অন্যত্র আরো ৭০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করে এতে ৫০ হাজার টাকা আসল তোলেন। লাভ আসে ৯০ হাজার টাকা। পরের বছর ২৫ মাইল নামক স্থানে আরো জমি বাড়িয়ে বড় করে গড়ে তোলেন নার্সারি। এ সময় কোলজুড়ে কন্যাসন্তান। কন্যাসন্তানের নাম দেন সুমি। পরে ওমর শরীফ মেয়ের নামে সুমি নার্সারি নাম দেন। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ান জমি। বাড়ে নার্সারি। বাড়ে চারা। এগিয়ে যায় ওমর শরীফের সুমি নার্সারি। ১০ বছরের ব্যবধানে ফুল, ফল, শোভাবর্ধন চারা উৎপাদন শুরু করেন। হাটে-বাজারে নিয়ে যান চারা। বাড়ে পরিচিতি। আসে টাকা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সুমি নার্সারির নাম। বিভিন্ন কৃষিমেলায় স্টল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করে ও দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য গাছের চারা উৎপাদনের জন্য প্রশাসন থেকে পুরো জেলায় সুনাম খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ২৮ বছরের ব্যবধানে ২৫ মাইল জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কাকারাইদ-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রাবার অফিস সংলগ্ন নিজে জমি সাফকওলা করে নার্সারিকে ঢেলে সাজান। এখন তার নার্সারির অঢেল জায়গা। যে কোনো জাতের চারা উৎপাদন করতে কোনো সমস্যা হয় না। এখন সব মিলিয়ে ৩২ বিঘা জমির ওপর বিশাল নার্সারি। তার নার্সারিতে ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করেন। তিনি জানান, নার্সারি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন এজন্য তিনি ব্যাংক থেকে কয়েক বছর যাবত ১০ লাখ টাকার লোন করে থাকেন। মৌসুম শেষে টাকা পরিশোধ করেন এবং আবার কাজের সময় লোন করেন। কোনো সমস্যা হয় না। এখন আর ওমর শরীফের পেছনে তাকাতে হয় না। তিনি মধুপুর শহরের জমি কিনে গড়ে তোলেন পাকাবাড়ি। জলছত্রে জমি কিনে বাসা করে ভাড়া দিয়েছেন। তিনি এখন লাখ লাখ টাকার কাজ করেন। এলাকা থেকে শুরু করে কয়েক জেলার মানুষ সুমি নার্সারির ওমর শরীফকে চেনেন। এখন এলাকার মানুষ তাকে সম্মানের চোখে দেখেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, নার্সারি উন্নয়ন সংস্থা মধুপুরের দীর্ঘদিন যাবত সভাপতি। ট্রাক ড্রাইভার্স, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, এতিমখানা, বাজার সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। তার সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। পরিবার গঠনের ক্ষেত্রেও ওমর শরীফ বুদ্ধিমান। তার সুখি পরিবার। মেয়েকে এমএ পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে অনার্সে পড়ে। ওমর শরীফ আরো জানান, তিনি পরিবেশের জন্য কাজ করতে চান। দেশি প্রজাতির চারা লাগানোর পরামর্শ তার। দেশি প্রজাতির ফলের গাছ লাগালে একদিকে পুষ্টি পাবে জনগণ অন্যদিকে অর্থ ও কাঠ দুই আসবে। তিনি সুন্দর ফুল-ফল দিয়ে দেশকে ভরে দিতে চান। সকালে বিকালে অবসরে নার্সারি ঘুরে বেড়ালে তার খুব ভালো লাগে। অবসর সময়ে তিনি নার্সারিতে বসে সময় কাটান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।