Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রমজান টার্গেটে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রেকর্ড ভোগ্যপণ্য আমদানি

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২২, ১২:১৪ এএম

এবার রমজানে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের রেকর্ড আমদানি হয়েছে। ছোলা, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেলসহ পণ্যবাহী আরো কয়েকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে, কয়েকটি বন্দরের পথে রয়েছে। কিছু কিছু পণ্য গতবছরের চেয়ে দ্বিগুণ আমদানি হয়েছে। এদিকে চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানির পরও নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট নেই। মনিটরিং জোরদার হলে দামও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

রমজানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ এবং মসুর ডালের। এছাড়া মটর ডাল, খেজুরসহ আরও কয়েকটি পণ্যেরও চাহিদা থাকে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও আমদানিকারকদের তথ্যানুযায়ী, রমজানে দেশে ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গেল জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারি মাসে এর চেয়ে অন্তত ৫০ হাজার মেট্রিক টন বেশি আমদানি হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়েও মিয়ানমার থেকে ছোলা এসেছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছোলা আমদানি হয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার ৩৬৪ টন। গত দুই মাসে এক লাখ ৩০ হাজার ৮৮৭ টন ছোলা এসেছে এই বন্দর দিয়ে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসেছে আরও ২৮ হাজার টন। ২০২১ সালের একই সময়ে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ১১৮ টন।

চিনিও আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে দেশে প্রায় তিন লাখ টন চিনির চাহিদা তৈরী হয়। আর বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন যার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে জোগান দিতে হয়। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চার লাখ ৮৮ হাজার ২২১ টন চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনিবাহী দুটি জাহাজ বন্দরের এসে পৌঁছে। সেগুলো থেকে খালাস চলছে। ২০২১ সালে একই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ২৮ হাজার ১০৫ টন। ভোজ্যতেলের আমদানিও হয়েছে বেশি। রমজানে দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে সয়াবিন ও পাম অয়েল মিলিয়ে ভোজ্যতেলের মোট বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র দুই লাখ টন। বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে জোগান দিতে হয়। কাস্টমসের রেকর্ড বলছে, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের শুল্কায়ন হয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ১৬ হাজার টন পরিশোধিত পাম অয়েল। অপরিশোধিত (ক্রুড) সয়াবিন ছয় লাখ তিন হাজার টন। ২০২০ সালে আমদানি হয়েছিল ১৮ লাখ ২১ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সয়াবিন তেল এসেছে তিন লাখ ১১ হাজার ২৭৩ টন।

অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৪২০ টন এবং পাম অয়েল এসেছে দুই লাখ ১৯ হাজার ৪৪৬ টন। ২০২১ সালে একই সময়ে দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৫০ টন সয়াবিন তেল, এক লাখ ২১ হাজার ১৭০ টন অপরিশোধিত তেল এবং এক লাখ ৯৯ হাজার ৫৪০ টন পাম অয়েল আমদানি হয়েছিল। প্রায় ৩২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন নিয়ে দু’টি জাহাজ বন্দরের এসেছে। আগামীকাল শনিবার আরও ৪৩ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন নিয়ে আরেকটি জাহাজ বন্দরে এসে পৌঁছাবে।

রমজানের আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে দেশে ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। চলতি ২০২১-২২ সালের জন্য চাহিদা নিরূপণ করা হয় ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের ওপরে। দেশে এখন সাড়ে ৩৩ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। আর গত দুই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৮৩ হাজার ২১১ টন পেঁয়াজ এসেছে। ২০২১ সালে একই সময়ে এসেছিল ৩৮ হাজার ৫৮৪ টন। দেশে ফলন ভালো হওয়ায় এবং স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি স্বাভাবিক হওয়ায় আমদানিকারকরা এখন জাহাজে পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে মসুর ডালের চাহিদা বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন। এর অর্ধেক স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। শুধু রমজানে মসুরের চাহিদা থাকে প্রায় ৮০ হাজার টন। গত দুই মাসে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৯৪ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৮১ হাজার ৮২৫ টন। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৬০ হাজার টনের বেশি। রমজানে ৩৫ হাজার টনের মতো চাহিদা তৈরি হয়, যা বিদ্যমান সরবরাহ দিয়েই সামাল দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এখন সব সময় খেজুর আমদানি হয়। বাজারে গত বছরের আমদানি করা খেজুরও আছে।

রমজানে মটর ডালেরও চাহিদা থাকে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মটর আমদানি কম হয়েছে। গত দুই মাসে মটর ডাল আমদানি হয়েছে ৯৪ হাজার ৭৮৮ টন। ২০২১ সালে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল আরও তিন হাজার ৭৯০ টন বেশি। মোট আমদানি হয় ৯৮ হাজার ৫৮৭ টন। তবে ৪৭ হাজার টন মটর ডালের একটি চালান এখন খালাসের পর্যায়ে আছে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত দুই বছর কঠোর লকডাউনের মধ্যে পালিত হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। বিধি-নিষেধের কারণে হয়নি কোন ইফতার মাহফিল। জনসমাগম এড়াতে মসজিদেও ইফতার আয়োজন বন্ধ রাখা হয়। এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ব্যাপকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন হবে। আর তাতে এসব ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও বাড়বে। এজন্যই এবার আমদানি বেশি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া গত বছরের আমদানিকৃত অনেক পণ্য এখনও মজুত রয়েছে। ভোজ্যতেলের আমদানিতে ভ্যাট কমানো হয়েছে। ফলে সিন্ডিকেটের কারসাজি না হলে এবার রমজানে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পবিত্র শবে বরাতের পর থেকেই শুরু হয় মাহে রমজানের প্রস্তুতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ