নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দিনের বাকি আর মাত্র ১২ ওভার। বোলিংয়ে নাথান লায়ন। বরাবরের মতো এদিনও ভয়ঙ্কর ছিলেন তিনিই। তার বীপরিতে নিজের ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে বাবর আজম চওড়া ব্যাট আর দায়িত্বশীল কাঁধে পাকিস্তানকে নিয়ে চলছিলেন ইতিহাসের দিকে। তবে মুহূর্র্তেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে। ৩৫ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটিতে হঠাৎই নেমে আসে সুনশান নিরবতা। চতুর্থ বলটিতে মার্নাস লাবুশেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামে পাকিস্তান অধিনায়কের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। সেই ধাক্কা কাটিয়ে পরক্ষণেই এক অবিশ্বাস্য আনন্দে নেচে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। মুহুর্মুহু করতালি আর হর্ষধ্বনি মাথায় নিয়ে দ্বিশতক থেকে মাত্র ৪ রান আগে মাঠ ছাড়ছেন বাবর। যে করতালিতে ১১ জোড়া হাত যে মাঠের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদেরও! দীর্ঘ ২৪ বছর পর দলটির পাকিস্তান সফরের স্বার্থকতা যেন ততক্ষণে ছড়িয়ে গেছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়। এই ম্যাচ থেকে আর কি-ই-বা পেতে পারে স্বাগতিকরা! তবে তখনও যে অনেক কিছু বাকি!
বেলা গাড়িয়ে করাচিতে ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে, ড্রোন ক্যামেরায় ধরা পড়লো সেটি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্নায়ুচাপ আর রোমাঞ্চও। মাঠের যে দর্শকেরা কিছুক্ষণ আগে উল্লাস করছিলেন বাউন্ডারিতে, এখন তাদের হর্ষধ্বনি আসছে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা প্রতিটা বল ঠেকিয়ে দেওয়ার পর। ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে নাথান লায়নকে সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে প্রথমে ক্যাচ, পরে রান-আউটের হাত থেকে বাঁচলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকটা পেয়ে গেলেন একটু পরই, অসাধারণ এক ড্র থেকে পাকিস্তানের দ‚রত্বটা দাঁড়াল ৬ বলে।
দুই সিøপ, প্রায় শর্ট গালির সঙ্গে সিলি মিড-অফ, শর্ট লেগ, লেগ সিøপ, শর্ট এক্সট্রা কাভার, শর্ট মিড-অন নিয়ে শেষ ওভারটা করতে এলেন এই ম্যাচেই অভিষিক্ত লেগ স্পিনার মিচেল সোয়েপসন। তবে টলাতে পারলেন না রিজওয়ানকে। ২ বল বাকি থাকতে ড্র মেনে নিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ বিকেলের আলোয় করাচি সাক্ষী হলো অন্যতম সেরা এক টেস্টের, যেটিতে মিশে থাকল বাবরর স্মরণীয় ইনিংস, আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে তার মহাকাব্যিক জুটি আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাল না ছাড়ার গল্পগুলো।
১৭২ ওভার ব্যাটিং অথবা ৫০৬ রান- গতকাল করাচিতে ড্র বা জয়ের যে কোনোটি করতে হলেই বিশ্বরেকর্ড করতে হতো পাকিস্তানকে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ডটা ৪১৮ রানের। ‘টাইমলেস’ টেস্ট বাদ দিলে এর আগে কখনো চতুর্থ ইনিংসে এতো ওভার ব্যাটিং করে বাঁচায়নি টেস্ট। করাচিতে পাকিস্তান চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখিয়ে করল ড্র। তবে রাওয়ালপিন্ডির ড্র আর এ ড্রয়ের মধ্যে পার্থক্যটা যে ওই ১৭১.৪ ওভার ব্যাটিংয়ের মতোই বিশাল!
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা শেষ দিনে এসে রঙ বদলেছে বারবার। অস্ট্রেলিয়ার শেষবারের মতো ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা হয়েছিল বাবরের সেই উইকেট দিয়ে। ৫০০ মিনিটের ওপর ব্যাটিং করে, ৪২৫ বলে ১৯৬ রান করে লায়নকে আগ বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডে ক্যাচ তোলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক পাওয়া হয়নি, ম্যাচ ড্র করা থেকেও পাকিস্তান তখন দাঁড়িয়ে ১২.২ ওভার দ‚রে। এমন ইনিংসের পরও তাই হতাশই দেখাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার অভিনন্দনের মধ্য দিয়ে ফেরা বাবরকে। তখনো অবশ্য পাকিস্তানের হাতে ৫ উইকেট।
রোমাঞ্চ বাড়ে বাবরের আউটের ঠিক পরের বলেই ফাহিম আশরাফ সিøপে ক্যাচ দিলে। হুট করেই ম্যাচ ঝুলে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সেটিকে নিজেদের করে নিতে এর পরের ওভারেই তৃতীয় নতুন বলটা নিয়ে নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স। রিজওয়ান প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন, তবে লায়নের বলে সাজিদ ফিরলে আবারও ঢুকতে হয় খোলসে। আট ওভার বাকি, হাতে তিন উইকেট! পাকিস্তানের সমর্থকদের স্নায়ুর চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া ৪৮টি বল বিপদহীন পার করিয়ে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত ড্র এনে দিলেন রিজওয়ান।
দিনের প্রথম ভাগে অবশ্য ম্যাচটার এমন রোমাঞ্চ ছড়ানোর গল্প লিখতে হবে, এমনটা মনে হয়নি। অস্ট্রেলিয়া দিনের প্রথম উল্লাসটা করতে পেরেছিল মধ্যাহ্নবিরতির আগ দিয়ে। অবশেষে ভাঙে বাবর ও শফিকের মহাকাব্যিক জুটি। আগেরদিন ২০ রানে ব্যাটিং করা শফিকের সহজতম ক্যাচ সিøপে ছেড়েছিলেন স্টিভ স্মিথ, গতকাল তার হাতেই ধরা পড়েছেন আগের ম্যাচে শতক করা শফিক। ৪ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতক পাননি। তবে এর আগেই বাবরের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে ফেলেছেন। আগেরদিন দুজনের জুটি শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের ২১ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। কাল অবিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে দুজন মিলে খেলেছেন ৫২০ বল। শফিক নিজে ক্রিজে ছিলেন ৪৬৫ মিনিট। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে কোনো জুটি এর আগে এত বল খেলেনি। আগের রেকর্ডটি ছিল ভারতের দীপ দাসগুপ্ত ও রাহুল দ্রাবিড়ের, ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় উইকেটে দুজন খেলেছিলেন ৫০০ বল।
প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই আউট হয়ে যাওয়া ফাওয়াদ আলম এদিন রানের কলাম প‚র্ণ করেছেন ঠিকই, তবে তাঁকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি প্যাট কামিন্স। বিরতির পরের ৮ ওভারে ২১ রান তুলেছিল পাকিস্তান, এরপরই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফাওয়াদকে ফেরান কামিন্স। ওই উইকেটের পরই হয়তো আক্রমণের ভাবনা থেকে সরে আসে পাকিস্তান। সেই সেশনে বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান মনোযোগ দেন সময় কাটানোর দিকেই। হাল ছাড়েনি অস্ট্রেলিয়াও। তবে কাছাকাছি গিয়েও সাফল্য পায়নি তারা। প্রায় নিখুঁত ব্যাটিং করে আসা বাবরকে চা-বিরতির আগে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেন দুই স্পিনার নাথান লায়ন ও মিচেল সোয়েপসন। ১৫৭ রানে ব্যাটিং করার সময় লায়নের বলে প্রায় এলবিডবøু হয়েছিলেন বাবর, ডিআরএসে আম্পায়ারস কল আসায় বেঁচে যান। এরপর সোয়েপসনের পরপর দুই বলে বাবরের ক্যাচ ক্লোজ-ইনে ফেলেন ট্রাভিস হেড ও মারনাস লাবুশেন। রিজওয়ানের উইকেটও পেতে পারতেন সোয়েপসন, এবার ক্রিজের তিন মিটারের বেশি দ‚রত্বে থাকায় আম্পায়ারস কল হয় ইমপ্যাক্টে।
সেই রিজওয়ানকে শেষ পর্যন্ত টলাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। করাচি দেখল পাকিস্তানের মহাকাব্যিক ব্যাটিং প্রদর্শনী, যাতে ছাপ রাখলেন রিজওয়ানও। তবে সঙ্গে নুমানের ১৮ বল কোনো রান নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকাকেও তো ছোট করে দেখা যাচ্ছে না!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৫৫৬/৯ ডিক্লে. ও ২য় ইনিংস : ৯৭/২ ডিক্লে.। পাকিস্তান : ১৪৮ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৫০৬) ১৭১.৪ ওভারে ৪৪৩/৭ (আগের দিন ১৯২/২) (শফিক ৯৬, বাবর ১৯৬, ফাওয়াদ ৯, রিজওয়ান ১০৪*, ফাহিম ০, সাজিদ ৯, নুমান ০*; স্টার্ক ০/৫৮, কামিন্স ২/৭৫, সোয়েপসন ০/১৫৬, লায়ন ৪/১১২, গ্রিন ১/৩২)।
ফল : টেস্ট ড্র। সিরিজ : ২ ম্যাচ শেষে ৩ ম্যাচের সিরিজে ০-০ সমতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।