Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়া দিবস ঘোষণা

মুসলিম বিশ্বকে অভিনন্দন ইমরান খানের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

জাতিসংঘ (ইউএন) ১৫ মার্চকে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে মনোনীত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মঙ্গলবার মুসলিম বিশ্বকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, ‘আমি আজ মুসলিম উম্মাহকে অভিনন্দন জানাতে চাই, কারণ ইসলামফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান জোয়ারের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে এবং জাতিসংঘ ওআইসির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রবর্তিত একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, ১৫ মার্চকে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে মনোনীত করেছে’।
তিনি যোগ করেছেন, ‘আজ জাতিসংঘ অবশেষে বিশ্বের মুখোমুখি হওয়া গুরুতর চ্যালেঞ্জকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তা হচ্ছে, ইসলামফোবিয়া, ধর্মীয় প্রতীক ও অনুশীলনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নিয়মতান্ত্রিক ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য হ্রাস করা। পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এ যুগান্তকারী প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা’।
দিবসটি চালু করার কৃতিত্বও পাকিস্তানের, কারণ দেশটি ২০২০ সালে নাইজারের নিয়ামেতে অনুষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) কাউন্সিল গঠনকারী দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৪৭তম অধিবেশনে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল। সেই থেকে ৫৭-সদস্যের সংস্থাটি দিনটি স্মরণে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সাথে কাজ করছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ বিশ্ব প্ল্যাটফর্মে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃবৃন্দকে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার এবং ‘অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ক্রমবর্ধমান ঘটনা মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার’ আহŸান জানিয়েছেন।
তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে ইসলামোফোবিয়ার ভয়ঙ্কর উত্থান এবং এর সাথে সম্পর্কিত ঘৃণাকে নিয়মিতভাবে তুলে ধরেছেন, এর গুরুতর প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
ইসলামোফোবিয়া ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রোফাইলিং, গো-রক্ষকদের গণপিটুনিতে হত্যা, বৈষম্যমূলক আইন, হিজাব পরা মহিলাদের ওপর আক্রমণ, মিনার নিষিদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলামকে যুক্ত করার এবং সমত‚ল্য করার প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করেছে।
‘ইসলামফোবিয়া একটি বাস্তবতা’
আজ এর আগে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে ওআইসি-র পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রবর্তিত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেটি ১৫ মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করে, বলে যে, এটি বিশ্বব্যাপী সহনশীলতার সংস্কৃতি প্রচার করার লক্ষ্যে ছিল।
এর শর্তাবলীর অধীনে, রেজোলিউশনটি তাদের ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমস্ত কাজ এবং তাদের উপাসনালয়ের বিরুদ্ধে নির্দেশিত এ ধরনের কাজগুলোর পাশাপাশি ধর্মীয় স্থান, সাইট এবং উপাসনালয়গুলোতে এবং লঙ্ঘনকারী সব আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে।
পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুনির আকরাম ১৯৩-সদস্যের অ্যাসেম্বলিকে বলেন, ‘ইসলামফোবিয়া একটি বাস্তবতা’, ঘটনাটি ক্রমবর্ধমান হচ্ছে এবং এর সমাধান করা আবশ্যক।
তিনি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি জাতিসংঘে তার ঐতিহাসিক ২০১৯ সালের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ইসলামোফোবিয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন এবং বারবার আন্তর্জাতিক মনোযোগ এবং এটি মোকাবেলার জন্য প্রচেষ্টার আহŸান জানিয়েছিলেন।
তার সূচনা বক্তব্যে, রাষ্ট্রদূত আকরাম বলেন, ইসলামোফোবিয়ার বহিঃপ্রকাশ - ঘৃণাত্মক বক্তব্য, বৈষম্য এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা - বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে।
“মুসলিম ব্যক্তি ও স¤প্রদায়ের প্রতি এ ধরনের বৈষম্য, শত্রæতা এবং সহিংসতা তাদের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং তাদের ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে; তারা ইসলামী বিশ্বের মধ্যেও চরম ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
ধর্মের স্বাধীনতা বা বিশ্বাসের ওপর জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সন্দেহ এবং মুসলমানদের প্রতি অবিশ্বাস এবং মুসলিম বলে মনে করাদের ভয় মহামারির আকারে বেড়েছে, মুসলিমরা প্রায়শই কলঙ্ক, নেতিবাচক স্টিরিওটাইপিং এবং লজ্জা অনুভব করে এবং একটি অনুভ‚তি অনুভব করে যে, তারা ‘সন্দেহবাদী স¤প্রদায়’ যারা একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুর কর্মের জন্য সম্মিলিত দায়ভার বহন করতে বাধ্য হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত আকরাম বলেন, ‘ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার, ঘটনাটির গতিবেগ এবং আউটরিচ উভয় ক্ষেত্রেই, আজকাল বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ এটি জেনোফোবিয়া, নেতিবাচক প্রোফাইলিং এবং মুসলমানদের স্টিরিওটাইপিং দ্বারা চিহ্নিত বর্ণবাদের একটি নতুন রূপ হিসাবে আবির্ভ‚ত হয়েছে’।
“অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের বৃদ্ধি, সেইসাথে শিক্ষা, নাগরিকত্ব, অভিবাসন, কর্মসংস্থান, আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৈষম্য ভালভাবে নথিভুক্ত।
‘ইসলামোফোবিয়ার লিঙ্গগত দিকটিও প্রাধান্য পাচ্ছে, মেয়েদের এবং মহিলাদের তাদের পোশাকের ধরন এবং সাধারণ ধারণার কারণে যে, মুসলিম মহিলারা নিপীড়িত এবং এইভাবে ‘মুক্তি’ হওয়া উচিত বলে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে’।
পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বলেন, আসলেই উদ্বেগজনক বিষয় হল ইসলামফোবিয়া ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অনুরণন খুঁজে পেতে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত নতুন আইন ও নীতির মাধ্যমে ইসলামফোবিয়ার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে পরিচালিত করে।
‘বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, ইসলামোফোবিয়া মিডিয়াতে এবং অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর বক্তৃতায় সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান, যারা নির্বাচনী লাভের জন্য ইসলামের সাধারণ ভয়কে শোষণ করে এবং গড়ে তোলে’।
তিনি বলেন যে, কিছু দেশে অভিবাসন বিরোধী এবং শরণার্থী বিরোধী বক্তব্য একটি মুসলিম বিরোধী রূপ নিয়েছে এবং প্রায়শই রাজনৈতিক প্রচারণার কেন্দ্রীয় থিম হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রদূত আকরাম গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয় এবং নেতিবাচক স্টেরিওটাইপ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, বিশেষত মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের ব্যাপক প্রচারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে।
‘এর ব্যাপক প্রভাব থাকা সত্তে¡ও ইসলামোফোবিয়া খুব খারাপভাবে বোঝা যায় না, এ ঘটনার বৃহত্তর তথ্য প্রচার করা এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি বৃহত্তর বোঝাপড়া এবং পূর্ণ সম্মানের মাধ্যমে সমাধানের প্রচার করা অপরিহার্য’। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।



 

Show all comments
  • সোলায়মান ১৬ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৭ এএম says : 0
    পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি
    Total Reply(0) Reply
  • এম আর মাহমুদ ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:২৪ এএম says : 0
    দিবস ঘোষনায় লাভ নেই বাস্তবতাই মূল
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হলে এসব দিবসের প্রয়োজন হতো না
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    একজন যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
    Total Reply(0) Reply
  • ডালিম ১৬ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৯ এএম says : 0
    ইসলামোফোবিয়া বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ১৬ মার্চ, ২০২২, ৭:০০ এএম says : 0
    আপনি এগিয়ে যান, সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আপনার সাথে আছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ