বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘শবে বরাত’ দু’টি ফার্সি শব্দ দ্বারা গঠিত একটি নাম। শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ বরকতপূর্ণ বা সৌভাগ্যমন্ডিত। সমষ্টিগত অর্থ হচ্ছে বরকতপূর্ণ রজনী বা সৌভাগ্যের রাত।
যেহেতু এ রাতের ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বরকত লাভের আশা করা যায়, তাই উক্ত রাতকে শবে বরাত, বরকতপূর্ণ রজনী বা সৌভাগ্যের রাত বলা হয়। হাদিস শরীফ এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই রাতকে ‘লাইলাতুন্ নিসফি মিন শাবান’ অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত বলে উল্লেখ করেছেন। আল কুরআনে এই রাতকে ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আরবি বছরের হিসাবে কয়েকটি রাতের সাথে জড়িত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার কুদরতী নিদর্শনাবলি। যেমন- কদরের রাত, জুমার রাত, আরাফার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, ঈদুল আজহার রাত, শাবানের মধ্যবর্তী রাত, মিলাদুন্নবীর রাত, মি’রাজের রাত, আশুরার রাত, রজবের ১ম রাত, জিলহজের ৮ তারিখের রাত ইত্যাদি। এর মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ হলো কদরের রাত। আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলির প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা মুমিনদের জন্য তাকওয়াল কুলুব বা অন্তরের পরিচ্ছন্নতার অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লিখিত রাতসমূহের মধ্যে কোনো কোনো রাতে কিছু বিশেষ আমলের কথা হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে। আবার কোনো রাতের আমলের কথা নেই। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের জন্য প্রতি রাতে কিছু সাধারণ আমল করার নসীহত করেছেন যেমন- কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরণ করে তাহ্জ্জাুদ নামাজ আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, জিকির আজকারে নিমগ্ন থাকা, দোয়া, মোনাজাত ও ইস্তিগফার করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) সব রাতেই সাধ্যমতো ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহগণ সব রাতেই কদরের রাতের ন্যায় ইবাদতে লিপ্ত থাকেন। সাথে সাথে কোনো রাতে সুন্নাহ মোতাবেক কোনো আমল নির্ধারিত থাকলে সেগুলোও গুরুত্ব সহকারে আদায় করেন।
যেসব সাধারণ মুমিন-মুসলমান এভাবে নফল ইবাদতে মশগুল হতে পারেন না, তারা যদি আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে উক্ত রাতসমূহে সাধ্যমতো কিয়ামুল লাইলসহ নফল ইবাদত করে তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে অন্যান্য রাতেও নফল ইবাদতের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নির্দশনযুক্ত রাতসমূহে কিয়ামুল লাইলসহ ইবাদত বন্দেগী করা কোনো মতেই বিদআত নয়, বরং তা সুন্নাতেরই অংশ এবং নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজার হওয়ার সাধনামাত্র।
এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বান্দাহদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। হযরত আবি সা’লাবা খুশানী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাতে স্বীয় বান্দাহদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর মুমিনদের ক্ষমা করেন এবং কাফেরদের (সত্য) গ্রহণের সুযোগ দেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের বিদ্বেষ পরিত্যাগ করা পর্যন্ত অবকাশ দেন। (বায়হাকী : শোয়াবুল ঈমান, ৩/৩৮১; মু’জামুলকাবীর : ২২/২২৩)।
এই রাত মাগফিরাতের রাত। হযরত আসীম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি বকর (রা.) তাঁর পিতার সনদে দাদা হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা শাবানের ১৫তম রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং সকল পাপীকে (যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে) ক্ষমা করে দেন। তবে, মুশরিক (আল্লাহর সাথে সমকক্ষ সাব্যস্তকারী) ও হিংসুককে ক্ষমা করেন না। (বায়হাকী : ফী শুয়াবিল ঈমান)।
এই রাত দোয়া কবুলের রাত। হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলা রোজা রাখবে। কেননা, ১৫তম রাতে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। সন্ধ্যা থেকে সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আহ্বান করেন কেউ আছ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। জীবিকার সন্ধানী কেউ আছ কি আমি তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবিকা দান করব। কেউ কি বিপদগ্রস্ত আছ আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। এভাবে আল্লাহ পাক ঊর্ধ্বাকাশ পর্যন্ত বান্দাহর চাহিদা পূরণ করার জন্য আহ্বান করতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।