Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রুশ অলিগার্ক রোমান আব্রামোভিচকে নিয়ে নতুন জল্পনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২২, ৫:০০ পিএম

রুশ ধনকুবের বা অলিগার্ক রোমান আব্রামোভিচ দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়েছেন বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তাদের দাবি, ১৯৯৫ সালে রাশিয়ার সরকারের কাছ থেকে নিলামে একটি তেল কোম্পানি কিনেই বিলিয়নিয়ার বনে গিয়েছিলেন তিনি। তবে নিলামটি নিয়েই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো। অর্থাৎ দুর্নীতিগ্রস্ত নিলামের মাধ্যমে ওই কোম্পানির মালিক হয়েছিলেন আব্রামোভিচ।

তিনি ২৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিলেন। আবার ২০০৫ সালে সেটিই তার কাছ থেকে রাশিয়ান সরকার কিনেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে। তার আইনজীবী বলছেন অপরাধের মাধ্যমে অর্থ আয়ের অভিযোগের কোন ভিত্তি আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে নেই। আব্রামোভিচ ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যোগসূত্র থাকার দায়ে যুক্তরাজ্য তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার সম্পদ ইতোমধ্যেই জব্দ করেছে যুক্তরাজ্য এবং চেলসি ক্লাবের ডিরেক্টর পদের জন্য তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

বিবিসি’র দাবি, যুক্তরাজ্যের এক আদালতে আব্রামোভিচ ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছেন যে তেল কোম্পানি সিবনেফ সংক্রান্ত এক চুক্তির সময় তার অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২০১২ সালে তারই এক সাবেক বানিজ্য সহযোগী বরিস ব্রেজেভস্কি তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন লন্ডনে। আব্রামোভিচ মামলায় জিতেছিলেন কিন্তু আদালতে তিনি বর্ণনা করেছেন যে কিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে নিলামটি তার পক্ষে আনা হয়েছিলো এবং মিস্টার ব্রেজেভস্কিকে দশ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন ক্রেমলিনের কর্মকর্তাদের দেয়ার জন্য।

বিবিসি প্যানারোমা একটি দলিল হাতে পেয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এ অর্থ রাশিয়ার বাইরে পাচার হয়েছে। রুশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে মিস্টার আব্রামোভিচের যে ফাইল আছে সেখান থেকে এ ডকুমেন্টটি নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে। যদিও পাঁচ পাতার এ দলিলটি অন্য কোন সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যে থাকা থাকা অনেক বিষয় সম্পর্কেই অন্য সূত্রগুলো থেকে খোঁজ নেয়া হয়েছে।

বিবিসি প্যানারোমার কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ান সরকার সিবনেফ চুক্তি থেকে দুই দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা করেছে, যা রাশিয়ার সংসদীয় একটি তদন্তেও উঠে এসেছে। প্রাপ্ত দলিল অনুযায়ী রাশিয়া কর্তৃপক্ষ প্রতারণার দায়ে মিস্টার আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে চেয়েছিলো। এতে বলা হয়েছে, "অর্থনৈতিক অপরাধ বিভাগের তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে আব্রামোভিচকে বিচারের আওতায় আনা হলে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হবে....যা করেছে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র"।

১৯৯০ এর দশকে রাশিয়ার তখনকার প্রধান কৌসুঁলি ইউরি স্কুরাটভ অভিযোগটি তদন্ত করেছিলেন। স্কুরাটভ গোপন দলিলটির অনেক কিছু দেখেননি কিন্তু তিনি সিবনেফ চুক্তি নিয়ে অনেক তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, "মূলত এটা ছিলো একটি প্রতারণামূলক কাজ যেখানে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় যারা কাজ করেছেন তাদের একটি চক্র আব্রামোভিচ ও ব্রেজেভস্কিকে কৌশলে সরকারকে কোম্পানিটির প্রকৃত মূল্য না দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন"।

ডকুমেন্টটিতে দেখা যায় মিস্টার আব্রামোভিচকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন তখনকার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন। স্কুরাটভ যে তদন্ত করেছিলেন সেটি প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপেই বন্ধ হয়ে যায়। তিনি তার তদন্তের ভিত্তিতে সিবনেফ তেল কোম্পানি নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলা তৈরি করছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়েলেৎসিন তদন্ত বন্ধ করে মিস্টার স্কুরাটভকে বরখাস্ত করেন। ১৯৯৯ সালে একটি সেক্স টেপ প্রকাশের পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিলো।

রোমান আব্রামোভিচ ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পরেও ক্রেমলিনের ভেতরে তার শক্ত অবস্থান ধরে রাখেন। প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে দেখা যায় দু বছর পর রাশিয়ার আরেকটি তেল কোম্পানি স্লাভনেফট নিয়ে আরেকটি দুর্নীতিগ্রস্ত নিলাম হয়েছে। আব্রামোভিচ স্লাভনেফট কিনতে অংশিদার চুক্তিতে আরেকটি কোম্পানি গঠন করেন। কিন্তু একটি চীনা কোম্পানি প্রায় দ্বিগুণ মূল্য হাঁকাচ্ছিলো।

কিন্তু ক্রেমলিন থেকে শুরু করে রুশ পার্লামেন্টের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই হেরে যেত চীনা কোম্পানিটি নিলাম জিতলে। দলিল বলছে শেষ পর্যন্ত নিলামের জন্য মস্কো আসার পর চীনা প্রতিনিধি দলটির একজন সদস্য অপহৃত হন। "শক্তিশালী চীনা কোম্পানি সিএনপিসি শেষ পর্যন্ত তাদের একজন প্রতিনিধি অপহরণের পর নিলাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এরপর ওই প্রতিনিধি মুক্ত হয়ে আসেন"।

ভ্লাদিমির মিলভ ছিলেন রাশিয়ার ডেপুটি জ্বালানি মন্ত্রী। তিনি এই অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মিস্টার আব্রামোভিচের অংশিদারী কোম্পানিটিই নিলামে জিতবে। "আমি বলেছিলাম যে চীনারা আসতে চায় এবং তারা বেশি টাকা দিতে প্রস্তুত। তারা বললো এটা কোন ব্যাপার না। চুপ করো, এটা তোমার বিষয় না। এটা চূড়ান্ত হয়ে আছে। স্নাভনেফট আব্রামোভিচ পাবেন। দামটাও ঠিক করা হয়েছে। চীনাদের যেভাবেই হোক সরিয়ে দেয়া হবে"।

তবে ওই অপহরণ সম্পর্কে আব্রামোভিচ জানতেন কি-না তা জানা যায়নি। তার আইনজীবীরাও বলেছেন যে এ বিষয়ে মিস্টার আব্রামোভিচের কিছু জানা ছিলো না। অনেকগুলো পক্ষ স্লাভনেফট নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলো আর চীনাদের বিষয়ে ব্যাপক বিরোধিতাও ছিলো। তবে চীনাদের সরে দাঁড়ানোর কারণ যাই হোক না কেন, তারা চলে যাওয়ার পর মিস্টার আব্রামোভিচের পার্টনারশিপ ছাড়া আর কেউ টেবিলে ছিলো না। শেষ পর্যন্ত তারাই পায় স্লাভনেফট।

মিস্টার আব্রামোভিচের আইনজীবী বলছেন স্লাভনেফট ও সিবনেফ নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। এমনকি আব্রামোভিচের পক্ষে মিস্টার ইয়েলিৎসিনের ভূমিকাও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ