নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২৩ বছর আগে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন বুলবুল-আকরাম-নান্নুরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী আসরে স্কটল্যান্ডের পর পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় পেয়েছিলেন তারা। নান্নু-আকরামদের সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর লাল-সবুজের মেয়েরাও নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথম জয়ে ইতিহাস রচনা করল।
গতকাল হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেটে ২২৫ রান তুলতে নির্ধারিত ওভার শেষ করে পাকিস্তান। ফলে ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিজেদের অভিষেক আসরের তৃতীয় ম্যাচেই প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ নারী দল। অন্যদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা ১৮ ম্যাচ হারলো পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০০৯ সালের বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেয়েছিল তারা। এই জয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি দ্বৈরথে সমতা নিয়ে এলো বাংলাদেশ। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যকার ১২ ম্যাচে এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ জয়। এর মধ্যে শেষ তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে লাল-সবুজের মেয়েরা।
ম্যাচে বাংলাদেশের করা ২৩৪ রানের জবাবে শুরুটা; কিন্তু বেশ ভালোই করেছিল পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৯১ রান যোগ করেন সিদ্রা আমিন ও নাহিদা খান। ইনিংসের ২৪তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন রুমানা আহমেদ। আউট হওয়ার আগে ৬৭ বলে তিন-চারের মারে নাহিদা করেন ৪৩ রান। পরে দ্বিতীয় উইকেটে সিদ্রার সঙ্গে ৬৪ রান যোগ করেন অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। পাকিস্তান অধিনায়ককে ফেরান জাহানারা আলম। বিসমাহ করেন ৪৮ বলে ৩১ রান। তার ইনিংসে ছিল দু’টি বাউন্ডারি। বিসমাহ আউট হওয়ার পরও একপ্রান্ত ধরে রেখে দলের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সিদ্রা আমিন। চার নম্বরে নেমে উমাইমা সোহেল রানরেট বাড়ানোর দিকে মনযোগী হন। একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১৮৩ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। তখন শেষ ৫০ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন পড়ে ৫২ রানের। ওই অবস্থা থেকেই ম্যাচ নিজেদের দখলে নিজেদের নেয় বাংলাদেশ। ইনিংসের ৪২তম ওভারের শেষ বল থেকে ৪৪তম ওভারের শেষ পর্যন্ত ১৩ বলে ৫টি উইকেট তুলে নেয় টাইগ্রেসরা। ফলে ২ উইকেটে ১৮৩ থেকে ৭ উইকেটে ১৮৭ রানের দলে পরিণত হয় পাকিস্তান। তাদের জয়ের সম্ভাবনা তখনই প্রায় শেষ হয়ে যায়। এই ম্যাচ দিয়েই প্রথমবার একাদশে ফেরা ফাহিমা খাতুন ৪৪তম ওভারে শিকার করেন দুইটি উইকেট, সেই ওভারে হয় একটি রানআউটও। এছাড়া রুমানাও ৪৩তম ওভারে নেন একটি উইকেট। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে পাঁচটি উইকেট পেয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তবুও পাকিস্তানের আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিজের সেরা ইনিংস খেলছিলেন সিদ্রা আমিন। তার ব্যাট থেকে আসে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৪৮তম ওভারে গিয়ে রানআউটে কাটা পড়েন ১৪০ বলে আট-চারের মারে ১০৪ রান করা সিদ্রা। তার বিদায়েই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়। তবে শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়নি পাকিস্তান। ৯ উইকেট হারিয়ে তারা করে ২২৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৩৮ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ফাহিমা খাতুন। এছাড়া রুমানা ২৯ রানে ২, জাহানারা ২০ ও সালমা ২৯ রানে শিকার করেন ১টি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেন ২৩৪ রান। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশ নারী দলের এটাই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ৯ উইকেটে ২১১ রান করেছিল টাইগ্রেসরা। ওই স্কোর টপকে কাল ২৩৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহের ইনিংসে ব্যাট হাতে আলো ছাড়ান ফারজানা হক পিংকি, শারমিন আক্তার সুপ্তা ও নিগার সুলতানা জ্যোতি। নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি হাঁকান ফারজানা পিংকি। আগের দুই ম্যাচের মতো কালও উদ্বোধনী জুটিতে ভালো সূচনা এনে দেন শামীমা সুলতানা ও শারমিন সুপ্তা। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন শামীমা। এরপর ৪২ রানের জুটি গড়েন সুপ্তা ও পিংকি। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ফিফটির দেখা পাবেন সুপ্তা। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে উমাইমা সোহেলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। সুপ্তার ৫৫ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রান যোগ করেন পিংকি ও জ্যোতি। সুপ্তার মতো জ্যোতিও আটকা পড়েন ফিফটির খুব কাছে গিয়ে। তার ৬৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ফাতিমা সানার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়ে। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি জ্যোতি। সুপ্তা ও জ্যোতি সুযোগ হাতছাড়া করলেও ভুল করেননি ফারজানা পিংকি। আগের ম্যাচে ৫২ রান করা পিংকি এই ম্যাচেও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবমবার ৫০ ছোঁয়ার রেকর্ড। পিংকির ব্যাটে ভর করেই ২০০ পেরোয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে পরপর দুই বলে আউট হন ফারজানা পিংকি ও ফাহিমা খাতুন। দুই আউটেই রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১১৫ বলে পাঁচ-চারের মারে ৭১ রান করেন পিংকি। মাঝে ১৩ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলেন তারকা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। শেষ দিকে রিতু মণি ১৩ বলে ১১ ও সালমা খাতুন ১০ বলে ১১ রান করলে ২৩৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ১২ ওভারে মাত্র দুইটি বাউন্ডারি হাঁকাতে পেরেছে লাল-সবুজের মেয়েরা। পাকিস্তানের পক্ষে ৪১ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাশরা সিন্ধু। এছাড়া নিদা দার, ফাতিমা সানা ও উমাইমা সোহেল নেন ১টি করে উইকেট।
দারুণ বল করে ম্যাচসেরা হচ্ছেন বাংলাদেশের ফাহিমা খাতুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।