Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভেনেজুয়েলার পর যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি ইরানে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ডামাডোলে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির সর্বশেষ সংবাদটি চাপা পড়েছিল। আচমকা আবার তা আলোচনায় এসেছে। গত রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানিয়েছে, পরমাণু চুক্তি নিয়ে ভিয়েনায় চলমান আলোচনা এখনো চ‚ড়ান্ত ফল দেয়নি। টুইট বার্তায় দেশটির একজন বিশেষজ্ঞ সায়েদ মোহাম্মদ মারান্দি বলেছেন, আমরা আলোচনার শেষ প্রান্তে আছি। সেসময় তিনি আলোচনায় অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির আচরণের সমালোচনা করেন। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, আলোচনা চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে আছে তবে অন্যান্য কারণে এখন এ আলোচনায় বিরতি দিতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে অন্যান্য কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইউরোপীয় মিত্ররা।
জোসেপ বোরেল টুইটারে বলেছেন, ভিয়েনা আলোচনায় বিরতি দেওয়া প্রয়োজন। এর সমন্বয়ক হিসেবে আমি ও আমার সহকর্মীরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান (বিশ্ব) পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে পারবে। এগুলো দৃশ্যমান বাস্তবতা। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগতে পারে—পর্দার আড়ালে নতুন কিছু ঘটছে না তো?
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার মতো মধ্যপ্রাচ্যের ইরান নিকটতম প্রতিবেশী রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ ছাড়াও, ভেনেজুয়েলার মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সাপে নেউলে। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের ওপর বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সেগুলোর অনেক কিছুই এখনো বহাল আছে ইরানের ওপর। কিন্তু, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে বৈশ্বিক রাজনীতি নতুন রূপ নিতে শুরু করে।
রাশিয়ার তেল-গ্যাস বিক্রিতে বাধা দেওয়াসহ আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা থেকে মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে বন্ধুহীন করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাশিয়ার মানিক-জোড় ভেনেজুয়েলার মতো ইরানের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
কোনো সম্ভাবনাই বাদ দেওয়া যাচ্ছে না : ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। এর ২ বছর পর তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ভারসাম্যপূর্ণ নয় এমন যুক্তিতে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়। গত বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে এসে জো বাইডেন বহুল আলোচিত সেই চুক্তিতে ফিরে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই প্রচেষ্টা শেষ হতে না হতেই পড়লো বিরতির মুখে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাত দিয়ে গত রোববার রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে মস্কোর দাবি মেনে নেওয়ার চেয়ে তেহরানের সঙ্গে বিকল্প চুক্তির পথ খুঁজছে ওয়াশিংটন। এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। মস্কোর দাবি সম্পর্কে আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ বলেছেন—ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার যে বাণিজ্য আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এ ক্ষেত্রে বলবৎ রাখা যাবে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বিøনকেন মস্কোর এমন দাবিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন।
গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু গবেষণা কোনো নিষেধাজ্ঞার কারণে বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। লাভরভের বক্তব্য থেকে যেমন রাশিয়ার দাবি সম্পর্কে জানা যায়, তেমনি খাতিবজাদেহের বক্তব্যেও ইরানের চাওয়া পরিষ্কার। সেই মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে আরও বলেছেন, আমি মনে করি, এ কথা বলা নিরাপদ যে ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি আগে হয়েছিল তারচেয়ে বেশি ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মস্কো যদি তার দাবি থেকে সরে না আসে তাহলে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়ার বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানের ইরবিলে ইসরাইলের ‘কৌশলগত অবস্থানে’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে ক‚টনৈতিক দেনদরবার নতুন জটিলতায় পড়েছে বলেও এতে মন্তব্য করা হয়। এখন দেখার বিষয় কারাকাসের মতো তেহরানের মন জয় করতে কোন পথে এগোবে বাইডেন প্রশাসন। সূত্র : তেহরান টাইমস, আরটি।



 

Show all comments
  • Bidhan Chandra Sanyal ১৫ মার্চ, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    যুদ্ধটা সাম্রাজ্যবাদী দের কাছে মজার খেলা
    Total Reply(0) Reply
  • Goutam Mandal ১৫ মার্চ, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    NATO র কাছে এ যুদ্ধ একটা শিক্ষা, যাতে ভবিষ্যতে ওরা আর কোনো দেশকে না গিলতে পারে ।
    Total Reply(0) Reply
  • পথের দিশারী ১৫ মার্চ, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    অস্ত্র ব্যবসা করতে বিশ্বব্যাপী একের পর এক যুদ্ধ বাধিয়ে দিচ্ছে আমেরিকা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ১৫ মার্চ, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ১৫ মার্চ, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
    ধীরে ধীরে ইরান আগামী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আর্ভিভুত হবে
    Total Reply(0) Reply
  • সবুজ ১৫ মার্চ, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
    ইরানের জন্য থাকবে অনেক অনেক শুভ কামনা
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান সোহাগ ১৫ মার্চ, ২০২২, ১০:১৯ এএম says : 0
    নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত হলে সবাই সালাম দিতে আসবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ