বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমাদের অভিভাবক আল্লাহ তাআলা। বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী প্রমুখ মুরুব্বীগণ হলেন ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অস্থায়ী অভিভাবক। তাদের ছায়া আমাদের উপর ততক্ষণই থাকে যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা চান। বস্তুত, আমাদের অভিভাবক শুধুই আল্লাহ তাআলা। তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। সুতরাং দুনিয়ার এই হায়াতটুকুর অভিভাবকও তিনি এবং আখেরাতের অভিভাবকও তিনিই; তিনি চিরস্থায়ী অভিভাবক। জীবনের যত প্রয়োজন তিনিই পূরণ করেন এবং অসহায়ত্বের সময় তিনিই একমাত্র সহায়।
ছোট বড় সব কিছু আমরা তাঁর কাছেই চাইব। সাধারণত মানুষ কঠিন জিনিসগুলো আল্লাহর কাছে চায়; সহজগুলো চায় না। অথচ আমাদের প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা হলো, ছোট থেকে ছোট এবং সামান্য থেকে সামান্য বিষয়েও আমাদের আল্লাহর শরণাপন্ন হতে হবে। তাঁর কাছে চাইতে হবে। আমার সুবিধা অসুবিধাগুলো আমি যতটুকু বুঝি আল্লাহ তাআলা তারচে’ বেশি বোঝেন।
কারণ, তিনি হলেন আমাদের অভিভাবক। নবীজী (সা.) এর একটি হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বলেন : হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই অন্নহীন। তবে যাকে আমি আহার করাই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে আহার চাও। আমি তোমাদের আহার দেব। বান্দারা আমার! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন। তবে যাকে আমি বস্ত্র পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও। আমি তোমাদের বস্ত্র দেব। হে আমার বান্দারা! রাত-দিন তোমরা ভুল কর। আর আমি সকল গোনাহ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি তোমাদের ক্ষমা করব।
এই হাদীসটিতে আরো বর্ণিত হয়েছে : হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ জন, তোমাদের মানুষ ও জিন সকলেই একটি খোলা ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত জিনিস দান করি, তাহলে (এ দান) আমার কাছে যে ভান্ডার আছে, তা হতে ততটাই কম করতে পারবে, যতটা সুচ কোনো সমুদ্রে ডোবালে তার পানি কমিয়ে থাকে। (সহীহ মুসলিম : ৬৭৩৭)। আর এটাও বলা হয়েছে আমাদের বোঝার সুবিধার্থে। নতুবা বাস্তবতা হলো, আল্লাহ তাআলার ভান্ডার থেকে কিছুই কমে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় এলে সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন : আল্লাহর কাছে বা কোনো আদম-সন্তানের কাছে যদি কারো কোনো প্রয়োজন হয় তবে সে যেন ওযু করে এবং খুব সুন্দরভাবে যেন তা করে। অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। এরপর যেন আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করে এবং রাসূল (সা.)-এর ওপর দরূদ-সালামের পর এই দুআটি পড়ে : (অর্থ) পরম সহনশীল ও দয়ালু আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। মহান আরশের রব আল্লাহ অতীব পবিত্র। সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে তোমার রহমত আকর্ষণকারী সকল ভালো কাজ এবং তোমার ক্ষমা লাভের উপায়সমূহ প্রর্থনা করছি। আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা কর, আমার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং তোমার সন্তুষ্টিমূলক প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করে দাও। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (জামে তিরমিযী : ৪৭৯)।
অতঃপর সে দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য যা চাওয়ার আছে তা প্রার্থনা করবে। এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন : হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।