Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানে ভুল করে ছোঁড়া ভারতীয় মিসাইলটি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:০৬ পিএম

ভারত জানিয়েছে বুধবার দুর্ঘটনাবশত পাকিস্তানের দিকে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে তারা। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময় 'প্রযুক্তিগত ত্রুটি'র কারণে মিসাইল নিক্ষেপের এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতের কর্তৃপক্ষ।

দিল্লি এই ঘটনায় 'গভীর অনুশোচনা' প্রকাশ করেছে এবং দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, পাকিস্তানের পূর্ববর্তী মিয়া চান্নু শহরে একটি 'উচ্চ গতিসম্পন্ন উড়ন্ত বস্তু' ধ্বংস হয়েছে এবং ঐ উড়ন্ত বস্তুর গতিপথের নিকটবর্তী যাত্রীবাহী বিমানের চলাচল ব্যহত করেছে। ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা সম্পন্ন।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে: ৯ই মার্চ ২০২২ তারিখে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত একটি মিসাইল উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটে। ভারত সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আদেশ দিয়েছে।"

এই ধরণের 'অবহেলার অপ্রীতিকর পরিণতি'র বিষয়ে সতর্ক থাকা, এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে দিল্লিকে সতর্ক করেছে ইসলামাবাদ। তারা বলছে মিসাইলটি হরিয়ানা রাজ্যের সিরসা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের বিমানবাহিনী বলছে মিসাইলটি পতনের আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ১২ হাজার মিটার (৪০ হাজার ফিট) উচ্চতা দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার ডিরেক্টর জেনারেল মেজর বাবর ইফতেখার এই বিষয়ের বিস্তারিত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরার সময় বলেন, "৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪৩ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার ভারতীয় আকাশসীমার ভেতরে উচ্চ গতিসম্পন্ন একটি বস্তুর উড্ডয়ন পর্যবেক্ষণ করে।" "প্রাথমিক উড্ডয়নের পর উড়ন্ত বস্তু হঠাৎ পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং ৬টা ৫০ মিনিটে (পাকিস্তান সময়) মিয়া চান্নুর কাছে পতিত হয়।"

কোন ধরণের মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তা নিশ্চিত করে না বললেও ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি সুপারসনিক মিসাইল বা শব্দের চাইতে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম 'ব্রাহমোস।' ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে 'ব্রাহমোস' মিসাইলের উল্লেখ না করলেও ভারতের সেনাবাহিনীর তিনটি বিভাগই যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এই ধরণের মিসাইল ব্যবহার করে থাকে।

ব্রাহমোস শব্দটি ব্রহ্মপুত্র ও মসকভ, দুটি শব্দ যোগ করে তৈরি। ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও রাশিয়ার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসোর্টিয়াম এনপিও'র যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ব্রাহমোস এরোস্পেসের তৈরি মিসাইল ব্রাহমোস। ব্রাহমোস মিসাইলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২.৮ 'ম্যাক' (ঘণ্টায় প্রায় ৩,৪৫০ কিলোমিটার বা ২,১৪৮ মাইল/ঘণ্টা)। অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম দিয়ে এটিকে থামানো কঠিন।

বিভিন্ন ধরণের রাডার ফাঁকি দিতেও সক্ষম এই মিসাইল। ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে এই মিসাইলটির। এর ২০০ থেকে ৩০০ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক (পারমাণবিক নয়) বহন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই মিসাইলটির সাথে একটি ইঞ্জিন রয়েছে, যেটি জ্বালানি বহন করতে পারে।

মিসাইল নিক্ষেপের প্রথম ধাপে এই ইঞ্জিন অতি উচ্চ গতিতে (শব্দের চেয়ে দ্রুত গতি) মিসাইলটি বহন করে নিয়ে যায় এবং ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর 'র‍্যামজেট' প্রযুক্তি (বিমান উড্ডয়নের এক ধরণের পদ্ধতি) কার্যকর হয়। তারপর মিসাইলটির গতি বৃদ্ধি পায় এবং 'ম্যাক থ্রি' বা শব্দের তিনগুন গতিবেগ অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছায়। এই ধরণের মিসাইলের গতিপথ শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায় না।

২০২০ সালের নভেম্বরে ভারত সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রাহমোসের ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষা চালায়। এই ধরণের মিসাইল মাটি, সাগর ও বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়। ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ব্রাহমোস বিশ্বের একমাত্র মিসাইল যেটি শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ভ্রমণ করে। প্রাথমিকভাবে এটির রেঞ্জ ছিল ২৯০ কিলোমিটার, যেটিকে ৪০০ কিলোমিটারে উন্নীত করতে চায় ভারত।

২০১৯ সালে ভারত যখন ব্রাহমোসের পরীক্ষা শুরু করে, তখন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালানো হয়। এই ধরনের সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল শব্দের গতির পাঁচগুণ গতিতে যেন ভ্রমণ করতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।

ভারত কতগুলো ব্রাহমোস মিসাইল তৈরি করেছে, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্রের কোনো তথ্য না থাকলেও চীনভিত্তিক একটি সংস্থার অনুমান ভারত ১৫ হাজারের বেশি ব্রাহমোস মিসাইল তৈরি করেছে, যার মধ্যে অন্তত ১৪ হাজার মিসাইল ভারতের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • asif ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৮ পিএম says : 0
    Bangladesh er kotogula acche keu bolba?
    Total Reply(2) Reply
    • মো: আশরাফূল আলম ১২ মার্চ, ২০২২, ১১:২০ পিএম says : 0
      বাংলাদেশের ঘোড়ার ডিম আছে
    • Redwan Ahamed Kabir ১৩ মার্চ, ২০২২, ১১:২০ এএম says : 0
      দাদাদের দালালি করতেই জীবন-যৌবন চলে গেলো, বাঙ্গালী মানেই মীর জাফরের দল। নিজের দেশ বিক্রি করে হলেও ক্ষমতায় থাকা চাই। আল্লাহ্‌ এইসব জালিমদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন।

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ