প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কের মাত্র এক চতুর্থাংশ ইউক্রেনকে দিচ্ছে পশ্চিমারা
ব্রিটেনের সানডে টাইমস রোববার জানিয়েছে, এপ্রিলের শুরুর মধ্যে ইউক্রেন পশ্চিম-প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কগুলোর এক চতুর্থাংশের কম পাবে। এতে
তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচনা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে এবং আলোচনায় যুদ্ধ অবসানে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা।
এ ছাড়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব দাবি করেছেন সেগুলো মেনে নেওয়া ‘আত্মসমর্পণের সামিল’ বলেও মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। কিন্তু ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করবে না।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আনতালিয়ায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। এ সময় কুলেবা বলেছেন, ইউক্রেনের মানবিক সংকটের সমাধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ।
তিনি বলেছেন, যদি ফলপ্রসূ আলোচনা এবং সমাধান খোঁজার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তিনি আবারও একই ধরনের বৈঠকে বসার জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
কুলেবা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন দেখা করেন, তখন শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান, ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের দুর্ভোগের সমাপ্তি এবং রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর হাত থেকে আমাদের অঞ্চলগুলোকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
কুলেবা বলেন, এই মুহূর্তে দু’টি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। মারিউপোলে মানবিক করিডোর স্থাপন এবং ২৪ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ক্রেমলিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া সম্ভব নয়, যদি রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্য না থাকে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রুশ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধের অগ্রগতি কী- এই প্রশ্নের জবাবে লাভরভ বলেন, এটি ‘বিশেষ অভিযান’; যা পরিকল্পনা মাফিক চলছে।
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে ‘বিপজ্জনক আচরণ’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন লাভরভ। তিনি বলেছেন, এটি তাদের তথাকথিত নীতি ও মূল্যবোধের বিরোধী।
রাশিয়ার অন্য কোন দেশে আক্রমণ করার পরিকল্পনা রয়েছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করেনি এবং অন্য দেশে আক্রমণের পরিকল্পনা নেই।
সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক প্রমাণ করছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা প্রক্রিয়ার আর কিছুই বাকি নেই। রাশিয়ার দাবি মেটানো না পর্যন্ত ইউক্রেনে অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো দেশে আক্রমণের পরিকল্পনা করিনি এবং ইউক্রেনেও আমরা আক্রমণ করিনি, আমরা সেখানে শুধু কিছু বিষয়ের সমাধান করছি।’
তিনি বলেন, ইউক্রেনে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে তা ‘রুশ ফেডারেশনের জন্য সরাসরি হুমকি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পশ্চিমা শক্তি ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে বিপজ্জনক আচরণ করছে। যার ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
তিনি বলেন, যারা ইউক্রেনে অস্ত্র, পেশাদার সৈন্য পাঠাচ্ছে, তারাই তাদের কাজের জন্য দায়ী থাকবে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সূত্র : আলজাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ও আনাদোলু এজেন্সি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।