বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ ছড়িয়েছে শিক্ষানগরী রাজশাহীর শিক্ষার্থীদের উপরও। এখানে নগরীর বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে আসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। যাদের খুব সংখ্যক আসন সংকুলান হয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে। কলেজের ছাত্রাবাসের সংখ্যা গোনার মধ্যে পড়েনা। ফলে এসব শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ভরসা ছাত্রাবাস ছাত্রীনিবাস। এসব শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য রেখে নগরীর আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রাবাস ছাত্রীনিবাস। সাধ্যের সাথে তালমিলিয়ে নিজ মাথা গোঁজার ঠাই করে নেয় বাইরে থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীরা। অবস্থা সম্পন্নদের সন্তানরা পাঁচ দশ তলা ভবনে ঠাই নিলেও বেশীরভাগ মধ্যবিত্তের ভরসা ছোট ছোট নিবাস। এক ঘরের দু’তিন জনের ঠাই। যাকে বলে কোন রকমে মাথা গোঁজা।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় এদের কষ্টটা আরেকটু বেড়েছে। তিনবেলায় খাবারে বাড়তি কমপক্ষে পঞ্চাশ টাকা গুনতে হচ্ছে। আগে যেখানে সব মিলিয়ে একশো টাকার মধ্যে ছিল খাবার। মেস মালিকরা রান্না করা খাবার সরবরাহ করতো। সকালের নাস্তায় ছিল খিচুড়ি, ভর্তা, কখনো আধা ডিম ভাজা। দুপুরে সপ্তাহে দু’তিন দিন কার্প জাতীয় মাছ, আর মাংস বলতে বেশীরভাগ দিন ব্রয়লার। মাসে দু’দিন দু’একদিন গরুর মাংস। চাল ডাল তেল পেয়াজ গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বাড়ার কথা বলে খাবার দাম বাড়িয়েছে। মেয়েরা নিজেরা রান্না করে খেতে চাইলে নানান ঝামেলা। নি¤œ মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শিক্ষর্থীদের ভরসা ছোট ছোট খাবার হোটেল। মূলত তাদের লক্ষ্য করেই এসব হোটেল করা হয়েছে। হোটেলগুলো পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় এদের খদ্দেরের সিংহভাগ শিক্ষার্থী। তাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন এখানেও খাবারের দাম বেড়েছে। রান্নার মান ও তরকারীর পরিমান কমেছে। আর ডালের ঘনত্ব নেই বল্লে চলে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় নি¤œমানের মশল্লা আর ভোজ্য তেল বলতে পামওয়েল তেল মেশানো সোয়াবিন। দাম বাড়ায় এসব তেলও কম ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে এসব নিম্মামানের খাবার গিলছে। শখের কালাইরুটি, সিঙ্গাড়া, সামুচা, পেয়জু, ফুচকার দাম বেড়েছে আবার আকার কমেছে। বাদাম, বারোভাজার দামেও উত্তাপ। খাবার দাম নিয়ে হোটেলকর্মীদের সাথে খদ্দেরদের মাঝে মাঝে তর্ক বিতর্ক নজর এড়ায়না। অনেক হোটেলের সামনে ঝগড়া এড়াতে খাবারের তালিকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
শুধু খাবার নয় খরচ বেড়েছে কাপড়ের লন্ড্রির, রিক্সার ভাড়া, জুতা পালিশ আর সেলুনেও। মেস মালিকরা আরো সীট ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছেন। তাদের অজুহাত ওয়াসা পানির বিল তিনগুন বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ বিলও বাড়বে। নিজেদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হবে। রাজারহাতার মেসে বসবাসকারী কলেজ শিক্ষার্থী সুমন বলেন, ভাই টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালায়। গ্রাম থেকে কৃষক বাবা কিছু টাকা পাঠান। তাদিয়ে কোন রকমে চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আরো বেশী টিউশনি করতে গেলে লেখাপড়ার উপর চাপ পড়বে। কলেজ ছাত্রী জুসি বলেন, কজন মিলে একটা বাড়ির রুমনিয়ে বসবাস করি। নিজেরা বাজার করে রান্না করি। বাজারে প্রত্যেক জিনিষের দাম বেশী। আমরাও গ্রামের কৃষকের মেয়ে। বাড়তি খরচের চাপটা কৃষক বাবার উপর পড়বে।
নগরীর মনিচত্তরের দক্ষিনে সাহেব বাজার গলিতে বেশকিছু ছোট ছোট খাবার হোটেল রয়েছে। তাদের খদ্দের মূলত শিক্ষার্থীরা। অন্য হোটেলের চেয়ে দাম একটু সাশ্রয়ী বলে শিক্ষার্থীরা ভীড় জমায়। বাজারের শ্রমজীবীরা খাওয়া দাওয়া করেন। এখানকার রবি নামর একজন হোটেল মালিক বলেন, আমরা চেষ্টা করি কম দামে খাবার দেবার। কিন্তু এখন আর পারছিনা। দ্রব্যমূল্যের দাম হোটেল ঘরের ভাড়া কাজের ছেলেদের দিয়ে যা থাকে তাদিয়ে আমাদের সংসারটাও চলেনা। বলতে পারেন অন্যের মুখে খাবার তুলে দিলেও নিজেরা তৃপ্তি করে খেতে পারিনা। তাছাড়া এখানে রয়েছে টিকে থাকার লড়াই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।