Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদের কাছ থেকে নজরদারির প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:১০ এএম

শুধুই পৃথিবীর কাছের কক্ষপথ থেকে কি নিজের দেশের নিরাপত্তার উপর নজর রাখাটা আর যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে মার্কিন সেনাবাহিনী? তাই কি চাইছে নজরদারির ক্ষেত্রটাকে বাড়িয়ে চাঁদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে? আমেরিকার বিমানবাহিনীর একটি ভিডিও-বিবৃতিতে এই প্রশ্নগুলিই জোরালো হয়ে উঠল। জানানো হল, এবার চাঁদের আরও কাছাকাছি এলাকা (মহাকাশবিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘সিসলুনার অরবিট’) থেকে দেশের উপর (পড়ুন, অন্যান্য দেশের উপরেও!) নজরদারি চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যাতে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা অন্যান্য দেশের উপগ্রহগুলি আমেরিকার উপর কী ভাবে কতটা নজর রাখছে, তারও হালহদিশ পাওয়া যায়। সেই নজরদারির দায়িত্বে থাকবে আমেরিকার সেনাবাহিনীর নবগঠিত শাখাÑ ‘স্পেস ফোর্স’। তার শাসনকালের শেষের দিকে যে স্পেস ফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলেন আমেরিকার পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার বিমানবাহিনীর এয়ারফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির (এএফআরএল)-এর ওই ভিডিও বার্তায় বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, ‘‘এখনও পর্যন্ত নজরদারির কাজ আমেরিকার সেনাবাহিনী চালায় ভ‚পৃষ্ঠের উপরে ২২ হাজার মাইল (বা ৩৫ হাজার কিলোমিটার) পর্যন্ত। যেখানে থাকে সব দেশেরই জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলি। এবার তা অতীতের বিষয় হতে চলেছে আমেরিকায়। এবার মহাকাশ থেকে নজরদারির পাল্লা ১০ গুণ বাড়ানো হচ্ছে। যাতে অন্তত এক হাজার গুণ বেশি দূরত্ব পর্যন্ত আমেরিকার সেনাবাহিনীর নজরদারি পৌঁছে যেতে পারে। চাঁদ পর্যন্ত।’’ নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরির জন্য আমেরিকাসহ বহু দেশেরই সামরিক গোয়েন্দা উপগ্রহগুলি এখন মূলত রয়েছে রয়েছে পৃথিবীর ‘জিওস্টেশনারি অরবিট’-এ। যাকে ‘জিওসিনক্রোনাস অরবিট’-ও বলা যায়। বিষুবরেখার উপরে ৩৫ হাজার ৭৮৫ কিলোমিটার (বা, ২২ হাজার ২৩৬ মাইল) দূরত্বে। পৃথিবীর অন্দরের কেন্দ্র থেকে যার দূরত্ব সর্বাধিক ৪২ হাজার ১৬৪ কিলোমিটার। পৃথিবীর নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘোরার জন্য যে সময় লাগে (প্রায় ২৪ ঘণ্টা), জিওস্টেশনারি অরবিটে থাকা উপগ্রহগুলিও ঠিক সেই সময়ই নেয় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে। তার ফলে, পৃথিবী থেকে ওই কক্ষপথে থাকা উপগ্রহ বা মহাকাশযানগুলিকে স্থির মনে হয়। তবে জিওসিনক্রোনাস অরবিটে থাকলে উপগ্রহ বা মহাকাশযানগুলি যে কোনও কোণেই ঝুঁকে থাকতে পারে পৃথিবীর দিকে। তার ফলে, পৃথিবী থেকে তাদের স্থির মনে হয় না। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে জিওসিনক্রোনাস অরবিটের যে ব্যাসার্ধ, তাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘এক জিইও’ ধরা হয়। আর পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০২ কিলোমিটার। অর্থাৎ, ৯.২ জিইও। ফলে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে যত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত জিওসিনক্রোনাস অরবিট, পৃথিবী থেকে তার প্রায় সাড়ে নয় গুণ দূরত্বে রয়েছে চাঁদ। পৃথিবীর জিওসিনক্রোনাস অরবিট আর চাঁদের মধ্যবর্তী এলাকাটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘সিসলুনার স্পেস’ নামে ডাকেন। মহাকাশে এই এলাকায় থাকলে কোনও উপগ্রহ বা মহাকাশযান যেমন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করতে পারে না, তেমনই তাদের উপর এসে পড়ে চাঁদের অভিকর্ষ বলের টানও। বলা যায়, চাঁদ ও পৃথিবীর টানের রেষারেষি চলে ওই এলাকায় থাকা উপগ্রহগুলির উপর। আমেরিকার বিমানবাহিনীর রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে ওই প্রকল্পের প্রধান ব্রায়ান উইডেন বলেছেন, ‘‘প্রথমে জানার চেষ্টা হবে, চাঁদের আরও কাছাকাছি ওই এলাকা জুড়ে কোন কোন দেশের তৎপরতা কেমন। তার পর খতিয়ে দেখা হবে ওই এলাকায় অন্য দেশগুলির কাজকর্ম, গবেষণা আমেরিকার নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কি না, হলে তা কী কী ভাবে হচ্ছে।’’ রয়টার্স, এপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ