Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুন্নাত : রাসূল (সা.)-কে ভালোবাসার সোপান

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রষ্ঠ রাসূল, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, আকায়ে নামদার, সারওয়ারে কায়েনাত, সারকারে দো আলম, তাজদারে মদিনা, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। এ কথাটি বলতে বলতে এবং শুনতে শুনতে আমরা এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, এর সুগভীর মর্ম অনুধাবনে যথেষ্ট উদাসীন হয়ে গেছি। মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনের চিন্তা ও মানসিকতা কেমন হওয়া উচিত, উপলব্ধি ও অনুভূতি প্রকাশ কেমন হওয়া উচিত, বাহ্যিক আচার ও তৎপরতা কেমন হওয়া উচিত, নিজের ও অন্যের ক্ষেত্রে পছন্দ ও সিদ্ধান্তগত সমন্বয় বিধানের দিকটি কেমন হওয়া উচিত, এ সবকিছুর সুবিন্যস্ত সুসামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ও বাস্তব উদাহরণ হিসেবে যাঁর জীবনের প্রতিটি উপদেশ, নির্দেশ, কর্ম ও কাহিনী আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট অনুসরণীয় আদর্শ তিনিই তো আল্লাহর হাবীব, আমাদের জীবনযাপন, পরিবার-পরিজন থেকেও প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ চৈন্তিক, আচরণিক, মানবিক ও ব্যবহারিক জীবনাদর্শকেই আমরা সুন্নাহ বা সুন্নাত বলে থাকি। আর এই সুন্নাতসমূহকে নিজেদের জীবনে ধারণ ও পালন করার অর্থই হলো নবীর সুন্নাতের অনুসারী হওয়া বা এক কথায় রাসূল (সা.)-এর অনুসারী হওয়া।

রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসারী হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। কোনো অমুসলিম যদি রাসূলের কিছু কিছু নীতি ও আচরণকে অনুসরণ করেও, তবুও তাকে সুন্নাতের অনুসারী বলা যাবে না। কারণ, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাসীই নয়, অর্থাৎ মুমিন নয়। অতএব, পৃথিবীর সমস্ত মুমিন ও মুসলিমই রাসূল (সা.)-এর অনুসারী; কেননা, রাসূল (সা.)-এর সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্নাতটিই হচ্ছে ঈমান। ঈমানের পাশাপাশি নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ আল্লাহর অনেক বিধান ও নির্দেশ রয়েছে, যা আমাদের জন্য ফরজ আমল এবং এসব ফরজ বিধানসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের মাধ্যমেই আমাদের নিকট এসেছে। রাসূল (সা.) নিজে আমল করে আমাদের শিখিয়েছেন বলেই আমরা শিখেছি এবং আমাদেরও আমল করতে বলেছেন বলেই আমরা আমল করি। অতএব, এসব বিধান আল্লাহর পক্ষ হতে আরোপিত ফরজ হওয়ার পাশাপাশি রাসূলের নির্দেশিত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রƒপ রাসূলের জীবনাচার থেকে পাওয়া অন্য সব সুন্নাত আমাদের জন্য সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ না হলেও নিদর্শনস্বরূপ; যা আমাদের জন্য অনুকরণীয় করে দিয়েই পবিত্র কোরআনে একে ‘উসাওয়াতুন হাসানাহ’ বা উত্তম আদর্শ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব রাসূল (সা.)-এর যে কোনো সুন্নাতের অনুসরণ আল্লাহর নিদর্শন ও নির্দেশনারই অনুসরণ। রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতকে নানা আঙ্গিক থেকে বিশ্লেষণ ও বিন্যস্ত করা যায়।

প্রথমত ধরে নেয়া যায় সুন্নাত দুই প্রকার :
এক. আল্লাহর সমস্ত বিধান, যা রাসূল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন ও বুঝিয়েছেন, শিখিয়েছেন, করে দিয়েছেন এবং করতে বলেছেন। এগুলো আল্লাহরও বিধান এবং রাসূল (সা.)-এরও সুন্নাত।
দুই. রাসূলের নিজস্ব রুচি বৈশিষ্ট্য ও জীবনাচার, যা আল্লাহই মানব জাতির অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে রাসূল (সা.)-এর সত্তা ব্যক্তিত্ব ও জীবনের সঙ্গেই জুড়ে দিয়েছেন। রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন, শিখিয়েছেন এবং ‘উত্তম আদর্শ’ বা ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বিশেষণে কোরআনে উল্লেখ করেছেন এবং মানুষকে তা অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছেন।

দ্বিতীয় প্রকার সুন্নাত অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর জীবনাচার থেকে পাওয়া সুন্নাতকেও প্রথমে দুটো ভাগে ভাগ করে নেয়া যায় :
এক. পরোক্ষ সুন্নাত। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি-উপলব্ধি, বিশ্বাস-বিবেচনা, মন-মানসিকতা, বিবেক ও বিচার-বুদ্ধির ধারণ-ধরন, প্রকাশ ও প্রয়োগের দৃষ্টি-গতি, আন্দাজ-মেজাজ ও মাত্রা।

দুই. প্রত্যক্ষ সুন্নাত। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর কথা-কাজ-নির্দেশ, আচার-আচরণ-তৎপরতা, রুচি-পছন্দ-আগ্রহ-অভ্যাস, আদেশ-আকাক্সক্ষা, পরামর্শ, নির্দেশনা ও সমর্থন।



 

Show all comments
  • Shofiqur Rahaman ৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
    ‘সুন্নাত’ হলো নবী কারিম (সা.) যে অবস্থায় যে কাজ যতটুকু গুরুত্বসহকারে করেছেন বা ছেড়েছেন, সে অবস্থায় সে কাজ ততটুকু গুরুত্বসহকারে করা বা ছাড়া। অনুরাগে নবীজির প্রতিটি কাজ অনুকরণ করা।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের খাঁন ৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ (সা.) যা যা করেছেন, সবই সুন্নাত। তাঁর জীবনের প্রধান অবলম্বন ছিল সত্য, পবিত্রতা ও প্রেম। সত্যবাদিতার জন্য তিনি আশৈশব ‘আল আমিন’ অর্থাৎ সত্যবাদী, বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত উপাধি পেয়েছিলেন। আজীবন কোনো শত্রুও তাঁকে কখনো মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেনি।
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
    ইসলাম পবিত্র ধর্ম। চিন্তায়, মননে, বিশ্বাস ও কর্মে সব ক্ষেত্রেই এর পরিধি বিস্তৃত। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে এটি পরিব্যাপ্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • কুদ্দুস তালুকদার ৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৯ এএম says : 0
    নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা মুমিনের ইমান; সুন্নাতের অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩, আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ৬ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৯ এএম says : 0
    জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীজি (সা.)–এর সুন্নাত আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করাই ইসলাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন