Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আগামী বছরের সিটি নির্বাচন নিয়ে বরিশাল নগরবাসী অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছে

জাতীয় পার্টি আগাম প্রার্থী ঘোষনা করলেও জনমনে প্রভাব নেই প্রধান দুটি দলেরই প্রার্থী বাছাই নিয়ে অনিশ্চয়তা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২২, ৩:৪৫ পিএম

আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগেই বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে মহানগরবাসি অপেক্ষার প্রহন গুনতে শুরু করেছেন। তবে ২০১৮ সালের বরিশাল সিটি’র ৪র্থ নির্বাচনের মত আগামী বছরের ভোট গ্রহন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ কৌতুহল ও আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সহ নগরবাসীর মধ্যেও। যদিও আসন্ন এ নির্বাচন নিয়ে মূল বিরোধী দল বিএনপি’র মধ্যে এখনো কোন আগ্রহ লক্ষনীয় নয়। তবে দলটির প্রার্থী নিয়েও এবার নানামুখি অনিশ্চয়তা কাজ করছে। পাশাপাশি ক্ষমতাশীন মহাজোটের প্রার্থী বাছাই নিয়েও কৌতুহল রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল সহ সাধারন নসগরবাসির মধ্যেও।

তবে জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষনা করলেও এ নগরীর সাধারন ভোটারগন দলটির কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা না করাকে এখনো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিগত সিটি নির্বাচনে ইকবাল হোসেন তাপসকে মনোনয়ন দিয়ে মাঝ পথে ভোটের লড়াই থেকে সড়ে দাড়ানোর ঘোষনা দেয় জাতীয় পার্টি। তবে প্রার্থী ইকবাল পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় প্রতিক নিয়েই মাঠে ছিলেন ভোটের দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত। এমনকি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোটের মাঠে থাকায় তাকে বহিস্কার করা হলেও আগামী নির্বাচনের এক বছর আগেই তাকে পুনরায় দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করা হয়েছে।।
তবে জাতীয় পার্টির এ সিদ্ধান্তে জনমনে কোন প্রভাব না পড়লেও ‘দলীয় পূর্ণ সমার্থন ও সিদ্ধান্ত নিয়েই আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া’র কথা জানিয়েছেন ইকবাল হোসেন। তার মতে, ‘জাতীয় পার্টি এখন অনেক সংহত ও শক্তিশালী বিরোধী দলের ভ’মিকাতেই রয়েছে। আর সে আলোকেই আগামী বরিশাল সিটি নির্বাচনে তার দল অংশ নেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে শাষক মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মত সাধারন মানুষের মধ্যেও ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন ও কৌতুহল কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেও নানা মহল তৎপড় বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় একটি বড় অংশই আগামী সিটি নির্বাচনে বরিশালের মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে বলে জানা গেছে। তবে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আবারো মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে দৃড় আশাবাদী। আর এ লক্ষ্যে দলে তার পক্ষেও শক্তভাবে কথা বলার মত নেতা আছেন। তবে সম্প্রতি বরিশালে প্রশাসন ও পুলিশের সাথে মেয়ারের অপ্রীতিকর ঘটনা সহ দুরত্ব বৃদ্ধির বিষয়টি সহ সার্বিক দিক বিবেচবনায় নিয়েই দলীয় সভানেত্রী চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
বরিশাল মহানগরীতে ভোটের দামামা না বাজলেও বিষয়টি নিয়ে নিরবে অনেকেই সক্রিয়। ভোটারদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহন থেকে শুরু করে দায়িত্ব গ্রহনের পরে সাধারন ভোটারগন বর্তমান নগর পরিষদের কাজের হিসেব রাখছেন। লক্ষ্য রাখছেন উন্নয়ন কর্মকান্ড সহ ভালÑমন্দ সব কিছুরই। বর্তমান নগর পরিষদ কতটা ‘জনগনের দ্বারা এবং জনগনের জন্য’ সে বিষয়টি আগামীতে মূখ্য ভ’মিকা রাখতে পাড়ে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে জনগনের মতামত আগামী বছরের ভোটে প্রতিফলনের সুযোগের ওপরই সব কিছু নির্ভর করবে বলেও মনে করছেন মহলটি।
এমনকি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল সহ সাধারন মানুষ তাকিয়ে আছেন আগামী নির্বাচন কি বিগত সিটি ও জাতীয় নির্বাচনের আদলে হবে, না পরিস্থিতির ইতিবাচক কোন উন্নতি ঘটবে সে দিকে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থী কে হবেন তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।
উপরন্তু সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশন-এর অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহনের মনোভাবের ওপরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নির্ভর করতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
পাশাপাশি বিএনপি সহ সমমনা জোটের প্রার্থী নিয়েও যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ইতোপূর্বে এ সিটি নির্বাচনে মুজিবুর রহমান সারোয়ার ও আহসান হাবীব কামাল বিএনপি সহ জোটের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু এদুজনই দলটির স্থাণীয় রাজনীতিতে কিছুটা কোনঠাশা। এমনকি সদ্য গঠিত বরিশাল মহানগর ও দুটি সাংগঠনিক জেলার আহবায়ক কমিটির অনেকেই এ দুজনকে কোন নির্বাচনে না চাইলেও তাদের বিকল্প কোন প্রার্থী তারা দিতে পারবেন বলেও মনে করছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
তবে আসন্ন বরিশাল সিটি ও সদরের সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি সহ তাদের জোট যে নানামুখি সংকটে পড়তে যাচ্ছে সে বিষয়টিও ইতোমধ্যে সাধারন মানুষের মধ্যে পরিস্কার হতে শুরু করেছে। ১৯৭৩ সালের জতীয় নির্বাচন পরবর্তি ভোটগুলোতে বরিশাল সদর আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। ১৯৯১-এর ডিসেম্বরে ও ১৯৯৮-এর আগষ্টে সদর আসনের দুটি উপনির্বাচন এবং ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদীয় আসন ও ২০০৩ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হন দলটির সদ্য বিদায়ী মহানগর সভাপতি মুজিবুর রহমান সারোয়ার। ২০১৩’র সিটি নির্বাচেনেও বিএনপি প্রার্থী কামাল বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮-এর সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে সারোয়ার দলীয় প্রার্থী হলেও সকাল ১১টার পরেই মহাজোটের প্রার্থী বাদে সবাই ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।
তবে মুজিবুর রহমান সারোয়ারের বিপক্ষে বরিশালে ও কেন্দ্রে দলের অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলেও এখনো যথেষ্ঠ সক্রিয়। অথচ সব প্রতিকুলতার মধ্যেও বরিশালের রাজনীতির মাঠে ইতোপূর্বে তিনি সংগঠনিক কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম ছিলেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এতদিনের ‘বিএনপির শক্ত ঘাটি বরিশাল’এ তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি কোন পর্যায়ে থাকে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
তবে আগামী বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ইতোমধ্যেই ক্ষন গণনা সহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার পাশাপাশি সব কিছুই মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু আগামীতে ভোট গ্রহন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তার ওপরই সব কিছু নির্ভর করবে বলেই ধারনা সবার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ