বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আরবি সিজদাহ শব্দটির দু’টি অর্থ আছে। যথা : (ক) ইনহিনাউর রা’ছি অর্থাৎ সমস্ত অবনত করা, (খ) ওয়াজহুল কিবহাতি আলাল আরদ্বি অর্থাৎ কপালকে মাটিতে স্থাপন করা। এই উভয় প্রকার অঙ্গ সঞ্চালন একমাত্র আল্লাহপাক ছাড়া অন্য কোনো কিছুর প্রতি নিবেদন করা ইসলামী শরীয়তে হারাম ও চির নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহপাক ছাড়া অন্যকে সেজদাহ করা সর্বই হারাম।
এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না’। (সূরা জ্বিন : ১৮)। অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু করো, সিজদাহ করো, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো এবং ভালো ও নেকআমল করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে। (সূরা হজ্জ : ৭৭)।
এই আয়াতদ্বয়ের প্রথমটির মূল নির্দেশ হচ্ছে এই যে, মসজিদসমূহ কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার এবাদতের জন্যই নির্মিত। সুতরাং মসজিদে গমন করার পর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য সমীচীন নয়। যেমন ইহুদী খৃস্টান ও পৌত্তলিকরা তাদের উপাসনালয়সমূহে এই শ্রেণির শেরেকী ও অংশীবাদী কাজে লিপ্ত হয়। এজন্য মুমিন মুসলমানদেরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে হবে এবং ইহুদী খৃস্টান ও মুশরিকদের বিপরীতে মসজিদ সমূহকে সকল শ্রেণির আবিলতা হতে বিমুক্ত রাখতে হবে। (তফসীরে মায়ারেফুল কুরআন)
আর দ্বিতীয় আয়াতটির মূল মর্ম হচ্ছে এই যে, রুকু করা সেজদাহ করা এবং আল্লাহর এবাদত করার উত্তম স্থান হচ্ছে মসজিদসমূহ। এজন্য এ সকল পবিত্র স্থানসমূহে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করা একান্তই শেরেকী কাজ। এই কাজ থেকে মুমিন মুসলমানদেরকে সার্বিকভাবে পবিত্র ও মুক্ত থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একাদা আমি একই সাওয়ারীর উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। আমার এবং তাঁর মাঝে হাওদার হেলানদেয়ার কাঠ ছাড়া আর কোনো ব্যবধান ছিল না। তিনি (আমাকে সম্বোধন করে) বললেন : হে মুয়ায? তুমি কি জান, বান্দাহদের ওপর আল্লাহপাকের কী হক (অধিকার) আছে এবং আল্লাহ তায়ালার ওপর তাঁর বান্দাহদের কী হক আছে?
আমি বললাম, এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত আছেন। তিনি বললেন : নিশ্চয়ই বান্দাহর ওপর আল্লাহ তায়ালার হক এই তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহপাকের ওপর বান্দাহর হক এই যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোনো জিনিসকে শরীক করবে না, আল্লাহপাক তাকে শাস্তি দিবেন না। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল? আমি কি লোকজনকে এই সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন : না, তুমি তাদেরকে এ সংবাদ দিও না। কারণ তাহলে তারা এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে (আর কোনো কাজ করবে না)। (সহীহ বুখারী : ৪/২৮৫৬)।
বস্তুত: কোরআনুল কারীম গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করলে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের শরীয়তে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সেজদাহ করা বৈধ ছিল। যেমন : (ক) হযরত আদম (আ.) কে সেজদাহ করার প্রতি ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (খ) হযরত ইউসুফের পিতা মাতা ও ভ্রাতৃবৃন্দ মিশরে পৌঁছার পর হযরত ইউসুফ (আ.)-কে সেজদাহ করে ছিলেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইসলামী শরীয়তে পূর্বে প্রচলিত সকল প্রকার শিরেকী ও সম্মান সূচক সিজদাহকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এতদসংক্রান্ত পূর্ববর্তী নির্দেশসমূহ রহিত ও বাতিল করা হয়েছে।
কেননা শরীয়তে মোহাম্মাদী অবিনশ্বর ও চিরন্তন শরীয়ত। তাঁর মাধ্যমেই নবুওয়াত ও রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং তাঁর শরীয়তই যেহেতু সর্বশেষ শরীয়ত, সেহেতু একে বিকৃতি ও মূলচ্যুতি থেকে বিমুক্ত রাখার জন্য প্রতিটি ক্ষতিকর ছিদ্রপথই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে শিরক ও পৌত্তলিকতা প্রবেশ করতে না পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেসব বিষয় শরীয়তে মোহাম্মাদীতে হারাম ঘোষিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।