বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের সূচনাকাল থেকেই এ ধর্মকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র চলে আসছে। যুগে যুগে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। যুদ্ধের মাধ্যমে, ভুয়া নবুওয়্যাত দাবির মাধ্যমে, কুযুক্তি ও অপপ্রচার প্রভৃতি ভোতা অস্ত্র ব্যবহার করে যারাই ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে তারাই একসময় ধ্বংস হয়ে গেছে। সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ইসলামের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে এবং ২০৬০ সালে তাদের সংখ্যা ৩০০ কোটি হবে বলে প্রকাশিত ও বর্ণিত পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। গতিধারা প্রতিহত করার সকল ষড়যন্ত্রজাল ছিন্ন করে ইসলাম যে দ্রুতগতিতে আগোয়ান সেদিকে কোরআনের সূরা ‘তওবা’ ও সূরা ‘ছফ’-এ তার ইঙ্গিত রয়েছে, যা ইসলামের দুশমনদের জন্য সতর্কবাণীও বটে।
আয়াতের মর্মকথা হচ্ছে, ‘শত্রুরা যত বিরুদ্ধাচারণই করুক না আল্লাহর নূর কখনো নির্বাপিত করতে পারবে না। অর্থাৎ তারা ইসলামের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। সূরা তওবাহয় আল্লাহ বলেন : তারা তাদের মুখের ফুৎকার আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। (আয়াত : ৩২)।
আয়াতে আল্লাহর নূর বলতে দ্বীন ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। তিনি তাঁর দ্বীনি ইসলামকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, তা কাফের মুশরেকদের যতই মর্মপীড়ার কারণ হোক না কেন। আল্লাহ সূরা ‘ছফ’-এর ৮ নং আয়াতেও একই কথা বলেছেন। আল্লাহর উক্তির সত্যতা সর্বকালেই প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের ক্ষতিসাধন করতে গিয়ে কেউ সফল হয়নি, ইসলামকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় যারা লিপ্ত হয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে, ইতিহাস তার সাক্ষ্য।
রাজনৈতিক-প্রশাসনিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করলেও ইসলামকে নির্মূল করার অভিযানে অবতীর্ণ হয়ে যারা সাময়িক সফল হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তাদের সে সফলতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সেসব ঘটনার বিবরণ দান করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, তবে মনে রাখতে হবে, ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ও তার ক্ষতি সাধনকারীদের পরিণতি মোটেই সুখকর নয়।
মহানবী (সা.) সকল মানবের প্রতি নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত, কোরআনে যার বর্ণনা রয়েছে। তিনি সর্বশেষ নবী এবং তাঁর প্রতি অবতীর্ণ সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কোরআন। এ কোরআনের ভিত্তিতে প্রবর্তিত ধর্ম ইসলাম, সমগ্র মানবের জীবন-বিধান, যাতে কোনো অপূর্ণতা নেই। রসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের সময় খোদ আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (ধর্ম)-কে পরিপূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পন্ন করলাম এবং দ্বীন (ধর্ম) হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদাহ)।
এ ঘোষণা দ্বারা ইসলামকে সমগ্র মানবের জন্য পরিপূর্ণ এবং পূণার্ঙ্গ জীবনবিধান রূপে মনোনীত করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্যগুলোর তাৎপর্য ফুটে উঠবে। দেখা যাবে, প্রতিটি বিধি-বিধানে অজস্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অপর কোনো ধর্মে পাওয়া যাবে না। উদাহরণস্বরূপ একটি মাত্র বিষয়ের কথা ধরা যাক, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এইভাবে : ‘সত্য রক্ষা করে এবং মিথ্যা ধ্বংস করে’।
এ হাদিসের ব্যাখ্যা করলে মানবজীবনের অসংখ্য দিক বের হয়ে আসবে। যেমন বলা হয়েছে : ‘আসসিদকু ইউনজি’-সত্য রক্ষা করে। এ সত্য-সত্যবাদিতার ক্ষেত্র এত ব্যাপক প্রশস্ত যে, এ বিষয়টি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এক অপরাধী ব্যক্তিকে রসূলল্লাহ (সা.) কেবল সত্য কথা বলার উপদেশ দিয়েছিলেন, সে ব্যক্তি সত্যের অনুসরণ করতে গিয়ে সকল প্রকারের অপরাধ ত্যাগ করে খাঁটি মুসলমানে পরিণত হয়েছিল।
‘ওয়াল কিযবু ইউহলিকু’-মিথ্যা ধ্বংস করে। অর্থাৎ মিথ্যাচারী ব্যক্তি যে কোনো প্রকারেই মিথ্যাচারে লিপ্ত হোক না কেন, তা একসময় তার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। আর এ মিথ্যাচারের রয়েছে হাজারো শাখা-প্রশাখা, যা মানবজীবনকে বেষ্টন করে রেখেছে। জীবনের সর্বস্তরে মিথ্যাচারিতার প্রাদুর্ভাব বহু সর্বনাশ ডেকে আনে। অনুরূপভাবে ইসলামের প্রত্যেকটি বিধিবিধানই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গক্রমে সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নং আয়াতটি স্মরণযোগ্য, যাতে আল্লাহ বলেন : যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে কস্মিনকালেও গ্রহণ করা হবে না। বিভিন্ন সহীহ হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন : আজ যদি হযরত মূসা (আ.) জীবিত থাকতেন, তবে তাঁর পক্ষেও আমার অনুসরণ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন : ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হযরত ঈসা (আ.) যখন অবতরণ করবেন, তখন নবুওয়াতের পদে সমাসীন থাকা সত্ত্বেও তিনি আমার শরীয়তেরই অনুসরণ করবেন।
উলাময়ে কেরাম বলেন : রসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পর পূর্ববর্তী সব ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। এখন পূর্বেকার ইসলাম আর ইসলাম নয় বরং হুজুর (সা.)-এর মাধ্যমে যা পৃথিবীতে পৌঁছেছে তাই হচ্ছে ইসলাম। এ ধর্মই বিশ্ববাসীর মুক্তির উপায়। আলোচ্য আয়াতে এ ধর্ম সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অবলম্বন করে তবে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণীয় নয়। (মাআরেফুল কোরআন)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।