বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ভিজুয়্যাল ক্যাপিটালিস্ট সূত্রের বরাতে বিশ্বের ধর্মের মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর প্রধান প্রধান ধর্মের ধর্মীয় গঠনের বিষয় বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেছে ভিজুয়্যাল ক্যাপিটালিস্ট। পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বের ধর্মগুলোকে সাতটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে, যার মধ্যে পাঁচটি প্রধান ধর্ম (খ্রিষ্টান, ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু এবং ইহুদি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বলা হয়, দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ইসলাম। বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা ২০১৫ সালের ১৮০ কোটি থেকে বেড়ে ২০০ কোটি ৭৬ লাখে উন্নীত হবে ২০৫০ সালে!
এ তথ্য মুসলমানদের জন্য উৎসাহজনক নিঃসন্দেহে। তবে অন্যদের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণও হতে পারে। যারা নানাভাবে বিরুদ্ধাচারণ করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চক্রান্তের জাল বিস্তার করে রেখেছে, ইসলামের দ্রুত বর্ধনশীলতায় তাদের হয়তো উৎকণ্ঠিত ও বিচলিত করবে। ইসলামের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর লক্ষ্যে আরো হয়তো নব নব চক্রান্ত হবে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যানে ইসলাম ধর্মের দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ার বার্তা ইসলামবিদ্বেষীদের ঘরানাগুলোতে শোকের মাতম সৃষ্টি করলে তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না এবং মুসলমানদেরও আনন্দে আত্মহারা হবার কিছুই নেই। কেননা ইসলামের গতি-প্রকৃতি কি, তা মুসলমানদের অজানা নয়। তারা ভালোভাবে জানে, যা ইসলামই ঘোণনা করেছে : ‘আল-ইসলামু ইয়ালু, ওয়ালা ইউলা’, অর্থাৎ ইসলাম স্বভাব ধর্ম এর গতি-প্রকৃতি ঊর্ধ্বমুখী বর্ধনশীল।
এর মধ্যে নিম্নমুখিতা নেই; একে নিম্নমুখী করা যায় না। আগুনের সঙ্গে এর তুলনা করা যায়। আগুনের গতি ঊর্ধ্বমুখী, একে নিম্নমুখী করা যায় না। ইসলামের অপ্রতিরোধ্য গতি থামিয়ে রাখা যাবে না। ইসলামবিদ্বেষী শক্তিবর্গ সূচনাকাল থেকে এ ধর্মকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে আত্মনিয়োগ করেছে, অপর কোনো ধর্ম এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন সার্বক্ষণিকভাবে হয়েছে বলে প্রমাণ নেই। ইসলামের অগ্রযাত্রা সকল বাঁধা-বিপত্তির মোকাবিলা করেই অগ্রসরমান।
আলোচ্য পরিসংখ্যানে ইসলামের দ্রুত বর্ধনশীলতার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। ইসলামের অগ্রযাত্রার পথে কি কি প্রতিবন্ধকতা সক্রিয় রয়েছে, সে বিষয়গুলো বর্ণিত থাকলেও ভালো হতো। তাতে মুসলমানগণ সেসব প্রতিবন্ধকতার সুরাহা কিভাবে করা যায়, সেটা স্থির করার কথা ভাবতে পারত।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আল্লাহদ্রোহী ও ইসলামীবিদ্বেষীরা আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করার এবং ইসলামকে নিশ্চিহ্ন ও মুছে ফেলার যে বহুমুখী ষড়যন্ত্রজাল ছড়িয়ে দিয়েছে সেগুলোর মোকবেলা করে মুসলমানগণ ইসলামকে রক্ষা করে চলেছেন। অপশক্তির সামনে ইসলামের শক্তি দুর্বল বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই যে, ইসলামের প্রতিপক্ষও তার সত্যতা স্বীকার করে। ইসলাম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে : ‘আল-হক্ক’ুমা শাহিদাত বিহিল আ’দাউ’। অর্থাৎ শত্রুরাও সত্যের প্রতি সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। আলোচ্য পরিসংখ্যান মুসলিম কর্তৃক রচিত নয়, অমুসলিম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এবং বলা যায় তা মুসলিম পণ্ডিতগণ দ্বারা প্রভাবিতও নয়। তাই সংশ্লিষ্টরা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, ইসলামের নবীর অবমাননা-গোস্তাখি, কোরআন-হাদিসের বিকৃতি-অপব্যাখ্যা, ইসলাম সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি প্রভৃতি অসংখ্য বিষয় ইসলামবিদ্বেষীদের আনন্দদায়ক অপতৎপরতা। তথ্যানুযায়ী যারা অহরহ ইসলামের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত, তাদের প্রচারমাধ্যমগুলো হাজার হাজার ভলিউম বই-পুস্তক-পুস্তিকা প্রচারপত্র প্রভৃতি প্রচার করছে এবং সেই প্রচারধারা অব্যাহত রেখেছে।
এটা মুসলমানদের সবার জানা না থাকলেও তাদের বলিষ্ঠ প্রচারমাধ্যমের অভাবে অপপ্রচারের এ ধারা মোটেই থামছে না। ফলে মুসলমানগণ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। আরব বিশ্বের সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যমগুলোতে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু তথ্য এলেও ভাষা সঙ্কটের কারণে সেগুলোও আমাদের মতো দেশের মুসলমানগণ জানতে পারে না। আবার ইসলামের বিরুদ্ধে এসব প্রচার-প্রচারণার জবাব দেয়ার মানসিকতাও অনেকেরই নেই। ফলে ইসলামবিদ্বেষীরা খোলা মাঠেই বিনা প্রতিবন্ধকতায় তাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত অবাধে চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।