Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্য হাতির জন্য গারো পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে ‘অভয়ারণ্যে’

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম

হাতি ও মানুষের দ্বদ্ব নিরসনে শেরপুরের গারো পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে বন্য হাতির জন্য ‘অভয়ারণ্যে’। ইতোমধ্যে জমি নির্ধারণ ও মালিকানা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করছে বন বিভাগ। পাশাপাশি জবর দখলে থাকা বনভূমিও উদ্ধারে কাজ করছে।

জানা যায়, জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত গারো পাহাড়। এক সময় এই বনাঞ্চলে অবাধে ঘুরে বেড়াতো বন্য হাতির দল। কিন্তু পাহাড়ে মানুষের দিন দিন বসতি করায় বন্ধ হয়ে যায় হাতি চলাচল। এতে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নামে হাতির দল, তখনই শুরু হয় হাতি মানুষের দ্ব›দ্ব। এ দ্ব›েদ্ব গত তিন মাসের ব্যবধানে গারো পাহাড়ে চারটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। এনিয়ে গত ১৫ বছরে নানা কারণে প্রায় ৩০/৩৫টি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। বিপরীতে বন্য হাতির আক্রমণে জেলায় প্রায় ৯০ জন মানুষ মারা যায়। আর আহত হন শতাধিক মানুষ। কিন্তু শ্রীবরদীর মালাকোচা এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে একটি হাতি হত্যায় এবারই প্রথমবারের মতো মামলা হয়। এই মামলায় চারজনই কারাগারে যান।

অবশেষে হাতি মানুষের দ্ব›দ্ব নিরসনে গারো পাহাড়ের সীমান্ত দিয়ে তৈরি হচ্ছে বন্য হাতির ‘অভয়ারণ্যে’। ইতোমধ্যে জরিপ কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। স্থানীয়দের আশা, হাতিদের জন্য অভয়ারণ্যে হলে কৃষকদের ফসলের কোন ক্ষতি হবে না, পাশাপাশি বাড়ি-ঘরে হামলা করবে না হাতির দল।

বালিজুড়ি এলাকার কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘বাপু হাত্তি (হাতি) যদি আমগর (আমাদের) হইতি (এদিকে) না আহে (আসে), তাইলেতো ভালাই হবো, আঙগর (আমাদের) কোন ক্ষতি হবো না। সরহার (সরকার) যে সিস্টেম (উদ্যোগ) হাতে নিছে খুব বালা (ভালো) হবো।’

একই এলাকার আরেক কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘হুনতাছি (শুনতেছি) হাত্তির (হাতি) জন্য রাস্তা করবো, যদি রাস্তা করে তাহলেতো বালাই (ভালো) হবো, আমরা শান্তিতে এল্লা (একটু) ঘুমাবার পামু, আমাদের ঘরে আর হাত্তি (হাতি) আইবো না।’

ঝিনাইগাতীর ছোট গজনী এলাকার বাসিন্দা আছমত আলী, সরুফা বেগম ও লাল চাঁন জানান, এ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই হাতির দল আসে, এজন্য বেশিরভাগ সময় এ এলাকার মানুষ রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। যদি অভয়ারণ্যে হয় খুব ভালো হবে।

ছোট গজনী এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘ভাই খুব একটা ভালো খবর দিলেন, আমরা খুব খুশি। কারণ আমাদের এ এলাকা গজনীর পাশাপাশি, এজন্য প্রায় প্রতিদিনই হাতির দল আসে এবং হানা দেয় বাড়ি-ঘরে। পরে আমরা ঢাক, ঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে তাড়া দেই।’

নালিতাবাড়ীর পানিতাহা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘মেলা দিন (অনেক দিন) ধইরি হুনতাছি (শুনতেছি) হাত্তির (হাতি) জন্য আস্তা (অভয়ারণ্যে) হবো, কই হয় না তো, এল্লে (এগুলো) হুদাই। যদি আস্তা (অভয়ারণ্যে) হয় তাহলেতো বালাই (ভালো) অইবো (হবে)।’

প্রকৃতি ও পরিবেশ বাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মেরাজ উদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে গারো পাহাড়ে অভয়ারণ্যে করার জন্য দাবি করে আসছিলাম, অবশেষে সীমান্তে অভয়ারণ্যে করার ঘোষণা এসেছে, এতে আমরা খুব খুশি। আশা করি, দ্রæত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে।

শ্রীবরদীর বালিজুড়ি রেঞ্জ ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বালিজুড়ি, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী পর্যন্ত হাতির জন্য অভয়ারণ্যে হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা জমি নির্ধারণ ও মালিকানা চিহ্নিত করার কাজ করছি। পাশাপাশি অবৈধভাবে জবর দখল করে থাকা জমিগুলোও উদ্ধার শুরু করেছি। আমরা আশা করি, গারো পাহাড়ের যে একটা ঐতিহ্য তা খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে ফিরে আসবে।’

জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদ বলেন, অভয়ারণ্যের প্রস্তাবটি পাস হয়ে বন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বন বিভাগে রয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু করেছে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, হাতি-মানুষের যে একটা দীর্ঘদিনের সংঘাত তা শেষ হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভয়ারণ্যে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ