রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মিজানুর রহমান তোতা
বীজ হচ্ছে ফসলের প্রাণশক্তি। উন্নতমানের বীজ কৃষি বিপ্লবের মূল উৎস। খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার প্রথম ধাপও হচ্ছে কর্মবীর কৃষকদের উন্নতমানের ও চাহিদানুযায়ী বীজের নিশ্চয়তা। বিএডিসির ভিত্তি বীজ ছাড়া কৃষক যে বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন তা যথাযথ মানসম্মত হয় না সবসময়। কৃষকরা খুব সহজে সাধারণত উন্নতমানের বীজ পান না। এ অভিযোগ প্রায়ই উচ্চারিত হয়। যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ফসলের ফলন আশানুরূপ হয় না। বিএডিসি মোট চাহিদার ১৫ ভাগ বীজ সরবরাহ করতে পারে। আমদানিও হয়, যার মান সবসময় ভালো হয় না। দেশেই বীজ উৎপাদন, বিপণন এবং বীজ সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার জাতীয় বীজাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ। এই অভিমত, কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও বীজ গবেষকদের। তাদের মতে, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মাটি ও ফসলের স্বার্থেও বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের আরো যতœবান হওয়া উচিত। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি আবাদ মৌসুমেই বীজ সংকট মোকাবিলা করতে হয়। চলতি আমন ধান বীজের ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দেয়। সামনের বোরো আবাদের সময়ও কাড়াকাড়ি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বিএডিসি বীজের। সবজি, ভুট্টা, গমসহ প্রায় সব ফসলের বীজও অনেকটা আমদানি-নির্ভর হচ্ছে দিনে দিনে। অথচ সংশ্লিষ্টদের সূত্রমতে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হলে খুব সহজেই বীজের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। দেশে চাহিদানুযায়ী বীজ উৎপাদনের যথেষ্ট সুযোগও বিদ্যমান। সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু নানা কারণে সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে না। কেন লাগানো হচ্ছে না তা তদন্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। গতানুগতিক ধারায় চলছে বিএডিসির বীজ উৎপাদন ও বিপণন। কৃষি বিপ্লবের মূল উৎস এতটাই ঢিলেঢালা যে, কৃষিকে এগিয়ে নিতে কর্মবীর কৃষকের পদে পদে সমস্যা ও সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার উপর প্রাকৃতিক দুযোগ। নির্বিঘেœ চাষাবাদ কঠিন হচ্ছে। বিশেষ করে বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হতে হয় কৃষকের প্রতিটি আবাদ মৌসুমে। বিএডিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সারাদেশে মাত্র ৫টি ফার্মার্স সীড সেন্টার আছে। এতে হাতেগোনা অল্পসংখ্যক কৃষক নিজেদের বীজ সংরক্ষণের সুযোগ পায়। ওই ৫টি সীড সেন্টার হচ্ছে পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, শেরপুরের নখলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও সিলেটের শ্রীমঙ্গল। সেখানেও সব ফসলের বীজ রাখার ব্যবস্থা নেই। কৃষকরা সাধারণত বরাবরের মতো নিজস্ব ফর্মুলায় বীজ সংরক্ষণ করে থাকে কমবেশী। বিএডিসির মোট ২৩টি বীজ উৎপাদন খামার, ১৪টি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও কৃষক পর্যায়ে কন্টাক্ট গ্রোয়ার্সের ৩১টি প্রকল্প রয়েছে। বীজ উৎপাদন খামারগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, জনবল বৃদ্ধি, গোডাউন ও প্রসেসিং সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত বীজ পরীক্ষাগার, বীজ উৎপাদন ও বিপণনে কৃষিজাতপণ্যের আবাদ ও উৎপাদনে সহায়ক নীতিমালা তৈরি, চাহিদানুযায়ী বাজেট বরাদ্দ এবং মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে গড়ে তোলা সম্ভব হবে জাতীয় বীজাগার। কৃষকদের সুবিধার্থে জেলায় জেলায় ফার্মার্স সীড সেন্টার স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হলে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সূত্র জানায়, সারা দেশে ধান, গম, ডাল, আলু, সবজি ও পাটসহ সবধরনের ফসল আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের রেকর্ড অনুয়ায়ী বিএডিসি গড়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করতে পারে। সবমিলিয়ে দেশে ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বর্তমানে বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হয় মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এশিয়ার বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে বাংলাদেশে। খামারটি যশোর ও ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী দত্তনগরে। সূত্রমতে, দত্তনগরসহ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অত্যন্ত জোর দিয়েই বলেছেন, বিএডিসির খামারগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে বীজ উৎপাদন করা হলে প্রতি বছর বীজের মোট চাহিদার সিংহভাগই পূরণ করা সম্ভব। সূত্রমতে, এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হলে আবাদ মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দেবে না। লাঘব হবে বীজের দুশ্চিন্তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিএডিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সীমান্তের দত্তনগর, মেহেরপুরের বারাদী, ঝিনাইদহের সাধুহাটি, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, বরিশাল, পাবনা ও খুলনাসহ সারাদেশে মোট ২৩টি বড় বীজ উৎপাদন খামার আছে। এছাড়া পৃথকভাবে ডোমারে আলু বীজ, মেহেরপুরের চিতলা ও দিনাজপুরের নরসিপুরে পাটবীজ ও মেহেরপুর ও রংপুরে সবজি বীজ খামার রয়েছে। বিএডিসি (বীজ) ব্যবস্থাপকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি আবাদ মৌসুমে কৃষিজাত পণ্যের সব ধরনের বীজ সরবরাহ করা হয়ে থাকে কমবেশী। যা খুবই উন্নতমানের। কিন্তু বীজের পরিমাণ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত রয়েছে। আমদানির চেয়ে দেশীয় বীজ মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় ফসলের ফলন আরো ভালো হবে। তাই সর্বাগ্রে কৃষকদের বীজ চাহিদা নিখুঁতভাবে নিরুপণ করে বীজ উৎপাদনের দিকে জোর দিতে হবে।
কয়েকজন আদর্শ কৃষক জানিয়েছেন, আমদানিকৃত হাইব্রিড জাতের বীজে মাঝেমধ্যেই ফলন মার খায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি সূত্র জানায়, এক সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কালোজিরা, বাদশাভোগ, লতিশাইল, ঝিঙেশাইল, শিয়াললেজী, মোহনভোগ, লালবিন্নি ও পঙ্গীরাজসহ শতাধিক জাতের ধান আবাদ ও উৎপাদন হতো। যার স্বাদ ও গন্ধই ছিল আলাদা। আগের সব জাতই প্রায় হারিয়ে গেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বীজ নিয়ে হেলাফেলার কোনো সুযোগ নেই। ভালো ফলনের জন্য উন্নতমানের বীজ অত্যাবশ্যক। তাছাড়া দেশের মধ্যেই একেক এলাকায় একেক ধরনের বীজের প্রয়োজন হয়। যেমন উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ সহিঞ্চু ধানসহ খাদ্রশস্যের বীজ না হলে ফলন আশানুরূপ হয় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জেনেটিক রিসোর্স বিভাগ পেট্রা প্রকল্পের মাধ্যমে লবণ সহিঞ্চু ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং উদ্ভাবনের গবেষণা করে সফল হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন জাতের ধানে চাষাবাদ হচ্ছে। সূত্রমতে, গবেষণা ও সংরক্ষণের অভাবে অনেক জাত হারিয়ে গেছে। যা পুনরুদ্ধারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিএডিসির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বীজ নীতিমালায় বিএডিসির খামারগুলোতে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কোনো সুযোগ নেই। তবে অতি সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় বিএডিসিকে জাত উদ্ভাবনের ব্যাপারে সুযোগ দেয়ার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। সরকার বিএডিসিকে জাত উদ্ভাবনের সুযোগ দিলে আরো অনেক বেশি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তাছাড়া বিএডিসির খামারগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া এবং অবহেলিত খামারগুলোর রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সমস্যাদির সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হলে বীজ উৎপাদনে বিরাট সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে বিএডিসির খামারগুলো। একইসাথে কৃষকদের দোরগোড়ায় উন্নতমানের বীজ পৌঁছে দেয়ার জন্য জেলায় জেলায় ফার্মার্স সীড সেন্টার গড়ে তোলা জরুরি। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে কৃষি ও কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা জোর তাগিদ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।