Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে সবজির বাম্পার ফলন : সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে হতাশ চাষিদের মাথায় হাত

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ের পাদদেশসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীম, ফুলকপি, বাধাকপি ও নানান মৌসুমী সবজির বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষক। আবার পাইকার সিন্ডিকেটদের কারণে চট্টগ্রামসহ মীরসরাই সীতাকুন্ড উপজেলায় শিম বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছে কৃষকরা। আবার মীরসরাই উপজেলার কোথাও কোন হিমাগার না থাকায় এই দুই উপজেলার মৌসুমি সবজিগুলো ও সংরক্ষণ করতে পারছে না কৃষকরা বা পাইকাররা। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে ও আসছে না কেউ। হিমাগার থাকলে অন্তত পাইকাররা ও ক্রয় করে সংরক্ষণ করতো । আর কৃষকরা পেত ন্যূনতম ন্যায্য দাম। জানা গেছে, চট্টগ্রাম ফেনী ঢাকা শহরের পাইকার সবজি ক্রেতা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণ ফুলকপি, বাধাকপি ও শিম নিয়ে চাষিরা চরম সঙ্কটে পড়েছেন। চাষিদের মতে, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর উৎপাদন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই দামও ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ দাম কমে যাওয়াতে পরিবহন খরচ দিয়ে জেলার বাহিরে নিয়ে বিক্রি করে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হবে। যার কারণে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করেন চাষিরা। এতে উৎপাদন খরচও উঠবে কিনা তা নিয়েও চাষিরা শঙ্কায় আছেন। চাষিদের মতে, প্রতিবছর শীত মৌসুমে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি শিম ৪০/৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কেজি ১০/১২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মীরসরাই সদরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে আনা আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গির মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি ফুলকপি গত বছর এই সময়ে ও ৩০- ৩৫ টাকা বিক্রি করেছি। এবার পাইকারদের কাছে ১০ টাকা হারে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর একটি ফুলকপিতেই ব্যয় হয়েছে ২০টাকা প্রায়। বাকি ১০টাকাই লোকসান দেবার পর কৃষকরা চাষের খরচ তো দূরের কথা ধারদেনা কিভাবে শোধ করবে সেই দুঃশ্চিন্তাই করছে। ফলে উচিত দাম না পাওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করেন চাষিরা। তবে ব্যবসায়ীদের কাছে সিন্ডিকেটের বিষয়টি জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানায়, উত্তরাঞ্চল থেকে এবার কম দামেই অনেক সবজি আসছে, তাই আমরা এখান থেকে বেশি দাম দিয়ে কেন কিনবো? কৃষি বিভাগের মতে, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ফুলকপি বাধাকপি ও শিমের ফলন ভালো হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি সবজি উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে গত বছরের চেয়ে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন ফুলকপি ও শিম উৎপাদন বেড়েছে মীরসরাইতে। বিগত বছর ৩০০ হেক্টর জমিতে শিম উৎপাদন হয়েছিল এবার আরো ৫০ হেক্টর বেশি। কৃষকরা লাভজনক হিসেবে এবং ফলনের উৎপাদন আরোও বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষ করে আইপি এম পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচ্ছি। তার মতে, চট্টগ্রাম আড়তে থেকে যেই শিমের দামটি নির্ধারণ করা হয় সেই হিসাবে স্থানীয় চাষিরা বিক্রি করতে হচ্ছে। এইভাবে মীরসরাই সীতাকু-ের শিমের বাজারজাতকরণ করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, চাষিরা বার্মী কম্পোস্ট সার ব্যবহার করার ফলে কপি ও সীমের ভালো ফলন হয়। বার্মী কম্পোস্ট স্যার মাটিকে ঠা-া রাখে, গাছের শিকড়কে মাটি থেকে পানি ও খাদ্য সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করে। কিন্তু মৌসুমী সবজির ভালো ফলনের পাশাপাশি এই অঞ্চলে সরকারি বা বেসরকারিভাবে একটি হিমাগার স্থাপনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ও স্বীকার করেন। তিনি বলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছে এই অঞ্চলের কৃষকরা দাবি জানালে তিনি এই বিষয়ে অবশ্যই উদ্যোগী হবেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মীরসরাইয়ে সবজির বাম্পার ফলন : সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে হতাশ চাষিদের মাথায় হাত
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ