বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত আলোচনায় কুরআন কারীমের ইসরা ও মেরাজের বিবরণ দেয়া হয়েছিল। সেখানে ইসরা ও মেরাজের বিবরণ এসেছে সংক্ষেপে। বিস্তারিত বিবরণ এসেছে হাদিস শরীফে। কিছু দীর্ঘ হাদিসে মেরাজের মোটামুটি বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। আর কিছু হাদিসের বিভিন্ন পাঠ থেকে মিরাজের টুকরো টুকরো বর্ণনা পাওয়া যায়। সে হাদিসগুলো সামনে রেখে মিরাজের ঘটনা নিম্নরূপ-
হিজরতের পূর্বের কথা। রাসূলুল্লাহ (সা.) একরাতে শুয়ে ছিলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন। চোখ দুটো মুদে এসেছে বটে, তবে দিল ছিল জাগ্রত। এরই মাঝে আগমন করলেন হযরত জিবরাঈল আ.। তিনি নবীজীকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন যমযমের নিকট। একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনা হলো। তা ছিল ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ। তাতে যমযমের পানি। জিবরাঈল আ. নবীজীর বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করলেন। বের করে আনলেন নবীজীর হৃদয়। যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামতো। ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ করে দেয়া হলো নবীজীর কলব।
এরপর আনা হলো নবীজীকে বহন করার জন্য সওয়ারী। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়া থেকে ছোট। নাম বুরাক। রঙ সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে।
এভাবে নবীজী (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বুরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজী সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাঈল আ. নবীজীর সামনে দু’টি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের অপরটি শরাবের। নবীজী দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল আ. বললেন, আপনি (দ্বীনের) স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন।
নবীজী মদের পেয়ালা নেয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিবরীল আ. বলেন, আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী : ৩৩৯৪)।
এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাঈল (আ.) নবীজীকে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে দস্তক দিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? বললেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হলো, তার কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এরপর নবীজীকে সম্ভাষণ জানানো হলো- মারহাবা, উত্তম আগমনকারীর আগমন ঘটেছে! খুলে দেয়া হলো নবীজীর জন্য আসমানের দরজা।
নবীজী প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হযরত আদম (আ.)। জিবরাঈল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজী হযরত আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজীকে সাদর অভিবাদন জানালেন- মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হযরত আদম (আ.) নবীজীর জন্য দুআ করলেন।
এরপর নবীজী উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানেও দরজা খুলতে প্রথম আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। এরপর নবীজীকে ইস্তেকবাল করা হলো। নবীজী সেখানে দেখতে পেলেন দুই খালাতো ভাই হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সাথে নবীজীর সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজীকে স্বাগত জানালেন- মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তারা নবীজীর জন্য দুআ করলেন।
এরপর নবীজীকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেও দুই আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ হলো এবং নবীজীকে স্বাগত জানানো হলো। সেখানে গিয়ে দেখলেন হযরত ইউসুফ (আ.)। হযরত ইউসুফের সাথে নবীজীর সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। নবীজী বলেন, হযরত ইউসুফকে যেন দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য ঢেলে দেয়া হয়েছে!
এরপর চললেন চতুর্থ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। স্বাগত-সম্মান জানানো হলো। সেখানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হযরত ইদরীস (আ.) নবীজীর জন্য দুআ করলেন। এরপর চললেন পঞ্চম আসমানের দিকে। সেখানে হযরত হারূন (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো।
এরপর চললেন ষষ্ঠ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের পর্বগুলোর মতো জিজ্ঞাসা করা হলো। নবীজীকে অভিনন্দন জানানো হলো। সেখানে দেখা হলো হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে। হযরত মূসা (আ.) নবীজীকে খুব ইস্তেকবাল করলেন। এরপর নবীজী সপ্তম আসমানের দিকে উঠতে থাকেন। সেখানে দেখা হলো হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সাথে। জিবরাঈল (আ.) পরিচয় করিয়ে দিলেন- ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন।
নবীজী হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সাথে সালাম বিনিময় করলেন। নবীজী বলেন, হযরত ইবরাহীম (আ.) তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে ছিলেন। বাইতুল মামুর, যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসে। এরপর এই সত্তর হাজার আর ফিরে আসে না। এভাবে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে ফেরেশতাদের নতুন নতুন কাফেলা আসতে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।