Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাভারে আর্সেনিকমুক্ত ‘তারা টিউবওয়েল’ প্রকল্পে লুটপাট

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘আর্সেনিকমুক্ত তারা টিউবওয়েল প্রকল্পে’ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল স্থাপন না করে অফিসের লোকজন বোরিংয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ও পাইপ স্যানেটারি দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনিভাবে সরকার গৃহীত প্রকল্পের সুফল মিলছে না। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী অলি উল্লাহকে জানানো হলে তিনি বলেন, অবশ্যই এর তদন্ত হবে। যেই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মিনি আক্তার উর্মি ৫৫ জনের একটি তালিকা সাভার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে পাঠান। এরপর অফিসের মেকানিক মফিজুর রহমান ওই ৫৫ জন ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে কল করে অফিসে ডেকে নেন। প্রত্যেককে সোনালী ব্যাংক সাভার থানা রোডে অবস্থিত শাখায় আড়াই হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। টাকা ব্যাংকে জমা দিবেন বলে তিনি নিজে নিয়ে নেন। এজন্য কোনো ধরনের রশিদ তিনি কাউকে দেন নাই। আদৌ ওই টাকা ব্যাংকে ওই প্রকল্পের জন্য সরকারী রাজস্ব খাতে জমা হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি লোক দিয়ে বোরিং করানোর কথা থাকলেও মফিজ ‘তারা টিউবওয়েলের মান ভালো না কয়েকদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে এমনসব কথা বলে লোকজনকে ‘সাব মারসেবল’ বসানোর পরামর্শ দেন। সেজন্য সরকারিভাবে দেয়া নলকূপ ও পাইপ তার পরিচিত স্যানেটারী দোকানে বিক্রি করে ভাল পাইপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার নির্ধারিত ২ ইঞ্চি ও ১৩০ ফিটের বদলে অতিরিক্ত ৪ ইঞ্চি পাইপ ও ২৫০ ফিট বোরিং করতে পরামর্শ দেন। এজন্য তিনি অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা বোরিং চার্জ দাবি করেন। টিউবওয়েল বসানোর জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হলেও সবকাজ করেছেন মফিজুর রহমান। রহমান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও সবকিছু হচ্ছে মফিজের তদারকিতে।
এদিকে মফিজুর রহমান সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল ও পাইপ বিভিন্ন স্যানেটারি দোকানে বিক্রি করে লোকজনকে ৩-৪ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার সুযোগ হয়নি তাদেরকে যে টিউবওয়েল ও পাইপ দিয়েছেন তা নি¤œমানের ১০ ফুট সাইজের অখ্যাত কোম্পানির পাইপ। প্রকৃতপক্ষে পুরো প্রকল্প সঠিক তদারকি ও নজরদারির অভাবে এবং অফিস সহকারী পদমর্যাদার মফিজুর রহমানের একক কর্তৃত্বে পরিচালিত হওয়ায় সরকারের জনবান্ধব এই প্রকল্পে সাভার উপজেলায় সুফল মিলছে না। জনগণ সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। হরিলুট হচ্ছে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা। এমনকি তারা টিউবওয়েল বাড়ির সামনে স্থাপনের কথা থাকলেও তা হয়নি।
একাধিক সূত্র মতে, সরকার নির্ধারিত বোরিং মিস্ত্রীদের বদলে স্যানেটারী দোকান থেকে স্থানীয় মিস্ত্রীদের দিয়ে তিনি তারা টিউবওয়েলের বদলে ‘সাব মারসেবল’ বসিয়েছেন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়াা হয়েছে। এতে বোংিয়ের জন্য সরকারের বরাদ্ধকৃত টাকা গেছে মফিজের পকেটে। অভিযোগ প্রসঙ্গে মফিজুর রহমানেরর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, টাকা নিয়ে আমি ব্যাংকে জমা দিয়েছি। তবে তাদের কোন রশিদ কিংবা কোন প্রমানপত্র কেন দেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা জমা দিছি কিন্তু সরকার ওই টাকার কোন রশিদ দেইনি, তাহলে আমি কিভাবে রশিদ দিব। একপর্যায়ে তিনি তার সাথে দেখা করার কথা বলেন। এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি তদন্ত করে দেখবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাভারে আর্সেনিকমুক্ত ‘তারা টিউবওয়েল’ প্রকল্পে লুটপাট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ