পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র শবে মিরাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক আরো মজবুত করা। নামাজের প্রতি যতœবান হওয়া। কেননা এটা মিরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজীর (সা.) তোহফা। গতকাল মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব জুমার বয়ানে এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। অনেককেই রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, পবিত্র শবে মিরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় রাসূলকে যে মর্যাদা দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীকে দান করেননি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী (সা.)-এর ভালোবাসা সুগভীর হয়। রাসূল (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে এসে সূরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি বিষয় উম্মতের সামনে পেশ করেছেন, তা’ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো, মা বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ শব্দটিও বলো না।
তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে বিনয়ী থেক আর বলো ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন শৈশবে তারা আমাদের লালন পালন করেছেন। পেশ ইমাম বলেন, মেরাজে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তিনটি বস্তু প্রদান করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সূরা বাক্বারাহর শেষ আয়াতগুলো ২৮৫-২৮৬ আয়াত। উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদেরকে ক্ষমা করার সুসংবাদ। আসুন, মিরাজের শিক্ষাকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করি, অন্যকে বাস্তবায়ন করার আহবান জানাই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ইসরা ও মিরাজ। মুমিনের আবেগ, অনুভ‚তি, ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে মিশে আছে ইসরা ও মিরাজের সত্যতা। ইসরা অর্থ নৈশভ্রমণ, রাত্রিকালীন ভ্রমণ। মিরাজ অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বলোকে গমন, মই ইত্যাদি। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত নং-১)। বস্তুত ইসরা হচ্ছে, মক্কা মুকাররমা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণকে যা রাতের একটি অংশে সংঘটিত হয়েছিল। আর সেখান থেকে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের বিস্তৃত অধ্যায়কে মিরাজ বলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অবশ্যই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সা.) তাকে (জিবরাঈল আ.-কে) আরো একবার দেখেছেন, সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। তার পাশেই রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া। (সূরা নাজম : আয়াত নং- ১৩-১৫)। ইসরা ও মিরাজের ব্যাপারে কোরআনে সংক্ষেপে এতটুকুই বলা হয়েছে। বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে। বিশুদ্ধ মতে ইসরা ও মিরাজ নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৬ রজব দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছিল। নবীজির (সা.) বয়স তখন ৫১ বছর। ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়।
খতিব আরো বলেন, মিরাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক আরো মজবুত করা। নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা এটা মেরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজীর (সা.) তোহফা। যেই পবিত্র ও বরকতময় ভ‚মিতে নবীজী (সা.)-এর ইসরা ঘটেছে সেই বাইতুল মুকাদ্দাস ও জেরুযালেম আজ বেদখল। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয় আমার মুসলমান ভাইয়ের রক্ত। বাইতুল মুকাদ্দাস দখলমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ও নিয়ত রাখাও ইসরা ও মিরাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর দেয়া একটি বড় নিয়ামত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অবগত করেছেন সৃষ্টিজগৎকে। এই ঘটনা যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও সীরাতের সাথে সম্পর্কিত, সেভাবে তা ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাসেরও অংশ। এই ঘটনায় একদিকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা, অন্যদিকে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইলাহী হিকমত ও রহস্য।
কোরআনে ইরাশাদ হয়েছে, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। সূরা ইসরা (১৭) : ১।
খতিব বলেন, পবিত্র শবে মিরাজের ঘটনা প্রতিটি মুমিনের ঈমান ও আবেগ জড়িয়ে আছে এর সাথে। তাই এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে করণীয় তা হচ্ছে, মিরাজের ব্যাপারে সহীহ আকীদা পোষণ করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক রাতে সশরীরে মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সাত আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত, জাহান্নাম ভ্রমণ করিয়েছেন; আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বড় বড় কিছু কুদরত প্রিয় হাবীবকে দেখাবেন বলে। মিরাজ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ মুজিযা। আর মুজিযা ওই ঘটনাকেই বলা হয়, যা সাধারণ সক্ষমতার বাইরে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সংঘটিত হয়। মিরাজের ঘটনা থেকে যে শিক্ষাগুলো পাওয়া যায় সংক্ষেপে তা’ হচ্ছে, আল্লাহর সত্তার ওপর পূর্ণ ও সঠিক বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক মজবুত করা। মহান আল্লাহ সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।