Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চেন্নাইতে বাংলাদেশের দূতাবাস চালু হতে এত সময় লাগল কেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৮ পিএম

তামিলনাডুর রাজধানী চেন্নাইতে বাংলাদেশের দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অচিরেই হতে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস। কয়েক মাস আগেই অবশ্য অস্থায়ী অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ওই দূতাবাসের কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে, বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন চেন্নাই গিয়ে সে কাজের অগ্রগতিও খতিয়ে দেখেছেন।

প্রতি বছর যে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি চিকিৎসার প্রয়োজনে দক্ষিণ ভারতে যান এবং সেখান থেকেও যে ভারতীয়রা তৈরি পোশাক বা আইটি খাতে কাজ করতে বাংলাদেশে আসেন - এই নতুন দূতাবাস তাদের খুবই কাজে লাগবে বলে দুদেশের কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা হল, তামিলনাডু সরকারের ছাড়পত্র না-মেলায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ এই ডেপুটি হাই কমিশনটি চালু করতে পারেনি।

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান অবশ্য বলছেন, "আমি কিন্তু মনে করি না তেমন দেরি হয়েছে। কোভিড মহামারি না-এলে এটা আরও আগেই হত, তা ছাড়া আর্থিক সমস্যাও কিছু ছিল।" বস্তুত কোভিডের আগেও প্রতি বছর যে সতেরো থেকে আঠারো লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে এসেছেন, তাদের অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল চেন্নাই, ভেলোর, ব্যাঙ্গালোর বা হায়দ্রাবাদের মতো দাক্ষিণাত্যের শহরের হাসপাতালগুলো ।

কিন্তু বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে বাংলাদেশের এতদিন কোনও কূটনৈতিক উপস্থিতি ছিল না, যে কারণে সে দেশের নাগরিকদের এতকাল যথেষ্ঠ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নিজের ও আত্মীয়-বন্ধুদের চিকিৎসার জন্য নিয়মিতই চেন্নাই যাতায়াত করেন ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম - ফলে তিনি সেখানে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন চালু করার উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "চেন্নাইতে গেলে আমাদের দেশের লোকদের খুব ভাষার সমস্যা হয়। কোথায় যাবেন, কী করবেন অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না।" "সে জায়গায় আমাদের নিজস্ব দূতাবাস যদি বাংলাদেশি নাগরিকদের সাহায্য করতে পারে, কোন হাসপাতালে বা কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে - তাহলে খুব সুবিধে হবে।" "তা ছাড়া আজকাল ই-পাস, এয়ার সুবিধা এই জাতীয় অজস্র অ্যাপ ডাউনলোড করে ভারতে যাতায়াত করতে হয় - সেগুলো ঠিকমতো না-থাকলেই চেন্নাই এয়ারপোর্টে নামার পর যাত্রীদের সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করে।" জাহেদুল ইসলামের বিশ্বাস, চেন্নাইতে বাংলাদেশের নিজস্ব মিশন থাকলে এই ধরনের ভোগান্তির বহর অনেক কমবে।

চেন্নাইতে নিজস্ব দূতাবাস চালু করতে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগেই - কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হতে বেশ দেরিই হল বলা চলে। বিবিসি জানতে পেরেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, নৌবাহিনী এমন কী কোস্ট গার্ডের ছাড়পত্র মেলার পরও তামিলনাডু সরকারের গড়িমসিতেই বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিগত এআইডিএমকে সরকারের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন - কিন্তু তারপরেও সেই জট খোলেনি।

দিল্লিতে বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ওয়াচার গৌতম লাহিড়ীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তামিলনাডুর আপত্তির কারণটা ঠিক কী ছিল? তিনি বলছিলেন, 'দূতাবাস চালু হলে হয়তো প্রচুর সংখ্যায় বাংলাদেশি তামিলনাডুতে চলে আসবেন, এমন একটা ধারণা সম্ভবত সেখানে রাজ্য সরকারের ছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের খুব ভাল করে কিছু জানাও ছিল না।" "তা ছাড়া একটা রাজনৈতিক কারণও ছিল - লক্ষ্য করবেন, বাধাটা এসেছে এআইডিএমকে সরকারের আমলেই।"

"তাদের দলের পনিরসিলভম যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, তার সরকারকে বিজেপি সমর্থন করত। তখন হর্ষ শ্রিংলা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেও খুব কিছু করতে পারেননি - কারণ স্থানীয় স্তরে বিজেপির বিষয়টা নিয়ে আপত্তি ছিল।" "কিন্তু ডিএমকে নেতা স্তালিন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই সেই বাধাটা কেটে যায়। তামিলনাড়ু সরকারও উপলব্ধি করে, এত বাংলাদেশি নাগরিক সেখানে আসছেন - তাদের একটা দূতাবাস থাকলে নিশ্চয় আরো বেশি সংখ্যায় আসবেন, অর্থনীতিরও ভালো হবে। "তবে এর আগে দীর্ঘদিন একটা সংশয় বা সন্দেহ যে তাদের মধ্যে কাজ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই", বলছিলেন লাহিড়ী।

গত বছরের মে মাসে স্টালিনের নেতৃত্বে ডিএমকে রাজ্যের ক্ষমতায় আসে, আর তার দুমাসের মধ্যেই অস্থায়ী অফিস থেকে কাজ শুরু করে চেন্নাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস। ভারতে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান যদিও মনে করেন না কোভিড ছাড়া আর অন্য কারণে এই দূতাবাস চালু করতে দেরি হয়েছে - তবে বিবিসির কাছে তিনিও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের দ্রাবিড়িয়ান সংস্কৃতির একটা দূরত্ব আছে, পরস্পরকে ভালভাবে না-জানার একটা সমস্যা আছেই।

যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন - অর্থনীতির বাস্তবতাই সে দূরত্বকে অতিক্রম করতে সাহায্য করছে। দিল্লির জেএনইউতে সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বিবিসিকে বলছিলেন, "গোটা দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে, এত বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশিরা মেডিক্যাল ট্যুরিজমের জন্য আসছেন - ফলে দক্ষিণ ভারতে তাদের একটা মিশন কিন্তু হওয়ার ছিলই, আর সেটাই হয়েছে।" "শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের সমস্যার কারণে চেন্নাইতে কোনও বিদেশি মিশন স্থাপনে সরকারের একটা দ্বিধা আগে কাজ করত - কিন্তু এলটিটিই কার্যত বিলুপ্ত হওয়ার পর সেই ভাবনাও কিন্তু এখন পাল্টে গেছে।"

দক্ষিণ ভারতের প্রধান মেট্রো শহর চেন্নাইতে এতদিন পূর্ণাঙ্গ কনস্যুলেট বা উপদূতাবাস ছিল ব্রিটেন-আমেরিকা-জার্মানি, থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া কিংবা রাশিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-নরওয়ে-শ্রীলঙ্কার মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশের। সেই তালিকাতেই এবার যুক্ত হচ্ছে আঞ্চলিক প্রতিবেশী বাংলাদেশের নাম। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ