Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিবাহবিচ্ছেদ : যা কখনোই কাম্য নয়-১

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। মহামারির মতো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা। অর্থনৈতিক কারণে অশান্তির কারণেও ভাঙন ধরেছে অনেক সংসারে। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে। স্বার্থের সংঘাত, অর্থের অভাব, পর নর-নারীতে আসক্ত ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, যৌতুক, মতের অমিল আর আত্মসম্মান মোকাবিলায় চূড়ান্ত হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ভাঙছে একটি সংসার। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ডিভোর্স দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা। তবে এটা কেবল শহরের হিসাব। করোনার ধাক্কায় আয় সঙ্কুচিত হয়েছে বহু মানুষের। তবে সঙ্কটকালের এই অভিঘাত এখানেই থেমে নেই।
ঢাকার দুই সিটির তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৪ হাজার ৫৬৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে ১ হাজার ১৪১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২। এই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে বেড়েছে ৯৯টি বিচ্ছেদ।

কী ভয়াবহ অবস্থা! যদিও সংবাদে যা এসেছে তা দাপ্তরিক হিসাব। বাস্তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। এটা আমরা বলতে পারি ফতোয়া বিভাগের অভিজ্ঞতা থেকে। নানা পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রবণতা ক্রমবর্ধমান, যা একটি সমাজের জন্য, বিশেষত মুসলিম সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক ও আশঙ্কাজনক। কারণ, বিবাহ-বিচ্ছেদের কুফল অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সমাজে বিচ্ছেদ প্রবণতার এই ক্রমবর্ধমান বিস্তার কেন। সমাজবিজ্ঞানীরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানা কারণ বর্ণনা করেছেন।

তবে যে কথাটি প্রায় সবাই বলছেন তা হচ্ছেÑ ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। বাস্তবেই এটা অনেক বড় কারণ। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন-দর্শন ও জীবনধারা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা, বিনয় ও ছাড়ের মানসিকতা; এই সবই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এরপর পর্দা-পুশিদা রক্ষা, পরপুরুষ বা পরনারীর সাথে সম্পর্ক ও মেলামেশা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদিও বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসন, যা পালন না করাও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ।
পরিসংখ্যানও বিষয়টিকে সমর্থন করে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গবেষণা-পরিসংখ্যান বলছে, বিচ্ছেদের যেসব আবেদন ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে তার মধ্যে ৮৭ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে পরকীয়ার জের ধরে। কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়া, কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীর। কাজেই সমাজবিজ্ঞানীদের কর্তব্য, এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। কেন এই সমাজে পরকীয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রতিকারের উপায় কীÑ তা নিয়ে নির্মোহ চিন্তা-ভাবনার এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন আছে।

পরিসংখ্যানের আরেকটি দিক হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ তালাক গ্রহণ করছেন নারী আর ২৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষ। ২০১৮ সালেও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেয়া হয়েছে, যা ৭০ শতাংশ। এর কারণ হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এই যে, সাধারণত নারীরা নির্যাতিত হওয়ায় তারাই বিচ্ছেদের পদক্ষেপ বেশি নিচ্ছে; তবে এর সাথে অনেকেই আরো যা বলছেন তা হচ্ছেÑ ‘মেয়েরা এখন অনেক অধিকার পেয়েছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই বেশি অধিকার পেয়ে স্বামীকে তালাক দিতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

আগেকার দিনের মায়েরা সংসার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। এখন একক পরিবার হওয়ায় এবং বাইরে চাকরি-বাকরির ও সার্বিক স্বাধীনতার বিস্তার ঘটায় বাইরের মানুষের সাথে তাদের মেলামেশা বেড়েছে এবং স্বামীদের চেয়ে বাইরের বন্ধু-বান্ধবদের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তাই পারিবারিক অবস্থা একটু খারাপ হলেই তালাকের চিন্তা করছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা খুব বেশি অত্যাচারী হয়ে থাকে। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ও আধুনিক সংস্কৃতির কারণে সংসার ভাঙছে।



 

Show all comments
  • মমতাজ আহমেদ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৫০ এএম says : 0
    ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক কোনো পসন্দনীয় কাজ নয়। বরং ইসলামে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট হালাল কাজ হলো তালাক।
    Total Reply(0) Reply
  • রকিবুল ইসলাম ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৫১ এএম says : 0
    তালাককে ইসলামে সবচেয়ে অপসন্দনীয় হালাল কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ বিধান প্রদানের উদ্দেশ্য হলো- স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক যখন এমন খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তারা সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করার কোনো সম্ভাবনাই দেখতে পায় না। এমনকি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও এ অবস্থার সংশোধন ও পরিবর্তনের আশাও শেষ হয়ে যায়। যার ফলে শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠনে বিয়ের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যথ হয়ে যায়। তখন উভয়কে ভবিষ্যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তিক্ততা-বিরক্তির বিষাক্ত পরিণতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়া। আর এ কারণেই কোনোভাবেই তালাককে বিন্দুমাত্র উৎসাহিত করা হয়নি বরং এ তালাকের বিধান হচ্ছে নিরূপায়ের উপায় মাত্র।
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম রহমান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৪ এএম says : 0
    সুখী-সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ দাম্পত্য জীবন সকলেরই কাম্য। ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সকলকে উৎসাহ প্রদান করে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যখন ভারসাম্যহীন, পারস্পরিক মনোমলিন্যতা ও সাংসারিক তিক্ততা দেখা দেয়, তখন একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিবাহ চুক্তির অবসান ঘটানোর সুযোগ ইসলাম রেখেছে। ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখলেও তালাক প্রদানে উৎসাহিত করা হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৫ এএম says : 0
    যদিও ইসলামে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্যে তালাকের বিধান রয়েছে, তবুও ইসলাম তালাককে জায়েজ কাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৫ এএম says : 0
    যথাসম্ভব বিবাহবিচ্ছেদের মত জায়েজ ঘৃণিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত এবং সমাজে তালাক যাতে বেশি পরিমাণে না হয় তার চেষ্টা করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন