পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসন ক্যাডারদের যাঁতাকলে পিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা ‘আমলা-গহ্বর’ থেকে বেরুতে চান। তাদের মতে, সংবিধিবদ্ধ স্বশাসিত স্বাধীন সংস্থাটিকে নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করেছেন আমলারাই। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬টি কমিশন গঠিত হলেও ৫টি কমিশনের কর্তৃত্বেই ছিলেন প্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া আমলাগণ। দুদক পরিণত হয় আমলা পুনর্বাসনের প্রতিষ্ঠানে। আর এই আমলাদের কলমের খোঁচায় সূচিত হয় দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্যরেখা। বিধি-২০০৮ এর বিতর্কিত ৫৪(২) ধারা প্রয়োগ হয় শুধু দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। প্রশাসন ক্যাডার থেকে দুদকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এটি কখনোই প্রয়োগ করা হয় না। দুদকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ পাহাড় সমান অভিযোগ অ্যাডমিন ক্যাডারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এসব অভিযোগ কখনো অনুসন্ধান করা হয় না। বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যেই অভিযোগগুলো ফেলে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও কখনো অনুসন্ধান কিংবা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় কখনো প্রশাসন ক্যাডারদের নাম চলে এলে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রতিবেদন দিলে সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তাকে অফিসিয়ালি নানাভাবে হয়রানি করা হয়। শাস্তিমূলক বদলি, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, শোকজসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। দুদক কর্মকর্তাদের প্রতিটি কার্যক্রমে চলে আমলাদের খবরদারিত্ব। অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার কোনো অভিজ্ঞা না থাকলেও দুদক কর্মকর্তাদের এসিআর লিখছেন আমলারা।
এছাড়া পদোন্নতিতে রয়েছে মারাত্মক বৈষম্য। দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতে যথাযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের পদগুলোকে ‘ব্লক পোস্ট’ করে রাখা হয়েছে। পদ শূন্য থাকলেও দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মহাপরিচালকের পদে কখনোই বসানো হয় না। স্বআরোপিত পরীক্ষা-পদ্ধতির বিধান দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির পদ। কথায় কথায় নেয়া হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা। বিদ্যমান অর্গানোগ্রামের ৬০ ভাগ পদ শূন্য থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়া হয় না প্রাপ্য পদোন্নতি। নানামাত্রিক নিগ্রহের শিকার দুদক কর্মকর্তাদের মাঝে এসব ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকে। এরই আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দীনকে চাকরিচ্যুতি করার ঘটনায়। শরীফ উদ্দীনকে চাকরিচ্যুতির পর দুদকের ২৩টি সমন্বিত জেলা সদরে একযোগে প্রতিবাদ, মানববন্ধন, কর্মবিরতি পালন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে সংগঠন ঘোষণা হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বঞ্চনা, নিগ্রহ আর অসন্তোষের বিস্ফোরণ মাত্র। এ বিস্ফোরণ থেকেই গঠিত হয় ‘অ্যান্টিকরাপশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’। ইতোপূর্বে যতবারই আমলা-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে এবং যতবারই দুদক কর্মীরা এ ধরনের সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেনÑ তাদেরকে নানাভাবে শাস্তি দেয়া হয়। এ কারণে এবার একযোগে সবগুলো কার্যালয়ে প্রতিবাদ হয়। শরীফকে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং দুদক বিধি-২০০৮ সালের ৫৪(২) ধারা বাতিল এ সংগঠনের বর্তমান এজেন্ডা। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করে জানান, আপাত: আমাদের এজেন্ডা দু’টি হলেও দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে কাজ করবে এ সংগঠন।
রোববার দুদক সচিব চাকরিচ্যুত শরীফের বিরুদ্ধে যে ১৩টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছেন সেটি প্রত্যাখ্যান করে সংগঠন নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিটি অভিযোগই মিথ্যা। তার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছেÑ সবগুলোর প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। শরীফ উদ্দিন প্রতিটি পদক্ষেপই তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে এবং তাদের অবহিত করেই করেছেন। এমনকি জিডি করার আগেও তিনি অনুমতি দিয়েছেন। সততার সঙ্গে কাজ করে শরীফ দুর্নীতিবাজ আমলাচক্রের রোষানলে পড়েছেন। শরীফ প্রশাসন ক্যাডারদের দুর্নীতি উদ্ঘাটন করেছেন। এটিই তার অপরাধ।
সংস্থাটির একজন সিনিয়র উপ-পরিচালক তরুণ কর্মকর্তাদের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন আমরা যা পারিনি-আজকের তরুণ কর্মকর্তারা সেই কাজটিই করেছেন। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি আমলাতন্ত্রের গহ্বরে নিপতিত হয়। আমলারাই দুদকের শীর্ষ এবং নীতি নির্ধারণী পদে বসে ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে কাউকে ধরছেন, কাউকে ছাড়ছেন। হুকুম তামিল করছেন শুধু কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা। বিগত কমিশনের শাসনামলে দুদকে শতভাগ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে আমলাতন্ত্র। দুদককে অদক্ষ প্রশাসন ক্যাডারদের প্রেষণে এনে এটিকে একটি স্বেচ্ছাচারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দুদককে ব্যস্ত রাখা হয়েছে আমলাদের স্বার্থরক্ষা এবং ব্যক্তি আকাক্সক্ষা পূরণের প্রতিষ্ঠানে। ফলে এক সময় আশা জাগানিয়া ‘স্বশাসিত স্বাধীন’ দুর্নীতিদমন কমিশন ১৮ বছরে মানুষকে হতাশ করেছে দারুণভাবে। মানুষ এখন তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুণ্ঠন, অর্থপাচার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির পরাগায়ণ ঘটানোর জন্য প্রধানত দায়ী করে দুদককেই।
দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা জানান, দুদক কার্যত পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের সবাই পাঁচ বছরের চুক্তিতে নিযুক্ত। এর মধ্যে দুই সদস্য প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব। তাদের পছন্দের কর্মকর্তারাই দুদকে প্রেষণে নিয়োগ পান। বিচার বিভাগ, পুলিশ, ব্যাংক এবং প্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের প্রেষণে আনা হয়। এর মধ্যে দুদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো দেয়া হয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের।
আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক বাছাইয়ের ‘বাছাই কমিটি’, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২, প্রশাসন, অর্থ ইত্যাদি ডেস্কে দেয়া হয় প্রশাসন ক্যাডারদের। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদেও প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের বসানো হয়। কিন্তু তারা হন পুলিশ কিংবা বিচার বিভাগের কর্মকর্তা। কিংবা যেনতেন পোস্টিং নিয়ে শুধু রাজধানীতে অবস্থানে আগ্রহী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ফলে দুদক পরিণত হয় আমলা পুনর্বাসন কেন্দ্রে। দুর্নীতিবিরোধী যে ধারণাগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে দুদকের জন্ম হয়েছিল, সেটি তিরোহিত হয়। শাসন-বৈষম্য আর নিষ্পেশনের শিকার হন কমিশন কর্মকর্তারা। ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্যতা সত্ত্বেও কমিশন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হয় না। অর্গানোগ্রামে ৬০ শতাংশ পদে শূন্যতা সৃষ্টি করে সেসব পূরণে নিয়োগ দেয়া হয় প্রেষণে। ফলে অন্য দফতরের দুর্নীতি দমন তো দূরের কথাÑ দুদকের নিজস্ব নিয়োগ-পদোন্নতি, পদায়ন আর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাসা র্বাধে দুর্নীতি, অনিয়ম। প্রেষণে আসা নীতি নির্ধারকদের স্বেচ্ছাচারিতার বলি হন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা। এর মধ্যে একটি শ্রেণি এমনটিকে ‘নিয়তি’ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। আরেক শ্রেণি বঞ্চনা-হতাশা নিয়ে কর্মজীবনের পাঠ চুকিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যাদের চাকরি আরো কয়েকবছর আছে তাদের বুকে না পাওয়ার আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা জানান, কার পদোন্নতি হবে, কে শাস্তি পাবেন- এটি নির্ভর করে প্রেষণে আসা প্রশাসন কর্মকর্তাদের মর্জির ওপর। কারণ তাদের হাতে কমিশন কর্মকর্তাদের এসিআর। তাদের তুষ্ট করতে পেরে কমিশনের বহু দক্ষ কর্মকর্তাকে বিদায় নিতে হয়েছে ন্যায়ানুগ পদোন্নতি ছাড়াই। তাদের মতে, বিগত ৬ বছরে দুর্নীতিদমন কমিশনে অবকাঠামোগত চাকচিক্য নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান-তদন্তে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানে কমিশন ছিল কুণ্ঠিত। পদোন্নতিতে অদ্ভুত এক ‘পরীক্ষা উত্তীর্ণ’র শর্তজুড়ে দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ঠেকানো হয় পদোন্নতি। অন্যদিকে পদগুলোকে শূন্য করে তা পূরণ করা হয় প্রেষণে লোক এনে। দুদকে রয়েছে ২ হাজার ১৪৬ জনের জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম)। এর মধ্যে ৪৮টি পদ সুপার নিউমারি। জনবলের অর্ধেকের মতো মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে (১১৯৮টি) প্রধান কার্যালয়ে। এর মধ্যে ৪২৮টিতে পদায়ন করা হয়েছে। শূন্য রাখা হয়েছে ৭৭০টি পদ। ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দানের বিধান রয়েছে। অথচ পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই পদোন্নতি দেয়নি কমিশন। পদোন্নতি ঠেকাতে অদ্ভুত ধরনের ‘পরীক্ষাপদ্ধতি’র প্রবর্তন করা হয়। যা দেশের কোনো সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেই নেই। এমনকি প্রশাসন ক্যাডারদেরও পদোন্নতির এজন্য এ ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় না। ২০১২ সালের সংশোধিত চাকরিবিধি অনুযায়ী ডেপুটেশনে পদ পূরণের বিষয়টি বিধিতে ৩ নম্বর ক্রাইটেরিয়া। অথচ সেটিরই সর্বাধিক চর্চা করেছে বিদায়ী কমিশন। এভাবে ২ হাজার ১৪৬টি পদের মধ্যে ৮৬৫টিতে পদায়ন করা হয়েছে। শূন্য রেখে দেয়া হয়েছে ১হাজার ১৮১টি পদ। সুপার নিউমারি ৪৫টি পদও ররখে দেয়া হয়েছে শূন্য। শরীফকে চাকরিচ্যুত করার পর যে প্রতিবাদ কর্মসূচি দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অব্যাহত রেখেছেন তা হচ্ছে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। নবগঠিত দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা জানান, চাকরিবিধি-২০০৮ এর ৫৪(২) ধারা বাতিলের দাবিতে আমরা অনড়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।