Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কবর মোবারক জিয়ারত করা শুধু মুস্তাহাবই নয়, বরং উত্তম নেকি এবং শ্রেষ্ঠ ইবাদতও বটে। কেননা, রওজা শরিফের জিয়ারত বড় ধরনের ইবাদত, আনুগত্যের উচ্চতর স্তর এবং উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার সহজ পথ। যে ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম বিশ্বাস পোষণ করে, সে ইসলামের মজবুত রশি স্বীয় গলদেশ হতে খুলে ফেলেছে এবং আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নির্ভরযোগ্য আয়েম্মায়ে মুজতাহেদিনের বিরোধিতা করেছে। (শরহুয যুরকানি আলাল মাওয়াহিব : খ. ১২, পৃ. ১৭৮)।

বস্তুত: জেনে রাখা দরকার যে, রওজা মোবারকের জিয়ারতকালে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র মুখমণ্ডলের প্রতি মুখ করে দাঁড়ানো উচিত। অনুরূপভাবে দোয়া ও শাফায়েতের দরখাস্ত কালেও চেহারা মোবারকের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো উচিত। এ প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত তরতিবগুলোর বিবরণ পাওয়া যায়। যথা- (ক) জিয়ারতকালে কবরকে সামনে রেখে তার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে। তারপর বলবে, ‘আস সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। প্রকাশ থাকে যে, নবী করিম (সা.) কবর মোবারকে কিবলামুখী অবস্থায় জন পার্শ্ব দেশের ওপর শায়িত আছেন। (ফাতহুল কাদির : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা-৩৩৬)।

(খ) তাকে সামনে রেখে তার পানে মুখ করে আদবের সাথে দাঁড়াবে, তার নিকট সুপারিশের আবেদন করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘যদি তার নিজেদের ওপর জুলুম করে আপনার কাছে আসে ও আল্লাহপাকের দরবারে ইস্তিগফার করে এবং রাসূল ও তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন তবে অবশ্যই আল্লাহপাককে তওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে।’ (আন নিসা : আয়াত-৬৪; আশ শিফা : খ. ২, পৃ.-৩২)। (গ) ইমাম মালেক রহ., ইমাম আহমাদ রহ. প্রমুখ ইমামগণ বলেছেন, কবর মোবারকের দিক মুখ করে তাকে সালাম করবে। ইমাম শাফেঈ রহ.-এর শাগরেদ ও অনুসারীগণ এটা উল্লেখ করেছেন। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ : খ. ২৭, পৃ. ১১৭)।

এই প্রেক্ষাপটে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মদিনা গমনকারীর উচিত সে যেন মদিনা সফরের সময় রওজা মোবারকের জিয়ারতের নিয়ত করে। সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর অন্যান্য বরকতময় স্থানের জিয়ারতও হয়ে যাবে। এরূপ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অধিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শিত হয়। এ প্রসঙ্গে হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বলেন, (ক) রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো কাজের প্রয়োজন ছাড়া শুধুমাত্র আমার কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে আগমন করল, তার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করা আমার কর্তব্য হয়ে পড়ল।’ (মুজামে কবীর, তিবরানি : খ. ১২, পৃ. ২২৫)।
(খ) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করল। তারপর আমার মসজিদে আগমনের অভিপ্রায় রাখল, তার জন্য দু’টি মকবুল হজের সওয়াব লিখিত হবে। সে ফেরদাউসের মসনদে অধিষ্ঠিত হবে। (ওয়াউল ওয়াকা: খ. ৪, পৃ. ১৩৭৪)।

(গ) মুসলমানগণ এ বিষয়ে একমত যে, রওজা মোবারকের জিয়ারত করা মুস্তাহাব। ইমাম নভভীর বর্ণনা এরূপই। জাহেরিবাদীগণ জিয়ারতকে ওয়াজিব মনে করে। সুতরাং রওজা শরিফের জিয়ারত আম খাস সকলের নিকটই কাম্য। এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, রওজা মোবারকের দ্বারা রাসূলের তাজিম প্রকাশ পায়। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাজিম প্রদর্শন করা ওয়াজিব। এ জন্য কোনো কোনো আলেম বলেছেন, জিয়ারতের ব্যাপারে নারী এবং পুরুষের মাঝে ব্যবধান নেই। এ ব্যাপারে উভয়েই সমান। (শরহুয যুরবানি আলাল মাওয়ায়হিব : খ. ১২, পৃ. ১৮৩)।

আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, কবর মোবারক জিয়ারতের ইচ্ছা পোষণকারীর কবর জিয়ারতের সাথে সাথে মসজিদে নববী জিয়ারতের ও তাতে নামাজ আদায়ের নিয়ত রাখা উচিত। (শরহুয যুরবানি আলাল মাওয়ায়হিব : খ. ১২, পৃ. ১৮৩-১৮৪)।
উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে স্পষ্টতই বলা যায় যে, জিয়ারতে মদিনার মহব্বত অন্তরে ধারণ করা পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচায়ক। এ নেয়ামতে ধন্য হওয়া সকল মুমিন মুসলমান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অত্যাবশ্যক। এতেই রয়েছে কামিয়াবি ও সফলতা।



 

Show all comments
  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪৯ এএম says : 0
    হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়েগেলো। -সহিহ মুসলিম
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫০ এএম says : 0
    বস্তুত দুনিয়ার সব কবরের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশি জিয়ারতের উপযুক্ত স্থান হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক। তাই এর উদ্দেশে সফর করা উত্তম। এ কথার ওপর পূর্বাপর সব উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫১ এএম says : 0
    মদীনা শরীফের প্রবেশের পূর্বেই এই মনোভাব দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে যেন কোন বেআদবী না হয়ে যায়। পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত করার সময় রওজা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো সুন্নত’। [ফতহুল কাদির,৩য় খন্ড]
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার আহমেদ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫২ এএম says : 0
    সৌদি আরবের মদিনা মুনাওয়ারা শহরের মসজিদে নববীতে মুসলমানদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রওজা মোবারক অবস্থিত। সবুজ গম্বুজের ছায়াতলে অবস্থিত তাঁর রওজার চতুর্দিকে সুরক্ষিতভাবে বেষ্টনী দেয়া। কোনো জিয়ারতকারীর সরাসরি তা দেখার সুযোগ নেই। রাসূল (সা.) এর রওজা জিয়ারত করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মুসলমান ছুটে আসেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫৫ এএম says : 0
    হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর কবরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয় রওজা শরিফ। কারণ এটি জান্নাতের একটি বাগান- রওজা আতহার (পবিত্র বাগান)। হজের সময় হাজীরা নবীর রওজা জিয়ারত করেন। দোয়াদরুদ পাঠ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫৬ এএম says : 0
    আল্লাহ জীবনে একবার হলেও আপনার প্রিয় হাবিবের রওজা মোবারক জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Belal ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৪২ এএম says : 0
    আল্লাহ জীবনে একবার হলেও আপনার প্রিয় হাবিবের রওজা মোবারক জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Belal ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৪২ এএম says : 0
    আল্লাহ জীবনে একবার হলেও আপনার প্রিয় হাবিবের রওজা মোবারক জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন