পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ বিমানের জনপ্রিয় স্লোগান ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’র মতোই ছোট হয়ে এসেছে সার্চ কমিটির তালিকা। নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য পাওয়া ৩২২ নাম যাচাই বাছাই করে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আজকের বৈঠকে সেই তালিকা কেটেছেঁটে ১০ জনে নামিয়ে আনবেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি। প্রেসিডেন্টের হাতে তালিকা তুলে দেয়ার আগে আরো ‘দুয়েকটি’ সভায় বসতে হবে বলে জানিয়েছেন কমিটিকে সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন। তবে প্রেসিডেন্টের হাতে ১০টি নাম তুলে দেয়ার আগে নামগুলোর তালিকা প্রকাশ করবে কি-না তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সার্চ কমিটি একের পর এক বৈঠক করলেও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা বন্ধ হয়নি। বরং সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রতিদিন বিতর্ক হচ্ছে।
সার্চ কমিটির বৈঠকের পর ২০ জনের নামের তালিকা করা হয়েছে এমন ঘোষণা দেয়ায় সবার মধ্যে আগ্রহ সংক্ষিপ্ত তালিকায় সৌভাগ্যবান ২০ জনের মধ্যে কারা রয়েছেন? সার্চ কমিটি সে তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে সবার জানার আগ্রহ নামগুলোতে কারা রয়েছেন? গতকাল দিনভর গণমাধ্যম অফিসে ফোন করে বিভিন্নজন জানতে চান ২০ জনের তালিকায় কারা রয়েছেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক-আগ্রহ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। প্রথম থেকেই সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দাবি করেছে তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। এমনকি ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের হাতে জমা দেয়ার দুই থেকে তিন দিন আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে তা নিয়ে মানুষ বিচার বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু নামগুলো প্রকাশ করা হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিতর্ক চলছে। কিন্তু এ নিয়ে এই প্রথম মুখ খুলেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তি নেই। সরকার এবং আমলারা একত্রিত হয়ে গেছে। ফলে সার্চ কমিটি বলুন আর অনুসন্ধান কমিটি বলুন কেউ নিরপেক্ষ খুঁজে বের করতে পারবে না। দেশ সর্বগ্রাসী সঙ্কটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রের ভগ্নদশা। জনগণের দাবি যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন করা; ঠিক তখন সরকার দেশ ও জাতির বিবেককে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়ন করেছে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। যা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন বলে প্রচার করা জাতির সঙ্গে তামাশা ও এক মহা প্রহসনমাত্র। ড. আকবর আলী খান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেও একা কিছু (নিরপেক্ষ নির্বাচন) করতে পারবে না। আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে। বর্তমানে সরকার এবং আমলা এক হয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা তারা সব একত্রে কাজ করে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেও তারা একা কিছু করতে পারবে না। বলা হচ্ছে সার্চ কমিটি দিয়ে নির্বাচনী সমস্যা সমাধান করা যাবে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজের সব নেতৃবৃন্দ সার্চ কমিটিতে আছেন। আমার সার্চ কমিটির ওপর কোনো আস্থা নেই। এর কারণ হচ্ছে, তারা সবাই দল করেন। আর যদি দলও না করেন তাহলেও কোনো কাজ হবে না।
গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির পঞ্চম বৈঠক করেছে। পৌনে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি ওবায়দুল হাসান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে কমিটির কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, সভায় আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুসারে প্রস্তাবিত নামসমূহ থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। আগামী দু একটি সভায় চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। সেজন্য আজ রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় কমিটি আবারও বসবে।
সংবাদ সম্মেলনে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা কখন পাওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আরও দুয়েকটা মিটিং হবে। এরপর যাবতীয় সব আপনারা জানতে পারবেন।
আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কমিটির সদস্য হাই কোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার ফলাফল বেহাত না করতে তিনটি কাজ করছে। সরকার অনুগত লোকদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। তিনি আশঙ্কা করেন, এর মাধ্যমে একটি অনুগত ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং পেপার অডিট ট্রেইল ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের মাধ্যমে আসল কারচুপি হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীন নির্বাচন হলে সেখানে ড. কামাল হোসেন বা আকবর আলি খানকে নির্বাচন কমিশনার করা হলেও ভোট সুষ্ঠু হবে না।
সংসদে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন পাস এবং প্রেসিডেন্ট এই সার্চ কমিটি করে দেয়ার পর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মোট পাঁচ দফা বৈঠক করেছেন, আর বিশিষ্টজনদের নিয়ে বসেছেন তিন দফা। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনায় ৩২২ জনের নামের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে। ওই তালিকায় অধিকাংশই ছিলেন অধ্যাপক, বিচারপতি, সাবেক সচিব, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তবে সেখান থেকেই যে ১০ জনের তালিকা করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা আইনে নেই। কমিটি নিজস্ব বিবেচনা থেকেও তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে।
আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি পদের জন্য ২জন এবং নির্বাচন কমিশনারের ৪টি পদের জন্য ৮ জনের নাম তারা প্রস্তাব করবে প্রেসিডেন্টের কাছে। তালিকায় ২জন নারীর নাম থাকবে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তার তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে; কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে অন্তত ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ওই তালিকা থেকে ৫ জনকে বেছে নিয়ে প্রেসিডেন্ট গঠন করবেন ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে একজন হবেন সিইসি, বাকিরা নির্বাচন কমিশনার। আর তাদের উপরই থাকবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি এবং বিএনপি ভাবাপন্ন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পছন্দ মতো নির্বাচন কমিশন হবে না সেটা আমরা বুঝতে পারছি এখন থেকেই। কিন্তু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি আমাদের উপহার দেবে। সেই নির্বাচন কমিশন আগামী দিনে যথা সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মৃত ইস্যু। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে আর কখনো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্চ কমিটি বসেছে। ৩ শতাধিক নামের তালিকা তাদের কাছে জমা হয়েছে। সংবিধান তাদের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব দিয়েছে সে অনুযায়ী তারা প্রেসিডেন্টের কাছে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দেবেন।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নতুন ইসি গঠন করা সম্ভব না হলে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হবে। প্রথমত অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া ইসি পরিচালনা করা কঠিন হবে। তাছাড়া দলবাজ ও অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্থ্য করা যে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। কারণ বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তাতে মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিষেশ করে দিনের ভোট রাতে করায় ইসির ইমেজ তলানিতে নেমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন ইসির জন্য আগামী দিনগুলোতে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রথম থেকেই এই সার্চ কমিটির গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি রয়েছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনআস্থায় না থেকে কৌশল অবলম্বন করলে কী ঘটে তা আমরা কে এম নূরুল হুদা কমিশনের ব্যর্থতায় দেখতে পেলাম। এই সার্চ কমিটির কাছে মানুষ আর এমন ব্যর্থতা দেখতে চায় না। যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের নাম এবং প্রস্তাবকারীর নাম প্রকাশ করতে হবে আগে। তাহলে বোঝা যাবে কমিশন গঠন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না। কারণ অতীতের দলবাজ ইসির কারণে উৎসব-আনন্দের পরিবর্তে ভোট-নির্বাচন এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনআস্থা তলানিতে ঠেকছে। মানুষ আর নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করে না। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের চিত্র তো এটি হতে পারে না। এ অবস্থা থেকে মানুষ রেহাই চাইছে। চাপা ক্ষোভ সর্বত্রই। হয়তো ভয়ে বলতে পারছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।