Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মূল কমিটির নাগাল না পেয়ে এবার উপ-কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির নাগাল না পেয়ে এবার সর্বশেষ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের পদ প্রত্যাশীদের লবিং, দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
বর্তমান উপ-কমিটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচশত পদ থাকলেও সম্মেলনে সহ-সম্পাদকের পদ নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলের গঠনতন্ত্র মেনে সহ-সম্পাদকের পদ একশ’র মধ্যে রাখার।
গেল সপ্তাহে আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমÐলীর প্রথম বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সর্বোচ্চ একশ’টি করার যে বিধান রয়েছে, আমরা তার বাইরে যাবো না। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
সাধারণ সম্পাদকের এ ঘোষণার পর দলের সর্বশেষ পদ-পদবির এ ধাপে জায়গা পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যায়। বিগত কমিটিতে যারা এ পদে ছিলেন তারাসহ নতুনরাও সহ-সম্পাদক পদে স্থান পেতে সিনিয়র নেতাদের কাছে নিয়মিত ধর্ণা দিচ্ছেন। চালাচ্ছেন ব্যাপক লবিয়িং।
প্রসঙ্গত, সহ-সম্পাদকের সংখ্যা একশ’টি হলেও বিদায়ী কমিটিতে তা অনুসরণ করা হয়নি। প্রথমে ওই কমিটি ঘোষণার সময় সহ-সম্পাদক পদে ৬০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দফায় দফায় আরও নাম সংযোজন করা হয়। অভিযোগ ছিল সহ-সম্পাদকের পদ পাঁচশ’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও দলের মধ্যে অনেক সমালোচনা ছিল। এরই প্রেক্ষিতে নতুন কমিটিতে এবার সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের নতুন এ সাধারণ সম্পাদক
এবার দলের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের পদ গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদ কমানোর সিদ্ধান্ত দলের কিনা জানতে চাইলে হানিফ বলেন, এটা আমাদের আগেরই সিদ্ধান্ত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহ-সম্পাদক করা হবে। আর সেটা একশ’র মধ্যেই রাখা হবে।
এদিকে, মূল কমিটি ঘোষণার পর দলে স্থান পাওয়ার সর্বশেষ ধাপ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে নেতাদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়েও ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায়, কার্যালয়ের বাইরে বসার স্থানে এবং সভাকক্ষে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই গেল উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও নতুন করে জায়গা প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা লবিংয়ের জন্য দৌড় শুরু করেন। বর্তমানে সেই দৌড় আরও বেড়েছে। তারা সকাল-সন্ধ্যা সময় দিচ্ছেন দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে, সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ জানান, দপ্তর সেলের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা ৪৬৭ জন। আমাদের দপ্তরে এই ৪৬৭ জনের তালিকা আছে। এর বাইরে আর কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
বিগত সময়ে দলের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকদের নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আসছিলেন বিগত কমিটির সভাপতিমÐলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি একাধিকবার এ বিষয়ে বলেন, উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে সেই বলে আমি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এটা তারা বলে না। তিনি বলেন, আগামী সম্মেলনে উপ কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা একশর মধ্যে কমিয়ে আনা হবে।
গেল বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ নেতাই সহ-সম্পাদকের পদ ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতারা চাচ্ছেন সহ-সম্পাদকের পদে নিজের নাম লেখাতে।
ছাত্রলীগের সাবেক একছাত্র নেতা বলেন, যারা দীর্ঘদিন যাবৎ দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা, পরিশ্রম, বিশ্বস্তা এবং আনুগত্যের মাধ্যমে বিভাগ ভিক্তিক মূল্যায়ন চাই আমরা।
অপর দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির একজন সহ-সম্পাদক বলেন, শেষ পর্যন্ত যেহেতু কমিয়েই ফেলা হবে তবে কেন এত লোককে এই পদ দেয়া হয়েছিল। আমরা পদ না পেলেও দলের জন্য কাজ করে যাব। আর এখন যারা বাদ পড়বে তারা পরে কি পরিচয় দেবেন সেটা নিয়েও ভাবার দরকার আছে।
২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলের পর ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে উপ-কমিটির নেতাদের নাম প্রকাশ হয়। সে সময় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে ৬৬ জনের নাম এসেছিল। এরপর কয়েক ধাপে এই সংখ্যা বাড়ে ৪৬৭ জন হয়। তবে শোনা যায়, বিগত কমিটিতে উপসহ-সম্পাদকের পদ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এসব পদধারীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাÐের জন্মও দেন বলে দলে অভিযোগ আছে।
বিগত উপ-কমিটির বেশ কয়েকজন সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবার আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। এরপরও অনেক ত্যাগী ও যোগ্য বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখনও রয়েছেন দলীয় পদ-পদবীর বাইরে। তারা এখন ‘অন্তত’ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির বর্তমান সহ-সম্পাদকসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে রয়েছেন, নজরুল ইসলাম বাবু, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, আবুল কালাম আজাদ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা শামীম, মাহফুজুল হায়দার রোটন, সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।
ফরিদপুর অঞ্চলের বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার। ময়মনসিংহ অঞ্চলে অজয় কর খোকন, মাহবুবুল হক শাকিল, মোরশেদুজ্জামান সেলিম, আলমগীর হাসান, রাশেদুল মাহমুদ রাসেল। বরিশাল অঞ্চলের ইসহাক আলী খান পান্না, শাহ আলম, একেএম আজিম, বলরাম পোদ্দার। খুলনা অঞ্চলের সাইফুজ্জামান শিখর, অশিত বরুন বিশ্বাস, বদিউজ্জামান সোহাগ। রংপুর অঞ্চলের ইকবালুর রহিম, মাহমুদুল হাসান রিপন। রাজশাহী অঞ্চলের শাখাওয়াত হোসেন শফিক, মাজহারুল ইসলাম মানিক, আরিফুজ্জামান টুটুল, খ ম হাসান কবির আরিফ।
এসব নেতার বাইরেও উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের পদ পেতে কম পক্ষে হাজারেরও বেশি নেতা প্রতিদিন সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সময় দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজ নিজ অবস্থান থেকে চালাচ্ছেন লবিয়িং।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মূল কমিটির নাগাল না পেয়ে এবার উপ-কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ