বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নেকী এবং বদী, পাপ ও পুণ্যের আলামত পুণ্যবান ও বদকার লোকদের চেহারায়ও ফুটে ওঠে। চেহারা দেখে কোনো কোনো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি দুনিয়াতেই তা উপলব্ধি করতে পারেন। মুফাসসেরীনদের ইমাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) নেকী এবং বদীর বিশ্লেষণ এভাবে করেছেন। তিনি বলেন : (ক) নিশ্চয়ই নেকী অন্তরের জ্যোতি, (খ) চেহারার আলো, (গ) দেহ বা শরীরের শক্তি, (ঘ) রিযিক বা জীবিকার প্রশস্ততা বা প্রাচুর্য এবং (ঙ) সৃষ্টজীবের অন্তরের ভালোবাসা। আর বদী বা গোনাহ হলো : (ক) অন্তর ও চেহারার অন্ধকার, (খ) দেহ বা শরীরের দুর্বলতা এবং (গ) সৃষ্টজীবের অন্তরের ঘৃণা বা শত্রুতা।
তবে এ সকল আলামত তার অধিকারীদের মাঝে স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে। তখন কোনো প্রকার অস্পষ্টতা ও অন্ধকার থাকবে না। সেদিন সমস্ত গোপনীয়তা ও রহস্য উন্মোচিত হয়ে যাবে। এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তুমি কিয়ামতের দিন তাদের মুখ কালো দেখবে। উদ্ধৃত ও দুর্বিনীতদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়? এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের উদ্ধার করবেন তাদের সাফল্যসহ; তাদের অমঙ্গল স্পর্শ করবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সূরা যুমার : ৬০-৬১)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরো ইরশাদ করেছেন : ‘সেদিন কতগুলো মুখমণ্ডল হবে শ্বেতবর্ণ এবং কতগুলো মুখমণ্ডল হবে কৃষ্ণবর্ণ, অতঃপর যাদের মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ হবে। (তাদেরকে বলা হবে) তবে কি তোমরা বিশ্বাস স্থাপনের পর অবিশ্বাসী হয়েছ? সুতরাং তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করো যেহেতু তোমরা অবিশ্বাস করেছিলে। আর যাদের মুখমণ্ডল শুভ্র (সাদা) হবে, তারা আল্লাহ পাকের করুণার অন্তর্ভুক্ত হবে। তারা তন্মধ্যে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৬-১০৭)।
এ কারণেই মহান আল্লাহপাক গোনাহ ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা প্রকাশ্য পাপকর্ম পরিত্যাগ করো এবং পরিত্যাগ করো গোপনীয় পাপকার্মও।’ (সূরা আনয়াম : ১২০)। তাই, প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সকল প্রকার গোনাহ পরিত্যাগ করা অপরিহার্য। বিশেষ করে অন্তরের গোনাহ ও ভুল-ত্রুটি। কারণ তা খুবই আকস্মিক এবং বড়ই প্রভাব বিস্তারকারী।
আর এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হলো রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করা, যা সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়। অনুরূপভাবে অহমিকা, বড়াই ও দম্ভ সহকারে কোনো কাজ করলে তা আমলকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে। তাছাড়া কোনো কিছু আত্মসাৎ করা, হিংসা ও বিদ্বেষ করা এবং পরশ্রী কাতরতা সওয়াবকে কমিয়ে দেয় এবং গোনাহ বৃদ্ধি করে।
বস্তুত যেসব গোনাহ অন্তরকে নষ্ট করে দেয় এবং দেহ ও মনের আলো নিভিয়ে দেয় তা হলো হারামকৃত জিনিসে বা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তাঁর ঈমানদার বান্দাহদের তাদের দৃষ্টিকে সংযত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে রাসূল! আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটাই তাদের জন্য উত্তম, তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহপাক অবহিত আছেন।’ (সূরা নূর : ৩০)।
হাদিসে কুদসীতে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ‘দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিষাক্ত শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তার পরিবর্তে তাকে সুদৃঢ় ঈমান দান করব, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে।’ (তাবারানী)।
এই হাদিসের অর্থ ও মর্মের দিকে লক্ষ করে ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা খালেদ বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আলমুসলেহ বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি তার নজর বা দৃষ্টিকে হারামে পতিত হওয়া থেকে সংরক্ষণ করল আল্লাহপাক তার দৃষ্টিকে কার্যকর এবং অন্তরকে নির্মল, সুস্থ, পরিশুদ্ধ এবং শক্তিশালী করে দিবেন। তাই, তোমরা নিজেদের নজরকে হারাম থেকে হেফাজত রাখো। কেননা কোনো কোনো দৃষ্টি নিক্ষেপকারীর অন্তরকে বুলবুল পাখীর ন্যায় পাগলে পরিণত করে দেয়। (সালাহুল কুলুব : পৃ. ৩৬)।
মোটকথা দুনিয়া এবং আখেরাতে নিজেদের চেহারার ঔজ্জ্বল্য যারা ব্যাহত রাখতে চান, তাদের উচিত, বেশি নেক আমল করা এবং পাপ কাজকে সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর তোমরা যা কিছু সৎকাজ করো, আল্লাহপাক তা জানেন।’ (সূরা বাকারাহ : ১৯৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।