নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বসবাস করেন সুবর্ণা আক্তার। রাজধানীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। এর বাইরে সুবর্ণা মূলত চোর চক্রের সদস্য। গৃহকর্মী সেজে বাসা-বাড়ির কাজ নেয় আর সুযোগ বুঝে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মুল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়ে যায় সুবর্ণা।
গত কয়েক মাস আগে সুবর্ণা বনানী এলাকায় একটি বাসায় কাজ নেয়। ওই বাসায় থাকেন শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর থাকেন। কিছুদিন পর ওই বাসা থেকে স্বর্ণালংকার খোয়া যায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কড়াইল বস্তি ও শাহাজাদপুর থেকে চোর চক্রের সদস্য সুবর্ণা ও তার সহযোগী রবিনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এসএম রেজাউল হক বলেন, এই ঘটনায় ৭ ফেব্রæয়ারি বনানী থানায় একটি চুরি মামলা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। গত রোববার রাজধানীর বনানী কড়াইল বস্তি ও শাহজাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গৃহকর্মী সুবর্ণা আক্তারসহ তার সহযোগী রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার। এরপর, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণালংকার বুঝিয়ে দেন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।
তদন্তের বিষয়ে এডিসি এসএম রেজাউল হক বলেন, ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যেকোনো সময় বনানীর ওই বাসা থেকে স্বর্ণের চুড়ি, লকেটসহ বেশ কিছু স্বর্ণালংকার চুরি হয়। রোববার বিকেলে কড়াইল বস্তি থেকে সুবর্ণাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ১ ভরি ৭ আনা ৫ রতির একটি স্বর্ণালংকার ও ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। পরে সুবর্ণার দেওয়া তথ্যমতে শাহজাদপুরের একতা জুয়েলার্সের রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ও ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে গোয়েন্দা এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। সুবর্ণা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিত্তবানদের বাসায় কাজের বুয়া সেজে কাজ করতে যায়। কাজ করার সময়ই স্বর্ণালংকার, টাকা ও মূল্যবান সম্পদের প্রতি দৃষ্টি রাখে। কিছু দিন কাজ করার পর সুযোগ বুঝে বাড়ির মালিকের অগোচরে বাসার স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সম্পদ চুরি করে পালিয়ে যায়। পরে চোরাই এসব স্বর্ণালংকার গ্রেফতারকৃত রবিনের কাছে বিক্রি করে দিতেন।
গৃহকর্মী নিয়োগে ডিএমপির ১৪ সুপারিশ: গৃহকর্মীর বেশে বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে চুরির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। অনেক ক্ষেত্রে কথিত গৃহকর্মীর হাতে ঘটছে খুনের ঘটনাও। এমন অবস্থায় গৃহকর্মী নিয়োগে ১৪টি সুপারিশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কাজের বুয়া/কাজের লোক নিয়োগের আগে তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তি, ব্যক্তির পরিচয় ও তার জাতীয় পরিচয় পত্র নিন। সব তথ্য নেওয়ার পর নিকটস্থ থানায় কাজের বুয়া/ কাজের লোকের তথ্য দিন এবং নিজের কাছে রাখুন। এরফলে সে অতীতে কোনো অপরাধ করে থাকলে পুলিশ তাকে সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। অতীতে সে কোথায় কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য নিন এবং কাজ ছাড়ার কারণ জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পূর্বের কাজের ঠিকানায় যোগাযোগ করে তার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। কাজের বুয়া/কাজের লোকের পরিবারের তথ্য নিন।
তার স্থায়ী ঠিকানা ও পরিবারে কে কে আছে তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, সে আসলে ওই ঠিকানায় বসবাস করে কি না। এত কিছু খোঁজ খবর অনাবশ্যক মনে হতে পারে, কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলে তখন আফসোস হবে। বর্তমানে ডিএমপি নগরীর সব মানুষের তথ্য সংরক্ষণে কাজ করছে। ডিএমপি কর্তৃক নির্ধারিত তথ্য ফরমে আপনার কাজের বুয়া/কাজের লোকের তথ্য পূরণ করে থানায় জমা দিন।
কাজের বুয়া/কাজের লোক নিয়োগের পরে যা করবেন: নিয়োগের পর তার গতিবিধি লক্ষ্য করুন। তার চালচলনে আপনি বুঝতে পারবেন সে আসলে কেমন ব্যক্তি। বাসার মেইন গেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে পারেন। এতে করে আপনার বাসায় কোনো অপরিচিত লোকের আনাগোনা হচ্ছে কি না তা দেখা সহজ হবে। প্রয়োজনে ঘরের ভেতরেও সিসি ক্যামেরা লাগানো যেতে পারে। যাতে আপনার অনুপস্থিতিতেও কাজের বুয়ার কর্মকাÐ মনিটর করতে পারেন। বাসায় মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা কাজের বুয়া/কাজের লোকের অগোচরে রাখুন। আপনার লকারের চাবি সবসময় আপনার কাছে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে যে রুমে লকার/আলমারি রয়েছে সে রুম আলাদাভাবে তালাবদ্ধ করে রাখুন। কাজের বুয়া/কাজের লোককে একা রেখে সবাই বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। বাচ্চা রেখে গেলে সঙ্গে আরও একজনকে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই বাচ্চাকে একা রেখে যাবেন না। কাজের বুয়ার চাহিদা বুঝার চেষ্টা করুন। তাতে করে সে লোভী কি না জানতে সহজ হবে।
সন্দেহজনক কারোর সঙ্গে কাজের বুয়া মোবাইলে কথা বলে কি না অথবা তার কাছে সন্দেহজনক কেউ দেখা করতে আসে কি না এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। বাড়িতে গ্যাসের চুলা, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহারে কাজের বুয়া/কাজের লোক সতর্ক রয়েছে কি না লক্ষ্য করুন। অসতর্কতার ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কাজের লোক/বুয়াকে নিয়ে কোথাও ভ্রমণে গেলে সবসময় সঙ্গে সঙ্গেই রাখুন। সে হারিয়ে গেলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আপনাকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আপনার বাসার কাজের লোক/বুয়ার সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন।
ডিএমপি জানায়, সচেতনতাই রুখতে পারে কাজের বুয়া/ কাজের লোকের অপরাধের তৎপরতা। কাজের বুয়া/কাজের লোককে অতি বিশ্বাস না করাই শ্রেয়। তাদেরকে নজরদারিতে রাখতে হবে নিজেজের স্বার্থেই। এছাড়া, যে কোনো প্রয়োজন ও সমস্যায় নিকটস্থ থানা বা ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।