পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৭ জীবন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৬ সালের ২৮ জুন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। এরপর ৬ বছর হতে চললেও অনুসন্ধানগুলো নথিভুক্ত (দায়মুক্তি) করেনি। মামলাও দায়ের করেনি। আইনের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কূটকৌশল সর্বোপরি দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘বিশেষ বোঝাপড়া’র কারণেই কার্যত বৃহৎ এই অনুসন্ধান ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
সূত্রটি জানায়, ১৭টি বীমা প্রতিষ্ঠান ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঝে এই অর্থ ভাগাভাগি হয়। এভাবে বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিগতভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হন। অনেক অর্থ বীমা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেয়।
বিপুল অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর, হস্তান্তর এবং রূপান্তর করে। বীমা-বিধির বাইরে স্থাবর সম্পত্তিও খরিদ করে। বিদেশে অর্থ পাঠায় অনেকে। ইত্যকার তথ্যসম্বলিত অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে নেমে সংস্থাটি বীমা ব্যবসার কথিত ‘নিয়ন্তা’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদেরও বিপুল অবৈধ সম্পদের অর্জনের তথ্য পায়। প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে হাত দেয়ার একপর্যায়ে রহস্যজনক কারণে হিমাগারে চলে যায় অনুসন্ধানটি।
অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় রেকর্ডপত্র সংগ্রহে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এ ঘটনায় বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। দুদকের অনুসন্ধান থেকে বাঁচতে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো তড়িঘড়ি করে বিশেষ অডিট শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই অদৃশ্য ইশারায় থেমে যায় দুদক কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স, রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, পদ্মা ইসলামী লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, সন্ধানী লাইফ, প্রগতি লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সানলাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, মেঘনা লাইফ, ডেলটা লাইফ, রূপালী লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, বায়রা লাইফ এবং ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জীবন বীমা সেক্টরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা খাতে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ‘খরচ’ দেখায়। যদিও বীমা আইন-২০১০ এর (৬২) ধারা অনুযায়ী ‘অবচয়ন’কে ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ থেকে বাদ দিয়ে করা হয়েছে এ হিসেবে। ‘অবচয়ন’কে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করে হিসেব করলে আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ হবে চার গুণ।
‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ এবং ‘অবচয়ন’র অর্থ মূলত: প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী এবং পদস্থ কর্মকতাদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এর মধ্যে গ্রাহকের অংশই রয়েছে ৯০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
দুদক সূত্র জানায়, তৎকালীন উপ-পরিচালক জালালউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টিম বীমা খাতের এই আত্মসাৎ এবং দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে। টিমের অপর সদস্য ছিলেন তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। অনুসন্ধানটি তদারক করছিলেন পরিচালক (বিশেষ অনু:-তদন্ত-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ৬ বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পদস্থ কর্মকর্তা এবং অডিট প্রতিষ্ঠান মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১১ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হলে হঠাৎ করেই থেমে যায় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। পরে জানা যায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আর্থিক খাতের বড় বড় রাঘব বোয়াল। তাদের অদৃশ্য ইশারায় অনুসন্ধানটি বন্ধ হয়ে যায়। অবৈধ অর্থেরও ছড়াছড়ি হয় অনুসন্ধান বন্ধে। দুদকের একশ্রেণির কর্মকর্তা সুপরিকল্পিতভাতে বীমার অনুসন্ধান নিয়ে তৎকালীন কমিশনকে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনও দাখিল করেন। বিগত কমিশনও বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি।
বীমা আইনে অভিজ্ঞ অ্যাডভোকেট এমএম আনোয়ার হোসেন জানান, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করলে বীমা কোম্পানি এবং কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে পারে না। এটি ওই সংস্থার একটি আইনগত সীমাবদ্ধতা। ফলে এই খাতের কোনো দুর্নীতির বিষয়েই আইডিআরএ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এই দুর্বলতার সুযোগে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থআত্মসাৎ, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির মতো গুরুতর অপরাধ করলেও কোনো শাস্তি ভোগ করতে হয় না। আইনি দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা কার্যত অব্যাহতি পেয়ে যান।
বীমা খাতটি বিকাশের ঊষালগ্ন থেকেই এক ধরনের ইনডেমনিটি (দায় থেকে অব্যাহতি) উপভোগ করছিল। এ কারণে দুদকের অনুসন্ধানকে বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা সহজভাবে গ্রহণ করেনি। তাই দুদকের অনুসন্ধানকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা নানা ফন্দি আঁটতে থাকে। এক পর্যায়ে মওকা পেয়েও যায়। ফলে ছোট একটি অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে দুদকের ‘অনুসন্ধান-এখতিয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বীমা মালিকরা।
দুদক সূত্র জানায়, প্রক্রিয়ার মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন খুলনা জোনাল ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রাহকের ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৯ টাকা আত্মসাৎ। অভিযোগটি অনুসন্ধানে কমিশন দুদকের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দুদকের ওই কর্মকর্তা এই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন যে, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানি।
সংস্থাটির মালিকানায় সরকারের কোনো অংশ নেই। কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। এ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪০৮ ধারা হবে বিধায় অভিযোগটি কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। এই যুক্তির ভিত্তিতে ওই কর্মকর্তা অভিযোগ থেকে সাইফুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করেন। আর এই যুক্তিতেই জীবন বীমা কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অনুসন্ধান ও তদন্ত বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে দুদক কোনো বীমা কোম্পানির বিষয়ে অনুসন্ধান-তদন্ত করতে পারবে নাÑ এই তথ্যকেই ভিত্তি ধরে বিষয়টি আইডিআরএ’র ঘাড়ে ঠেলে দেয়। এ প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তৎকালীন কমিশন সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন আইডিআরএ’কে বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত (স্মারক নং-দুদক/বি.অনু ও তদন্ত-২/৫১-২০১৬/২৫০৭৪/১(২) করতে বলে। যদিও ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’টি নেয়ার দায়িত্বটি আইনত দুদকের।
এদিকে মেঘনা লাইফের অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে দুদক পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-৭) খুলনা এ বিষয়ে মতামত চেয়ে দুদকের আইন অনুবিভাগে পাঠিয়ে দেন। আইন অনুবিভাগ পরে এই মর্মে মতামত (নথি নং-০০.০১.৪০০০.৬৪২.০১.০০৭.১৯) দেয়। তাতে বলা হয়, বীমা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয়ের বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিয়ন্ত্রণে ও বীমা আইন-২০১০ এর ৮(১) ধারা অনুযায়ী বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়ে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করতে হয়। বীমা আইন-২০১০ এর ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এর অধীনে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বীমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্সের আবেদন করে।
আইন মতে, পাবলিক লি: কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার বিক্রি করে। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি কোম্পানি আইনের আওতায় গঠিত একটি ‘পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি’ এবং বীমা সংক্রান্ত আইন ও কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। ফলে এ কোম্পানি কিংবা এই কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ইন্ডিপেন্ডেন্ট মার্চেন্ট/ফ্যাক্টর/ব্রোকার/এজেন্ট হিসেবে গণ্য হবেন। তাদের ক্ষেত্রেও দুদকের তফসিলভুক্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা প্রযোজ্য হবে।
এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর আওতায় মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধে অনুসন্ধান/তদন্ত করা যেতে পারে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মার্চেন্ট এবং জোনাল ইনচার্জ মার্চেন্ট এজেন্ট। এ কারণে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের জোনাল ইনচার্জের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানাধীন অভিযোগটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মার্চেন্ট/ফ্যাক্টর/ব্রোকার/এজেন্ট হিসেবে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা বলে দুদক কর্তৃক অনুসন্ধান/তদন্ত যোগ্য হবে। দুদকের এই সিদ্ধান্তের ফলে বীমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান-তদন্ত করতে পারবে নাÑ মর্মে সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও ধূম্রজালের অবসান ঘটে।
জানা গেছে, বীমা কোম্পানিগুলোতে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হলেও যাতে কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা না যায় এ লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হয় এ বিভ্রান্তি। তবে বিভ্রান্তি দূর হওয়ার পর বর্তমান কমিশন ইতোমধ্যেই বীমা প্রতিষ্ঠান এবং এর উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দফতরে সংঘটিত আত্মসাৎ, জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এরই মধ্যে বীমা বিষয়ক একাধিক অনুসন্ধান শুরু করেছি। কোনো অনুসন্ধানই পরিকল্পিতভাবে ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।