বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দ্বীনের অস্তিত্ব পূর্ণাঙ্গ দাওয়াতের ওপর নির্ভরশীল। দাওয়াত বা ধর্ম প্রচারে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ধর্ম প্রচারে তাঁর সময়ের আধুনিক সব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। তখনকার সময়ে কুরাইশরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রচারের প্রয়োজন হলে সাফা পাহাড়ে উঠে চিৎকার করত। রাসূলুল্লাহও (সা.) প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতিতে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে লোকজনকে একত্র করে ধর্ম ও দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি ছিলেন আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতির স্বর্ণযুগের মানুষ। তাই তিনি বিশুদ্ধ ও অলঙ্কারপূর্ণ আরবি ভাষা ব্যবহার করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আনা আফসাহুল আরব’ অর্থাৎ, আমি সর্বাধিক বিশুদ্ধ আরবিভাষী।
যুগে যুগে প্রত্যেক নবী-রাসূলই ধর্ম প্রচারে তাদের সময়কার যুগশ্রেষ্ঠ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার করে দাওয়াত প্রচার করে গেছেন। মুসা (আ.)-এর সময় জাদু বিদ্যার জয়জয়কার ছিল। তিনি জাদুর বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ঈসা (আ.)-এর সময় চিকিৎসাবিদ্যার প্রভাব ছিল। তাই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসা বিদ্যার মাধ্যমে দাওয়াতি মেহনত করেছেন ।
আজ প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ সময়ে মানুষকে আধুনিক পদ্ধতিতে দাওয়াত দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এতে করে প্রযুক্তি নির্ভর মানুষ সহজে দ্বীন জানতে, বুঝতে ও আমল করতে পারবে। এ পদ্ধতিতে ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শ বিশ্ববাসীর কাছে যেমন দ্রুত পৌঁছবে তেমনি সহজে ফুটে উঠবে ইসলামের উদার, অসহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমাদের প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাক প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়’ (সূরা নাহল : ১২৫ )।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে আর তারাই হলো সফল’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৪ )। হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে কোনো ভালো কাজের দিকে আহ্বান করে, তাকে তার অনুসারীর ভালো কাজের সমান সওয়াব দেয়া হয়; অথচ ঐ ব্যক্তির সওয়াব ও কোনো অংশে কমে না। আর, যে খারাপ খারাপ কাজের দিকে মানুষকে আহ্বান করে, তার ওপর তার অনুসারীর খারাপ কাজটির সমান গুনাহ দেয়া হয়। অথচ তার অনুসারীর পাপের অংশও এতটুকু কমে না।’ (মুসলিম) ।
অন্যত্র এরশাদ হয়, ‘আল্লাহর শপথ! তোমার মাধ্যমে একটি লোকও যদি হিদায়াত লাভ করে, তবু তা লাল উটনীর চেয়েও উত্তম’ (লাল উটনী তৎকালীন সময়ে মানুষের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এর দ্বারা যে কোনো প্রিয় বস্তু বোঝানো হয়েছে) (বুখারী : ২৭৮৩)। আল্লাহপাক অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম আর কার কথা হতে পারে? ( সূরা হা মীম সিজদা : ৩৩ ) ।
সুতরাং এই আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলামের শাশ্বত বাণী গোটা দুনিয়ার প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছে দিতে আমরা ঘরে বসেই মেইল, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, ইউটিউব, টুইটার, টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিসহ আরো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ও কল্যাণকর ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াতের কার্যক্রম চালাতে পারি। তবে অবশ্যই সর্বদা কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। হতে হবে শতভাগ ঈমান, তাকওয়া ও ইখলাসপূর্ণ। এ জন্য আহ্বানকারীকে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন, হাদিস শরিফ, ফিকহ তথা ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি সমসাময়িক জ্ঞান, ভাষাজ্ঞান এবং প্রযুক্তির জ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। থাকতে হবে প্রযুক্তি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।