হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আফতাব চৌধুরী : সম্মান, যশ, প্রতিপত্তি সব পেয়ে আমরা সুখি নই, সবাই বড় বেশি অসুস্থ। আমাদের এ অসুস্থতা মনে। তাই সামাজিকভাবে আমরা যতটুকু এগোচ্ছি তার চেয়ে মনের দিক দিয়ে ক্রমশ কয়েকগুণ পিছিয়ে যাচ্ছি। মন-মানসিকতার এহেন পশ্চাদগামিতায় বর্তমান সময়ে মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকটতর হয়ে উঠছে। সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণা এটা প্রমাণ করছে যে, আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি বিকশিত করছে কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়রোধে যে মূল্যবোধের প্রয়োজন তার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে সর্বত্র। শিক্ষা মানুষকে প্রজ্ঞাবান করলেও বিবেকবান করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। ফলে কখনো কখনো আমরা এমন আচরণ করি যা আমাদের সমস্ত জ্ঞান-গরিমাকে সমাজের চোখে বড় বেমানান করে তোলে।
আধুনিক শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ লোক মা-বাবার প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি না। জীবনের পড়ন্তবেলায় আপন সন্তানের চরম অবহেলা অনাদরে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন, এমন হতভাগ্য মা-বাবার সংখ্যা এ দেশে নেহায়েত কম নয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সন্তানের কাছে বৃদ্ধ মা-বাবা বোঝাস্বরূপ, মন্তব্যটি শতকরা ১০০ ভাগ সত্য। যদিও আমরা চক্ষুলজ্জায় এ ধরনের অপ্রিয় সত্যকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারি না। তবু বলতে বাধা নেই যে, সন্তানের দ্বারা বৃদ্ধ বাবা-মা আকছার লাঞ্ছিত হচ্ছেন। আর শিক্ষিত সন্তানদের মধ্যে এ অসামাজিক প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ মূল্যবোধহীন শিক্ষা এসব শিক্ষিতদের নৈতিকতাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ফলে অবচেতন মনে তারা মা-বাবার কথা ভাবতে পারে না। অথচ আত্মকেন্দ্রিক সন্তানের চরম অবহেলাকে নিত্যসঙ্গী করে বেঁচে মা-বাবা একটি ক্ষণের জন্য সন্তানকে ভুলতে পারেন না। কারণ তাদের পক্ষে নাড়ির সম্পর্ক, রক্তের সম্পর্ককে কোন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় না।
মা-বাবার অনাবিল স্নেহ-মমতায় আমরা বড় হলাম, একটি সময়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলাম স্বমহিমায়, কিন্তু তারপর স্বার্থপরের মতো ভুলে গেলাম তাদের কথা যারা আমাদের পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখাল, নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়াল, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য যারা সমস্ত আরাম-আয়েশকে পায়ে ঠেলল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের শুভ চিন্তায় উদগ্রীব থাকল। এতকিছুর পর রিক্ত হাতে চলে যাওয়া মা-বাবাকে ন্যূনতম একটু প্রীতি-ভালোবাসা তাদের শেষ জীবনে দিতে পারি না আমরা। এ থেকে বড় স্বার্থপরতা আর কি হতে পারে? উল্লেখ করেছি, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত সন্তানের দ্বারা মা-বাবারা বেশি অবহেলিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি, বহু সন্তান রয়েছেন যারা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে বছরের পর বছর মা-বাবাকে ছেড়ে দিব্যি রয়েছেন। একবারও মা-বাবাকে দেখার তাগিদ অনুভব করেন না। অথচ একদিনের জন্য প্রিয়তমা স্ত্রী চোখের আড়াল হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অসংখ্য অশীতিপর মা-বাবা রয়েছেন যারা নিজ সন্তানকে মানুষ করে শেষ জীবনে সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষ আছেন যারা মা-বাবাকে দেখভালের দায়িত্ব নিতে চান না। এমনকি স্ত্রীর প্ররোচনায় মা-বাবাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন এমন মানবরূপী দানবদেরও দেখেছি। কিন্তু আশ্চর্য লাগে যে, হাজারো নিপীড়ন-নির্যাতন সত্ত্বেও মা-বাবা বলেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। আমি বিভিন্ন গ্রামে দেখেছি ছেলে নিজের আলাদা সংসারে চিত্তসুখে দিন কাটাচ্ছে অথচ প্রৌঢ়া মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে একমুঠো ভাতের সংস্থান করছেন। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ চোখের সামনে রয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলে দস্তুরমতো একটি বই লেখা যাবে। কিন্তু এসব চূড়ান্ত নির্লজ্জতার কাহিনী লিখে ঘুণে ধরা সমাজকে বদলানো সম্ভব নয়। কারণ আমরা যারা শিক্ষার দম্ভে বড়াই করে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছি অথবা বিদেশ থেকে বছরে কিছু টাকা পাঠিয়ে মা-বাবার আকুল সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকছি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অসভ্যরা আজ সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই মূল্যবোধের কথা বলে অযথা কালি, কাগজ এবং নিউজপ্রিন্ট নষ্ট করে লাভ নেই।
ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলছি, আমাদের সমাজে এমন অনেক সন্তান রয়েছেন যারা বিয়ের পূর্বে থাকেন মা-বাবার একান্ত অনুগত। কিন্তু বিয়ের উত্তরকালে সবকিছু বেমালুম ভুলে যান। এ কথা আমি বলছি না যে, মা-বাবা থেকে সন্তানকে সরিয়ে দেবার মূলে স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দায়ী ছেলেরা। কেননা, কেউ যদি তার বিবেক এবং দায়বদ্ধতার দরজায় তালা লাগিয়ে দেয় তাহলে অন্যের দোষ কোথায়? সবকিছুর পর এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, চরম নির্যাতিত হয়ে সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবারা মুখ খোলেন না অথবা আইন সচেতন নন। না হলে আইন অনুসারে প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক সন্তান মা-বাবাকে প্রতিপালন করতে বাধ্য। সন্তান প্রতিপালনে অবাধ্য হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারায় আইনি পথে খোরপোশ আদায় করতে পারেন অক্ষম-অসহায় মা-বাবা।
এটা কি অস্বীকার করা যায় যে, প্রতিটি মানব সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান অপরিসীম। মা অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সন্তান প্রসব করেন। সীমাহীন ধৈর্য্য ও অতুলনীয় মমতায় লালন-পালন করে সন্তানকে ধীরে ধীরে বড় করে গড়ে তোলেন। পিতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের ভরণপোষণের সংস্থান করেন। সহায়-সম্বল নিঃশেষ করে দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। সে পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে সর্বস্ব সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ করে নিজেরা অসহায় হয়ে সন্তানের পেছনে করুণার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন। নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে অসহায় মা-বাবাকে সন্তানের চরম অবজ্ঞা-অবহেলায় নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে মানবেতর দিন যাপন করতে হয়। অনেককে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়ে অপমানের গ্লানি নিয়ে শেষ জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। পৃথিবীর সকল ধর্মগ্রন্থে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বাধ্যকারী নির্দেশনা আছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন ও নবীজির হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় বহুবার বহুভাবে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। মাতা-পিতাকে কাছে পেয়ে যথাযথ সেবা শুশ্রƒষা, আদর-যতœ, সদ্ব্যবহার ও প্রশ্নাতীত আনুগত্য দিয়ে যারা জান্নাতে যাবার সুযোগ করে নিতে পারেনি তাদেরকে চরম দুর্ভাগা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্য ও রূঢ় আচরণ কবিরা গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করা, বিনয়, দরদ, মায়া-মমতার সাথে কথা বলতে নির্দেশ আছে। তাদের সাথে কখনো অসম্মান ও অভক্তিসূচক আচরণ করা যাবে না। বিভিন্ন মনীষীর জীবনী পর্যালোচনা করলে আমরা মাতৃভক্তির চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের অনন্য নজির দেখতে পাই। হজরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর মাতৃভক্তির কাহিনী কিংবদন্তি হয়ে আছে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের হুগলী নদী সাঁতরে অসুস্থ মাকে দেখতে যাবার কাহিনী আমাদের অসুস্থ মনে সুস্থতার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে এবং মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষায় মর্যাদা দেবার দাবিতে এদেশের মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। মাতৃভাষার প্রতি এই চরম আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নিজেদের আরামকে হারাম করে মা-বাবা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। তাই মা-বাবার প্রতি সন্তানের অগ্রহণযোগ্য আচরণ কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। সন্তানের অনাদর-অবহেলায় নির্যাতিত মা-বাবার সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবার অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে “মাতা-পিতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩” প্রণীত হয়েছে। সংসদ কর্তৃক প্রণীত এই আইনটি ২৭ অক্টোবর ২০১৩ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি লাভ করে। পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রণীত আইনটি বর্তমানে কার্যকর। এই আইনের বিস্তারিত বর্ণনায় যাওয়ার পূর্বে এর কিছু টার্ম সংজ্ঞায়িত করা দরকার। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে এই আইনে ‘পিতা’ অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের জনক। ‘ভরণপোষণ’ অর্থ খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান। ‘মাতা’ অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের গর্ভধারিণী; ‘সন্তান’ অর্থ পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থ্যবান পুত্র বা কন্যা; এই আইনের ৩(১) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩(২) ধারা মতে, কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সে ক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। ৩(৩) ধারা মতে, পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একই সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। ৩(৪) ধারা মতে, কোন সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তার বা ক্ষেত্রমতে, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না। ৩(৫) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তান তার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। ৩(৬) ধারা মতে, পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হতে পৃথকভাবে বসবাস করলে সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাদের বা ক্ষেত্রমতে, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। ৩(৭) ধারা মতে, কোন পিতা কিংবা মাতা বা উভয়ে, সন্তানদের সঙ্গে বসবাস না করে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সে ক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার বা ক্ষেত্রমতে, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা বা ক্ষেত্রমতে, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করবে। ৪(ক) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তান তাদের পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে এবং ৪(খ) মতে, মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে ধারা ৩ অনুযায়ী ভরণপোষণ প্রদানে বাধ্য থাকবে এই ভরণপোষণ পিতা-মাতার ভরণপোষণ হিসেবে গণ্য হবে। ৫ ধারায় পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করবার দ- সম্পর্কে বর্ণনা আছে। ৫(১) ধারা মতে, কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩-এর যে কোন উপধারার বিধান কিংবা ধারা ৪-এর বিধান লঙ্ঘন অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদ-ে দ-িত হবে। ৫(২) ধারা মতে, কোন সন্তানের স্ত্রী বা ক্ষেত্রমতে, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় ব্যক্তি ৫(২ক) মতে, পিতা-মাতা বা দাদা-দাদীর ভরণপোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করলে বা ৫(২খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানী ভরণপোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করলে তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করলে উপ-ধারা (১) এ উল্লেখিত দ-ে দ-িত হবে। ৬ ধারা মতে, এর অধীন অপরাধ আমলযোগ্য, জমিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য হবে। ৭(১) ধারায় এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ ১ম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারযোগ্য হবে। ৭(২) ধারা মতে, কোন আদালত এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত আমলে গ্রহণ করবে না। ৮(১) ধারায় আদালত এই আইনের অধীনে প্রাপ্ত অভিযোগ আপোষ নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার, কিংবা ক্ষেত্রমতে, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় মেয়র বা কাউন্সিলর, কিংবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করতে পারবে। ৮(২) উপ-ধারা (১)-এর অধীনে কোন অভিযোগ আপোষ নিষ্পত্তির জন্য প্রেরিত হলে, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার বা কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে, তা নিষ্পত্তি করে এবং এইরূপে নিষ্পত্তিকৃত অভিযোগ উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বলে গণ্য হবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিষয়টি পারিবারিক ও মানবিক ইস্যু। শুধুমাত্র আইন দিয়ে মা-বাবার প্রতি অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। এই জন্য প্রয়োজন উচ্চমাত্রার নৈতিকতা বোধ, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এবং তা যথাযথ পালন। প্রয়োজন পারিবারিক, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা। যারা মা-বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আমাদের নিজ নিজ মাতা-পিতা ও তাদের অবর্তমানে নিকটাত্মীয়দের প্রতি সম্ভব সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা, ভালোবাসা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সুন্দর পারিবারিক জীবন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখতে পারে। তাদের মাধ্যমে পরবর্তীতে আমাদের সন্তানরাও আমাদের প্রতি দায়িত্বশীল হবে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।