বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ’ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। নির্ধারিত কাজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে পুনরায় সরকার কাজের মেয়াদ বাড়ায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ কোম্পানির সাথে। কিন্তু সেই মেয়াদও অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি রেল মন্ত্রণালয় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চূড়ান্তভাবে চুক্তি বাতিলের সিন্ধান্ত নেয়। চুক্তি বাতিলের খবর পেয়ে পুনরায় নব-উদ্যমে কাজ শুরু করে ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ দীর্ঘ ৫২ কিলোমিটার রেললাইন পূর্নবাসন বাস্তবায়নের কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নির্ধারিত মেয়াদে পেরিয়ে গেলেও ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেনি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্প কাজের ধীর গতি, গাফিলতি আর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ বন্ধ রাখায় রেল মন্ত্রণালয় যখন চুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সংস্কার কাজে তৎপর হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ আমলে ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ রেলপথটি ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম একটি মাধ্যম।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবেন এই প্রকল্পটিতে। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই ডুয়েলগেজ লাইন হবে।
একই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়ে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ ২০১৮ সালের মে মাসে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজের ধীরগতি আর নানা গাফিলতিতে এসময়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ সম্পন্ন করে মাত্র ১৪-১৫ ভাগ। গত অক্টোবরে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয় মাস। রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়। তারপরেও তাদের টনক নড়েনি। এমতো অবস্থায় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকা অফিসে ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা ও ঠিকাদারের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর কাজ চলমান না থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি করোনার অজুহাতে নানান সমস্যা তুলে ধরে। এতকিছুর পরও কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি বাতিলের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, বারবার কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা গুরুত্বই দিচ্ছে না। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে।
ভারতীয় রেল নির্মাণ কোম্পানী ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ যোগাযোগ করা হলে কোম্পানীর চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজার জোবায়ের আহমদ জানান, কাজ বন্ধ ও চুক্তি বাতিলের খবর স্রেফ গোজব দাবি করে বলেন, করোনা প্রভাবে ৭ থেকে ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর চলিত বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৭০-৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শ্রমিক প্রজেক্টে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
কুলাউড়া রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুুয়েল হোসাইন জানান, ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ রেলপথের কাজে ধীরগতির কারণে শুনেছি রেল মন্ত্রনালয় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানীর সাথে চুক্তি বাতিলের আলোচনা চলছে। চুক্তি বাতিলের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে কাজ চলমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।