বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বর্তমান সময়ে একটি ট্রেন্ড সর্বত্র দেখা যায়। তা হলো, ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ মানসিকতা চর্চা করা। কোনো বিষয়কে অনুধাবন না করে, সঠিকভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়া এবং সমাজের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে লোভাতুর, উস্কানিমূলক, ভিত্তিহীন তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্ত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বর্তমান সময়ে ইউটিউবে তথাকথিত আলোচিত ইসলামিক স্কলারদের ইসলামের নানা বিষয়ের অপব্যাখ্যার কথা। কোনো কোনো তথাকথিত নামধারী ইসলামিক স্কলারগণকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি এই আমল করেন তো পরমুহূর্তেই আপনার ওই ফায়দা হাসিল হবে, অমুক জায়গায় দান করলেই আপনার মনের সকল মনোবাসনা পূর্ণ হবে, কিংবা এও বলতে শোনা যায় যে, এই আয়াতটি সকাল-বিকাল পাঠ করলে জান্নাত আপনার জন্য অপরিহার্য।’
অথচ খালেস ঈমান, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ, নেক আমল, তাসাউফ চর্চা, হার কিসিমের গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার অনুশীলন করা তথা নেক আমল করাই হচ্ছে জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। সেই সাথে সুদ, ঘুষ, অবৈধ যৌনাচার, ব্যভিচারসহ তামাম হারাম কাজ থেকে নিজেকে, নিজের মনকে বিরত রাখাও একজন মুমিন মুত্তাকির অন্যতম সিফাত। বর্তমানে ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললে দেখা যায়, তারা তাদের মুখের মধুমাখা কথার ফুলঝুরি ও চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ জনগণকে সর্টকাটে জান্নাতে যাওয়ার পথ বাতলে থাকেন। বিশেষ বিশেষ দোয়া দরূদের ফজিলতের কথা, আমলের কথা হাদীসে আছে বটে, তবে আগে ফরয, ওয়াজিব আদায় করে আমলের পরে। তা পরিহার করে নয়।
ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-দের জীবনী অধ্যায়ন করলে তাদের মুজাহাদার কথা জানা যায়। জানা যায়, তারা কতটা কষ্ট করে আল্লাহর বাণী যুগে যুগে প্রচার করেছেন। বিশ্বনবী হুজুরে আকরাম সা.-এর ত্যাগের কথা, মুজাহাদার কথা আমরা সকলেই জানি। আমরা জানি, কীভাবে তিনি তায়েফের ময়দানে রক্তাক্ত হয়ে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করেছেন।
পবিত্র কোরআন নাজিলের পূর্বে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ হেরা গুহার চূড়ায় উঠে মহান আল্লাহর দরবারে দিন-রাত কুফরের জুলমাতের অমানিশা থেকে উম্মতের নাজাত লাভের জন্য ধ্যানমগ্ন হয়ে ফরিয়াদ করেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সাহাবায়ে কেরামরা কতটা কষ্ট করে কাফিরদের সীমাহীন যন্ত্রণা, নির্যাতন, উপহাসকে সহ্য করে পরিপূর্ণ এখলাসের সাথে মহানবীর সা. নির্দেশনা মোতাবেক ইসলামের ঝাণ্ডাকে সমুন্নত করেছেন। যেই মহান ত্যাগের সুফল আজও গোটা মুসলিম উম্মাহ ভোগ করে যাচ্ছে। আর এভাবেই ভোগ করে যাবে ইয়াওমে ঝিলঝাল অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত। আমাদেরও তাদের অনুসরণ করতে হবে। বিজ্ঞানের কল্যাণকে, তথ্য প্রযুক্তিকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অবিশ্বাস, ফেতনাবাজি ও ধোঁকাবাজির বীজ বপন করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।