Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন রহস্যময় যোগী!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ পিএম

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (এসইবিআই) এর তদন্ত অনুসারে, হিমালয়ের পাহাড়ে বসবাসকারী একজন রহস্যময় যোগী বছরের পর বছর ধরে ভারতের ৪ হাজার কোটি ডলারের জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

তদন্ত অনুসারে, অজ্ঞাতনামা ওই যোগী এসইবিআই’র সাবেক প্রধান নির্বাহী চিত্রা রামকৃষ্ণকে ‘তার হাতের পুতুল’ হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। চাকরির নিয়োগ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং অনুমান, এমনকি কর্মচারীর কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন পর্যন্ত সবকিছুর বিষয়ে তাকে (নির্বাহীকে) নির্দেশনা দিতের সেই রহস্যময় যোগী।

তদন্তে যোগী এবং চিত্রা রামকৃষ্ণের মধ্যে গত ২০ বছর ধরে আদান-প্রদান করা ইমেলগুলি প্রকাশিত হয়েছে। চিত্রা জানিয়েলেন যে, তিনি প্রথম গঙ্গা নদীর তীরে আধ্যাত্মিক গুরুর সাথে দেখা করেছিলেন এবং তখন থেকেই ‘অনেক ব্যক্তিগত এবং পেশাগত বিষয়ে’ তার পরামর্শ নিয়ে আসছেন।

চিত্রা রামকৃষ্ণকে অবশেষে স্টক এক্সচেঞ্জে তার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল একটি অব্যবস্থাপনা কেলেঙ্কারিতে যার মধ্যে তিনি গুরুর পরামর্শে একটি নির্বাহী নিয়োগ করেছিলেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারী, এসইবিআই রামকৃষ্ণকে ‘স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যকারিতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার সিদ্ধান্তগুলি সেই অজানা ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার’ জন্য শাস্তি দিয়েছে, যার পরিচয় তার তদন্তকারীরা নিশ্চিত করতে অক্ষম।

রামকৃষ্ণ এসইবিআই’কে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, তার আধ্যাত্মিক গাইড এখন বেশিরভাগ সময় হিমালয়ে বসবাস করছেন, কিন্তু তিনি তার সাথে ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন, যেহেতু ‘তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার জন্য তাদের কোন শারীরিক সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় না’।এ ঘটনায় সাবেক প্রধান নির্বাহী এবং অন্যান্য চারজন স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তাকে মোট ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে এবং তিন বছরের জন্য কোনো বাজার পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার ব্যপারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সহকর্মীর পদোন্নতির বিষয়ে যোগীর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে: মিসেস রামকৃষ্ণ ২০০৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত হন এবং ২০১৩ সালে প্রধান নির্বাহী পদে উন্নীত হন। সেই বছর, তিনি আনন্দ সুব্রামানিয়ানকে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে এক্সচেঞ্জের প্রধান অপারেটিং অফিসার হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন, যিনি সেই সময়ে শিল্পে খুব কম পরিচিত ছিলেন। তার বার্ষিক বেতন ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ডলার। তবে তিনি দাবি করেছেন, শেষবার তিনি মাত্র ২০ হাজার ডলার বেতন নিয়েছেন। যোগীর নির্দেশ অনুসারে পরের দুই বছরে তার বেতন বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার ডলার।

তদন্তে ২০১৫ সালের ইমেলগুলোও প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে রামকৃষ্ণ যোগীর কাছ থেকে সুব্রামানিয়ানের পদোন্নতি এবং তার কাছে কিছু দায়িত্ব কীভাবে হস্তান্তর করবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছিলেন। ‘আমি সামনের পথ চলার জন্য এ বিষয়ে আপনার দিকনির্দেশনা চাই প্রভু, যদি এটি আপনার অনুমোদনের সাথে মিলিত হয় মহামান্য,’ রামকৃষ্ণ লিখেছেন।

যাইহোক, ২০১৫ থেকে ২০১৬ এর মধ্যে, এসইবিআই রামকৃষ্ণের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার একাধিক অভিযোগ পেয়েছিল। সুব্রামানিয়ানের নিয়োগে একটি ব্যবসায়িক কেলেঙ্কারি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য তাকে শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। তিনি তার প্রস্থানের সময় বকেয়া এবং বেতন হিসাবে ৫৮ লাখ ডলার পেয়েছেন।

এসইবিআই’র তদন্তে বলা হয়েছে যে, রামকৃষ্ণ তার দায়িত্ব পালনে গোপনীয়তা, ব্যক্তিগত সততা এবং সতন্ত্রতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তিনি জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী হিসাবে তার দায়িত্বের প্রতি অসম্মানজনক কাজ করেছেন। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন যে, যোগীর সাথে তার সম্পর্ক ছিল ‘আধ্যাত্মিক প্রকৃতির’ এবং তার সাথে মত বিনিময় করে তিনি সততার সাথে আপস করেননি। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ