বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দ্বীনি দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে ও কম কষ্টে বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনযাপনকে করেছে সহজ ও সাবলীল।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজনে ও রাত-দিনের পালাক্রমে আগমন ও প্রস্থানে বহু নিদর্শন আছে ঐসব বুদ্ধিমানের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি অনর্থক কাজ থেকে পবিত্র’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৯০-১৯১)।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন আসমান-যমীন, আগুন, পানি, মাটি, বাতাস ইত্যাদি ছাড়াও অগণিত মাখলূক। দুনিয়াতে যা কিছু আমরা মানুষের আবিষ্কার বলে মনে করি সেগুলো মূলত: আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। কারণ, তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। তিনি ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই । তিনিই কালের স্রষ্টা, হালেরও স্রষ্টা । সব যুগেই তামাম নবাবিষ্কারও তাঁরই সৃষ্টির সহায়তায় সৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘ তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ’ ( সূরা বাক্বারাহ : ২৯) ।
অণু-পরমাণু থেকে মহাজগতের যেখানে যা কিছু রয়েছে সবইতো আল্লাহরই সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্ট উপাদানের গুণাগুণ, রহস্য অবগত হয়ে তা যথাযথ ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন বস্তু তৈরি করে। সে স্রষ্টা নয়, আবিষ্কারক। সুতরাং এ যাবত বিশ্বে যত সব আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যা কিছু হয়েছে এবং আরো যা কিছু হবে তা আল্লাহরই সৃষ্ট উপাদান দিয়েই হয়েছে এবং হবে।
ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। তবে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, ইসলাম চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সঠিক ব্যবহার ও এর সুফল আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির এই নেয়ামতগুলো আজ আযাবে পরিণত হচ্ছে। এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। মুহূর্তে এক দেশের খবর চলে যায় অন্য দেশে। হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থানরত মানুষের সাথে কথা বলা যায় অনায়াসে। পৃথিবীর এই তাবৎ আবিষ্কার, প্রযুক্তির এই সব উন্নয়ন যদি কল্যাণের কাজে ব্যবহৃত হয় তবে তা মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত হিসেবে গণ্য হবে। আর এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর ’ ( সূরা ইব্রাহীম : ৭ ) ।
শুকরিয়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো, আল্লাহর নেয়ামতকে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। এমন কোনো প্রযুক্তিপণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নেই, যেটা ইসলামের খেদমতে ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রতিটি জিনিসকে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার মন্দ কাজেও। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয়। ব্যবহারকারীই মূলত দায়ী ।
আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগের অন্যতম সহজলভ্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো মোবাইল। কিন্তু এই মোবাইলের মাধ্যমে এখন কথা বলার চেয়ে অপসংস্কৃতির প্রচার, ইসলামের অপব্যাখ্যা, নগ্নতাকে উসকে দেয়া, ব্ল্যাকমেইলিং, অশ্লীল কার্যকলাপ যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টেলিগ্রামসহ আরোও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে নারী-পুরুষের অবৈধ যোগাযোগ, নারী-পুরুষের অর্ধনগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, যা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে। এছাড়াও ইন্টারনেট প্রযুক্তি, রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া তথা পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ক্রোড়পত্র প্রভৃতির অপব্যবহার সমাজে ফাহেশা কার্যকলাপ ছড়ানোর পিছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। অথচ অশ্লীলতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন : ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ ( সূরা নূর : ১৯) ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।