Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বদলে যাবে পূর্বাচল

দৃষ্টিনন্দন ১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে : এগিয়ে চলেছে ৩০০ ফুট সড়কের নির্মাণ কাজ

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১, ২ ও ৩ নং সেক্টর হয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান। এটি ৩০০ ফুট চওড়া হওয়ার এর নাম ও পরিচয় মিলেছে ৩০০ ফুট নামে। যা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের অন্যতম। তবে এই প্রকল্প ব্যয়ও আকাশচুম্বী। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমান বন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বে ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ককে বলা হচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও। তাই এ সড়কের নির্মাণ শেষে বদলে যাবে পূর্বাচলের চিত্র। আর দেশের উন্নয়নের মাইল ফলকে যোগ হবে একখন্ড চিহ্ন।

সূত্র জানায়, ৩০০ ফুট চওড়ায় ৮ লেন সড়কের এই দৃষ্টিনন্দন রাস্তাটির দুই পাশেই থাকবে পরিবেশ ও পর্যটনবান্ধব স্থাপনা। মেগা প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে, ১৪ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এতে সাড়ে ৪ হাজার কর্মীর দিন রাতের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনি পরিচালিত বিশ্বাস বিল্ডার্সের বাস্তবায়নে এ ৮ লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ৬লেনের সার্ভিসওয়ে এবং দুই পাশে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরণের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে একটি গাড়ি ৬ থেকে ৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কে পরিবর্তন। গত জানুয়ারীতে পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে প্রথমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে সড়কটি চলমান করতে দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করেন এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। যা বিগত সময়ে নির্মাণ জটিলতায় বিনোদন, ভ্রমণের কেন্দ্রস্থলে রূপ নেয়া ৩০০ ফুট সড়ক এখন কোথাও কোথাও এবড়োথেবড়ো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সাধারণ সড়কের কার্পেটিং কাজ শেষ প্রায়। ৮লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে করা হচ্ছে ১০০ ফুট দৃষ্টিনন্দন খাল এবং পাশ দিয়েই রাস্তা। আর রাস্তায় নির্মাণ কাজ করতে দেখা গেছে, ভারী সব যন্ত্রপাতি বড়বড় ক্রেন, লিফটার, ট্রাক ড্রেজার। যার মাধ্যমে ব্রিজ-কালভার্ট, আন্ডারপাস, ওভারপাসে এই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হচ্ছে। এ সড়কের নির্মাণ কাজে কর্মরত বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রকৌশলী সহিদুল আলম বলেন, করোনার মহামারি কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এমনকি গত মাসে শেষ হওয়া বাণিজ্য মেলা কোনো কিছুতেই থেমে ছিল না সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিকের নির্মাণযজ্ঞ। পুরো সড়ক জুড়ে নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। দিনরাত নির্মাণ শ্রমিকরা এই এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় পূর্বাচলের বাসিন্দা ইমন হাসান খোকন বলেন, আমরা অপেক্ষায় রয়েছি এতবড় প্রকল্পের রূপ দেখার জন্য। দেশের উন্নয়নের চিত্রের অন্যতম এটি। যা ইতোপূর্বে দেশের কোথাও তৈরী হয়নি। এমনকি এশিয়া মহাদেশে এমন সড়ক বিরল ।


পূর্বাচলের বাসিন্দা রূপগঞ্জ ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, এশিয়া মহাদেশের অন্যতম সড়ক হচ্ছে আমাদের এলাকায়। আমরা গর্বিত। পাশাপাশি এ সড়ক বাস্তবায়ন আরো দ্রুততার সঙ্গে এগুনোর দাবি জানাই।
নির্মাণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এছাড়া এই এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণ করা হচ্ছে ১০টি বড় সেতু। হাতিরঝিলের আদলে ১৩টি আর্চ ব্রিজ। বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে ৪ কিলোমিটার নালা, দু’টি কালভার্ট, ১২টি ওয়াটার বাসস্ট্যান্ড ও ৪টি পাতাল পথ। শুধু তাই নয়, দুই পাশের খালে চলবে ওয়াটার বাস যা মূলত পর্যটকদের জন্যই চালু করা হবে। খালের দুই পাশে তৈরি করা হবে সবুজ ওয়াকওয়ে। আর এখানেই এক সঙ্গে ৪০ হাজারের বেশি পর্যটক প্রকল্পের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন একসঙ্গে।

প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, এটা হবে হাতিরঝিলের চেয়েও আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন। বর্তমানে কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যে কয়েকটি সেতু রয়েছে, প্রত্যেকটির পাশেই নতুন সম্প্রসারিত সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তার প্রশস্ততা ঠিক রাখতে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও এর দক্ষ শ্রমিকরা এই এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন। পুরো রাস্তায় চলছে কাজ। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজ শেষ করব। এখন প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ । তবে ব্রিজ কালভার্ট ও নকশা বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে আরও তিনটি খাল, সড়ক, সেতুসহ আনুষঙ্গিক বিষয় যুক্ত হওয়ায় সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেটা আরও কয়েক দফা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকায়। এ প্রকল্পে মূলত রাজধানীর পশ্চিম-পূর্ব যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি পশ্চিমের জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে তিনটি খাল যুক্ত করা হয়েছে। খাল তিনটি হয়ে গেলে নিকুঞ্জ-১, নিকুঞ্জ-২, জোয়ারসাহারা, সেনানিবাস, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কালাচাঁদপুর, কাওলা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আর জলাবদ্ধ হবে না। প্রকল্পটিতে সেনাবাহিনীর নিজস্ব জনবল ও প্রযুক্তির পাশাপাশি আউট সোর্সিং করা হয়েছে বেসরকারি কয়েকটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।



 

Show all comments
  • Khocon Purbachal ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 1
    দেখলে মনে হয় আমেরিকা । আসলে কিছুই হয় নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Tamim Dari ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 0
    আমাদের ভবিষ্যৎ ও এর মধ্যে
    Total Reply(0) Reply
  • Kawsar Hossain ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 0
    Hmm hoche very good work
    Total Reply(0) Reply
  • Tofail Ahmed ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:১২ এএম says : 0
    আমরা আশা করি,এমন উন্নয়ন যেন অভ্যাহত থাকে।বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • MA MU N ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:১২ এএম says : 0
    কবে হবে আধুনিক রাজধানী তার সময় কি নির্ধারণ করা হয়েছে কত বছর লাগবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shawkat Akbar ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২৯ পিএম says : 0
    At same time rajuk should start Thana bhabon,office, school, University and other infrastructures immediately and ensure security measures so that plot owners can start construction.Rajuk can follow Jolshiri atmosphere.
    Total Reply(0) Reply
  • Mejbah Uddin ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৪ পিএম says : 0
    পূর্বাচল নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিউজ দেখলে মনে হবে যে গ্লাসটি খালি, কারণ ওর অর্ধেকটাই খালি। আর এ নিউজটি দেখে মনে হল যে গ্লাসটি ভরা, কারণ এর অর্ধেকটা ভরা। দিন কয়েক আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন তার চোখ দিয়ে পূর্বাচলে শুধু কুয়াশার অন্ধকার আর হতাশার কালোমেঘ দেখতে পেয়েছে। কারণ সেরকম দেখলে এবং পূর্বাচল নিয়ে আশাবাদীদের হতাশায় ডোবাতে পারলে বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সংশ্লিষ্টদের আয় বাড়ে। তাদের আয় বাড়াতে হবে। পূর্বাচলের আগের জায়গা জমি ফাঁকা রেখে আপনি পূর্বাচলে বাড়ি করবেন, লাইট জ্বালাবেন, গাড়ি চালাবেন - তা কি করে হয়? সেখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন গংরা কোন দুঃখে পূর্বাচলের মালিকদেরকে রঙ্গিন ভবিষ্যৎ দেখাতে যাবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পূর্বাচল

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৮ অক্টোবর, ২০২১
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ