Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিগগিরই শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি দেখা যাবে

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বলেছেন, জোর করে নয়, বরং বুঝিয়ে ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি। যার ফলশ্রুতিতে শিগগিরই শেয়ারবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি দেখা যাবে।

গতকাল বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকম’র উদ্যোগে ‘শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ (এফসিএমএ)। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত (এফসিএ) এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক ও প্রকাশক আমিরুল ইসলাম নয়ন।

শিগগির পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আসবে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তিনটা ভালো কোম্পানি আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নেক্সট কোয়াটার থেকেই আপনারা দেখতে শুরু করবেন যাদেরকে আপনারা চাচ্ছেন, তারা আস্তে আস্তে আসতে শুরু করেছে। ভালো সুস্থ্য একটা পরিবেশ যখন পাওয়া যাবে, তখন অন্যরাও উৎসাহিত হবে। চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিকমত জমা দিলে আমরা ভালো কোম্পানির আইপিও সাতদিন থেকে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়ে দেব। অনেকগুলো কোম্পানির আইপিও আমরা দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছি।

বিএসইসি’র চেয়্যারম্যান বলেন, ৫০ বছর আগে যদি আমার এসএমই খাতকে গুরুত্ব দিতাম, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো মিডিয়াম থেকে লার্জ হতো। এখন আমরা এসএমই’র জন্য আলাদা একটা প্লাটফর্ম করে দিয়েছি। এখানে লিস্টিং হওয়ার মাধ্যমে তারা করপোরেট আচার-আচারন শিখতে পারছে। পরবর্তীতে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে এখান থেকেই মূল মার্কেটে আসতে পারবে। আমরা এখনই তাদেরকে এই সুযোগটা দিচ্ছি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে দুই শতাংশ এবং সম্মেলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ ও ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে আমরা অটল। এটা ঠিক রাখতেই হবে। আপনি একটি কোম্পানির পরিচালক হবেন, কোম্পানি চালাবেন। কিন্তু দুই শতাংশ শেয়ার রাখবেন না, এটা কেমন কথা। তাহলে আপনার ইন্টারেস্ট কি? খালি বেতন-ভাতা নেয়া, সুবিধা নেয়া। আপনার যদি সেটার পার্ট না হন, তাহলে অন্যদের স্বার্থ রক্ষা করবেন কিভাবে? দুই শতাংশ শেয়ার ধারন, সেটা করতেই হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের বিষয়টি অনেকে সঠিক নয় বলছে। কিন্তু আমরা এটিতে একমত না। ৩০ শতাংশ থাকতেই হবে, না থাকলে ৭০ শতাংশ যারা আছে তারা তো জড়িত না। তাদের স্বার্থ রক্ষা কিভাবে হবে? আমাদের সবার স্বার্থ দেখতে হবে। একদিক দেখলে তো হয় না।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের বয়স ৬০ বছর হয়ে গেছে। এই ৬০ বছরে কিছু হয়নি কেন? ৬০ বছরে আমরা মানুষের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করে পারিনি কেন? তাই হঠাৎ করে অনেক কিছু চেঞ্জ করতে গিয়ে আমাদের আনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা খুবই সহজভাবে নিয়েছি এবং ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি।
এ সময় ব্যাংক খাতের ঋণ পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দেশের নন পারফরর্মিং লোন কেন এতো? লোন প্রভিশনিং সিস্টেম যদি ব্যাংকিং সিস্টেমে না রাখতাম বা লোন প্রভিশনিং যদি বলতাম একবারের বেশি করা যাবে না, আজকে বাংলাদেশে কতোগুলো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেত? সেদিন একটা ব্যাংকের দেখলাম ৫০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্লাসিফাইড। যদি সত্যিই রিসিডিউল করার সুযোগ না থাকতো, তাহলে আরও কতোগুলো ব্যাংকের এ অবস্থা হতো।

তিনি বলেন, ক্লাসিফিকেশন লোন আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সঠিক না। ব্যবসা করতে সবাই তো আর নিয়ত খারাপ করে আসে না। ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি আছে। কিন্তু সে আর পারে না। তখন সে নিজেও বিপদে পড়ে, ব্যাংককেও বিপদে ফেলে। আলটিমেটলি ক্লাসিফিকেশন লোনের কারণে তার জেল, জরিমানা, ব্যবসা বন্ধ, সবাইকে নিয়ে সমস্যায় পড়া এগুলোই হচ্ছে।
বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত ব্যাংকে সারপ্লাস অর্থ থাকবে বা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়ার মতো অবস্থায় থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ভালো কোম্পানি ফান্ড সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার আর ব্যাংকিং সেক্টর এর মাঝে ব্যাংকিং সেক্টর ছেড়ে কোম্পানিগুলো কেন পুঁজিবাজারে আসবে। ব্যাংকিং সেক্টরে এখন পর্যন্ত ফাইন্যান্সিং খুব সহজ। ভালো কোম্পানিকে লোন দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোই মুখিয়ে আছে। আবার ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডও কম। তাহলে কি কারণে পুঁজিবাজারের এই দীর্ঘ সূত্রীতায় এবং নানা রকম জটিলতার মধ্য দিয়ে আসবে। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত ব্যাংকে সাফিসিয়েন্ট লিকুইট থাকবে, লংটার্ম ফাইন্যান্স করার মতো অবস্থা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ভালো কোম্পানি ফান্ড সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না।

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ বলেন, গত ১০ বছর দেশের অর্থনীতি ৬ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে ও নিয়মিত মাথাপিছু আয় বেড়েছে। যাতে করে আমাদের জিডিপি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। এই উন্নতির মধ্যেও আমরা শেয়ারবাজারে পিছিয়ে রয়েছি। এর পেছনে শেয়ারবাজারে আসার থেকে না আসা কোম্পানির প্রকৃত অর্থে রাজস্ব সুবিধা বেশি হওয়া অন্যতম কারন হিসাবে রয়েছে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করতে হবে।
বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান বলেছেন, আমরা যদি ভালো কোম্পানিগুলো আনতে চাই, তাহলে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান বাড়াতে হবে। কিন্তু ২ বছর আগে উল্টো কর হার ব্যবধান কমানো হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের একটি সেক্টর নাই, যেখানে বিশেষ সুবিধা দেয়া ছাড়া ওই সেক্টর উন্নতি লাভ করেছে। পুঁজিবাজারের বয়স ৬৪ বছর আমি এই সেক্টরে যুক্ত আছি ৩০ বছর। কিন্তু এখানে যে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে তা কিন্তু নয়। বিএমবিএ সভাপতি বলেন, ২০১১ সাল থেকে পুঁজিবাজার অবস্থা দেখি, তাহলে দেখবো ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক ছিলো। তবে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরে কিছুটা ঘুরে দাড়িঁয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ