গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে তৈরি করেছিলেন প্রতারণার সাম্রাজ্য। ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে মধ্যবয়সী মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসাতেন স্ত্রী। এরপর সেই ব্যক্তিকে বাসায় এনে আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে ব্লাকমেইল করতেন স্বামী ও তার দুই সহযোগী। এই স্ত্রীর নাম নাসিমা বেগম। তার স্বামীর নাম টুটুল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুগদা ও বাড্ডা থানা এলাকা অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার বাকিরা হলো- মো. মোশারফ হোসেন শুভ ও আবজল মিয়া।
পুলিশ জানায়, ২০১৮ সাল থেকে তারা এমন প্রতারণায় জড়িত। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস টুটুল-নাসিমা দম্পতির। নাসিমা ফেসবুকে আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের। এরপর সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেসেঞ্জারে আলাপের পর ভিডিও কলে কথা বলতেন নাসিমা। এরপর প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনতেন। নিজের বেডরুমে নিয়ে জড়াতেন আপত্তিকর অবস্থায়।
তখনই পরিকল্পনামাফিক হাজির হতেন তার স্বামী টুটুল ও আরও কয়েকজন যুবক। নিজেদের পরিচয় দিতেন পুলিশ বা সাংবাদিক হিসেবে। ধারণ করে রাখা হতো ভিডিও। এরপর বø্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
বø্যাকমেইল করার কৌশল বর্ণনা করে টুটুল পুলিশকে জানান, নিয়ে আসার পর আমরা তাকে বলতাম, এটা কি আপনি ভালো কাজ করেছেন নাকি খারাপ? আপনার বাসা কোথায়। তখন তিনি বলতেন, খারাপ কাজ হয়েছে। অন্যায় হয়েছে। তিনি স্বীকার করে আমাদের কাছে মাফ চাইতেন। আমরা বলতাম, আপনি যে এই খারাপ কাজ করতে আসছেন, আপনার বাসায় এটা আমরা বলে দেব। এরপর তিনি বলতেন, আমার মানইজ্জত নষ্ট না করতে কিছু টাকা দিত এবং আমরা এটা নিতাম।
সম্প্রতি এভাবেই ব্লাকমেইলের শিকার হন নৌবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা। তাকে দিতে হয় ৫ লাখ টাকার বেশি। ভুক্তভোগী বলেন, তারা আমাকে বলে ১০ লাখ টাকা দিতে পারলে আমাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা না করলে মিডিয়া আসবে, এলাকার লোকজন আসবে; বিশ্রি একটা অবস্থা হবে। পুলিশ জানায়, এ চক্রের মূল টার্গেট মধ্যবয়সী পুরুষরা। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা ফাঁসিয়েছেন বহু মানুষকে।
গুলশান গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, আসামিরা সমাজের বিত্ত্বশালীদের টার্গেট করে বিভিন্ন উঠতি বয়সীর মেয়েদের দিয়ে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে রুম ডেটের অফার করে বাসায় নিয়ে আসে। তারপর ৪/৫ জনের একটি চক্র তাদেরকে অসামাজিক কার্যে লিপ্ত করার জন্য বাধ্য করে এবং মোবাইলে তার ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে আসামিরা ওই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে মারধর করে এবং তাদের নিকট থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড এবং কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। এছাড়াও ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। ভিকটিম আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের সকল দাবি মানতে বাধ্য হয়। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ সংক্রান্তে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আসামিরা এই কুকর্মের জন্য স্ত্রী-বোনদের ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরাও পরিবার পরিজন রেখে একটা বাড়তি প্লেজারের জন্য অন্যদের খুঁজে বেড়ান। আমরা অনুরোধ জানাব, ফেসবুকে, মেসেঞ্জারে দুই দিনের প্রেমে পড়ে দুই দিনের পরিচয়ে প্লেজারের অনুসন্ধানে যেতে গেলে একটা পর্যায়ে আপনাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে হবে। মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই এই চক্রগুলো প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।